সাতক্ষীরায় জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের কেনাকাটা

প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৪

বর্তমান খবর,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন দোকানগুলো ইতোমধ্যে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ছিট কাপড় ও তৈরি পোশাকের দোকানে সন্ধ্যার পরপরই ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে। ছিট কাপড়ের দোকানে পছন্দের পোশাক তৈরির জন্য দর্জিদের কাছে ভিড় করছে তরুণীরা।

ব্যতিক্রম নেই জুতার দোকানগুলোতেও। গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় নি¤œবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। অবশ্য নি¤œবিত্তদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে ফুটপাতে বেশ কিছু পোশাকের দোকান দিয়েছে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। বাজারের ভেতরের চেয়ে এসব মার্কেটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। দোকানিদের দম ফেলার ফুসরত নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম প্রতিটি জামা-কাপড়ের দোকান। সাধারণ সময়ের চেয়ে দেড়গুণ দাম বেশি রাখছেন দোকানিরা।

সরেজমিনে মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের থানা মসজিদ থেকে বড় বাজার অব্দি রাস্তার দুধারের মার্কেট গুলোয়,পাকাপুল থেকে আমিনিয়া মার্কেট, সঙ্গীতা মোড় থেকে খুলনা রোড পর্যন্ত এছাড়াও শপিং সেন্টার গুলোসহ শহরের বিপণিবিতান, জুতার শোরুম ঘুরে ক্রেতাদের উপছে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেতারা দর-কষাকষি করে ঈদের কেনাকাটা করছেন। এসব বিপণি বিতান, শপিং সেন্টারের মালিক ও ব্যবসায় সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম রোজার পর থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষজন বিপণিবিতান গুলোতে জড়ো হচ্ছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলছে। এতে করে পুরোপুরি জমে উঠেছে ঈদের বাজার। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলে বেচাকেনার চাপ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে জানান তারা।

মার্কেট গুলো ঘুরে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিছ, শাড়িতে মানুষের আগ্রহ বেশি। যদিও দাম নিয়ে ছিল ক্রেতাদের অভিযোগ। তুলনামূলক দাম একটু বেশি বলে জানান তাঁরা। এবারের ঈদে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিছ, শাড়ির পাশাপাশি তরুণীদের মধ্যে কাতুয়া ও সেমি লং পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয় পোশাকের চাহিদা রয়েছে যথেষ্ঠ। তবে বেচাকেনা নিয়ে দোকানিদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন বেচাকেনা ভালো, কেউ কেউ বলছেন ভালো না। তবে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো বলেই জানিয়েছেন অধিকাংশ বিক্রেতা। সবচেয়ে বেশি ভিড় পড়ে মেয়েদের ও ছোট শিশুদের জামাকাপড়ের দোকানে। দিন যত যাচ্ছে, বিক্রির পরিমাণ ততই বাড়ছে বলে জানান শহরের প্রতিটি দোকানের স্বত্বাধিকারীরা, তারা বলেন, প্রতিবারই ঈদের কেনাকাটা শবে বরাতের পর থেকে শুরু হয়ে যায়। এবার একটু দেরি করে হয়েছে। পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা দেখে, শুনে সময় নিয়ে কেনাকাটা করছেন। সাধারণ সময় আমাদের দোকানে বিক্রর চেয়ে অনেক গুন বিক্রি বেড়ে গেছে। ঈদ যত কাছাকাছি আসবে বেচা-কেনার পরিমাণ আরও বাড়বে।

শহরের নাম করা কয়েকটি বিপণিবিতানের একটি ফাল্গুনী বস্ত্রালয়। এখান থেকে নিয়মিত জামা, গজ কাপড় কেনেন শিক্ষীকা ফারজানা সুলতানা। ফারজানা সুলতানা বলেন, দুই মাস আগে যে গজ কাপড় ১৫০টাকায় কিনেছি, সেগুলোর দাম ২০০ টাকা ফিক্সড দাম চাচ্ছে। গত মাসে পাকিস্তানের যে সব থ্রি-পিছ ২ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছিলাম সেগুলো এখন ৪ হাজার টাকার কম বিক্রি করতে চাচ্ছে না। শহরের প্রতিটি দোকানে একই চিত্র। এমন দাম হলে মানুষ কীভাবে ঈদের কেনাকাটা করবে। পোশাকের দাম সত্যি এতটা বেশি না, সিন্ডিকেট করে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে কিনা কে জানে। পোশাক কেনা শেষে সবাই ঢু মারছেন জুতা ও কসমেটিকসের দোকান এবং শোরুমে। জুতা পছন্দের ক্ষেত্রে বাটা, অ্যাপেক্স, লোটো, নিপুন, সম্রাট, লির্বাটি, ময়মনসিংহ রয়েছে শীর্ষে। বাটা শোরুমের একজন বিক্রয় কর্মী বলেন, নারী ক্রেতারা তাঁদের পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে স্যান্ডেল, সু, নাগরা, পেনসিল হিল ও ¯িøপার কিনছেন। ছেলেরা পাঞ্জাবি, প্যান্ট ও টি-শার্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যাজুয়াল ও ফ্ল্যাট জুতা নিচ্ছেন।

এখানেও দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের রয়েছে আক্ষেপ অভিযোগ। জোতার দোকানে গতবারের তুলনায় এবার বেচা-কেনার পরিমাণ কম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। তিন মাস আগে যে জুতা ৫০০-৭০০ টাকায় পাইকারি কিনেছি, সেগুলো ঈদ উপলক্ষে ৮০০-১০০০ হাজার টাকায় কিনেছি। এতে বাধ্য হয়ে আমাদেরও বেশি দামে জুতা বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা দোকানে ডোকেন। দাম বেশি হওয়ায় দরদাম করে চলে যান। তবে আশা করছি, ঈদের আগে বেচা-কেনার পরিমাণ অনেক ভালো হবে।

পোশাকের রং ও ধরনের সঙ্গে মিল রেখে তরুণী ও নারীরা কিনছেন বিভিন্ন গয়না, গলার সেট, হাতঘড়ি, পায়েল, ব্রেসলেট, মাথার টিকলি, সানগøাস ও বাহারি রঙের চুড়ি। সাতক্ষীরা সিটি মার্কেটের সতরুপার সত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশী পোশাকের পাশাপাশি পাকিস্থানী ও ভারতীয় পোশাক টুপিচ ও থ্রিপিচ বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার ঈদে সারারা, অর্গেনজা, গারারা ও নায়রা থ্রিপিচের চাহিদা বেশি। এসব থ্রিপিচ সর্বনিম্ন ৫৫০ টাকা থেকে সর্বচ্চ্য ৪৫০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শহরের ঐতিহ্যবাহী নামকরা ছেলেদের পোশাকের মার্কেট হল আমিনিয়া মার্কেট। এই মার্কেটের যুবকদের পছন্দের দোকান সেল পয়েন্ট এবং লিজা এন্টারপ্রাইজ। আমি কথা বলেছিলাম এই দুই দোকানের দোকান মালিক কবির হোসেন এবং শিহাব খসরুর সাথে, তারা বলেন, এ বছর জিন্স প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট এমনকি গ্যাবাডিং প্যান্টের দাম তুলনা মূলক বেশি হওয়ার পরেও কাস্টমারের অভাব নাই,দূর-দুরন্ত থেকে মানুষ আসছে তাদের পছন্দের পোশাক কিনতে। বিশেষ করে এবার ক্রেতারা দেশীয় পন্যের উপর বেশি ঝুকে পড়েছেন, যেমন: পাঞ্জাবি, কাতুয়া এবং সেমি লং পাঞ্জাবির উপর।

আমিনিয়া মার্কেট সমিতির সভাপতি সাদরিলউল্লাহ মিনি বলেন, করোনাকালীন সময় বাদ দিয়ে ঈদে বিপণিবিতানগুলোতে বিক্রির পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম। এ বছর রমজানের শুরু থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এবারের বেচা-কেনা খুবই কম,মানুষের কাছে টাকা নাই। আশা করছি ঈদের আগে বেচা-কেনার পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং এবার ঈদে শুধু শহরের দোকানগুলোতে বিক্রির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকার বেশি ছাড়িয়ে যাবে। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে সব পণ্যের দাম অনেক চড়া। কোনো দোকানদার যেন ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য না নেয় সেজন্য সব ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।