সাগরদাঁড়িতে অবস্থিত মধুসূদন মিউজিয়াম বিনা পারিশ্রমিকে ৩২ বছর ধরে দেখভাল করেন শামসুর

প্রকাশিত: ৪:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪

বর্তমান খবর,কেশবপুর(যশোর)প্রতিনিধি: একজন আলোকিত মানুষ শামসুর রহমান। সত্যিকারের আলোকিত মানুষ মানেই নিবেদিত মানুষ,একজন নিঃস্বার্থ মানুষ। আলোকিত মানুষেরাই সমাজকে আলোকিত করেন এবং ভবিষ্যতে সমাজে আলো ছড়ানোর পথ দেখিয়ে যায়। তেমনি বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সাগরদাঁড়িতে অবস্থিত মধুসূদন মিউজিয়ামে নিষ্ঠার সাখে দেখভালের দায়িত্ব পালন করে আসছেন শামসুর রহমান (৬১)।

এই সমাজে কিছু আলোকিত ও সাদা মনের মানুষ আছেন,যারা নিজেদের দুঃখ-কষ্ট,হাসি-কান্না লুকিয়ে সমাজের ও মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের অনেকের খবর আমরা রাখি না। তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব শামসুর রহমান। যিনি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে অবস্থিত মধুসূদন একাডেমির মধুসূদন স্মৃতি সংগ্রহশালায় আলো জালিয়ে আলোকিত করে রেখেছেন তিনি। রোদ, ঝড় ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এ মানুষটি।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে মধুসূদনের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। যেখানে রয়েছে মধুকবির ছবিসহ তার দুই স্ত্রী, কবির বংশধরদের ছবিসহ তথ্য, লন্ডনের গের্জিনে ভর্তির আবেদনপত্র ও টাকা জমা দেওয়ার রশিদ, ১২০ বছর আগের কবির বাড়ির ছবি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে লেখা কবির চিঠি, তার শিক্ষকদের ছবিসহ তথ্য, বিভিন্ন লেখকের কবিকে নিয়ে লেখা বই, হিন্দু কলেজ ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের ছবি; যেখানে কবি পড়াশুনা করতেন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীর রুদ্য শাতিয়ে নামে রাস্তার বাড়ি এ বাড়িতে মধুসূদন দত্ত ১৯৬৩ সালে থাকতেন তার ছবি। স্মৃতিফলক, পুরুলিয়া গীর্জায় মধুসূদনের নামসংক্রান্ত তালিকাসহ অসংখ্য তথ্যে সমৃদ্ধ মধুসূদন মিউজিয়াম। নানা রকম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৩০ বছর সততার সাথে কাজ করে চলেছেন শামসুর রহমান।

উপজেলা সম্মিলিত সাংসাকৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, মধুপ্রেমী শামসুর রহমান যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিনা পারিশ্রমিকে মধুপ্রেমীদের নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, যা আক্ষরিক অর্থে সত্যিই প্রশাংসার দাবি রাখে। কেশবপুর চারপীঠ আর্ট স্কুলের সভাপতি ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মদন সাহা অপু বলেন, সমাজের জন্য শামসুর রহমানের এই অবদান কোনো মাপকাঠিতে মাপা যাবে না। তিনি তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানীর ব্যবস্থা করার জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিশিষ্ট সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চারুপীট আর্ট স্কুলের পরিচালক উৎপল দে, বলেন, গতবার জেলা পরিষদ থেকে তাকে অর্থনৈতিক সহায়ৎা দেয়া হয়েছিল, এবং তাকে মধু মেলার আয়োজন থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

মধুসূদন মিউজিয়ামের দায়িত্বরত শামসুর রহমান বলেন, আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। তিনি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমার মৃত্যুর পর এটি দেখবে কে ? সেই ভাবনাতেই মন অস্থির থাকে। তিনি এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন। যাতে করে প্রতিষ্ঠানটি মধুপ্রেমীদের মাঝে বেঁচে থাকে।

মধুসূদন মিউজিয়ামের সভাপতি কবি ও মধু গবেষক খসরু পারভেজ বলেন, মিউজিয়ামের দায়িত্বরত শামসুর রহমান বিনা বেতনে ৩০ বছর কাজ করছেন। তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ণাঙ্গ গবেষণা মিউজিয়ামের দাবি জানান।