সদরপুরে রমজানে বাঙ্গি-লালমি বাজারে তুলতে না পারায় চাষিরা হতাশ

প্রকাশিত: ৭:৪০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২৪

বর্তমান খবর,সদরপুর(ফরিদপুর)প্রতিনিধি : বিগত প্রায় ২০বছর যাবত রমজান মাস কে সামনে রেখে নিজ এলাকার রোপিত ফসল বাঙ্গি ও লালমি চাষ করেন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার শতাধিক চাষি।

স্বল্প সময়ের উৎপাদনকারী এ ফসল বীজ বপনের দুই থেকে আড়াই মাস পর বাজার জাতের উপযোগী হয় ফলটি। কিন্তু এ বছর সঠিক সময়ে বীজ রোপন ও পরিচর্যার পরও কাঙ্খিত ফলন পায়নি কৃষকরা। সামান্য ফলনের ফল বাজারে উঠলেও চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। রোজা শেষে ফলন আসলে একদিকে দুর্যোগ প্রাকৃতিক অন্যদিকে বাজারে চাহিদা না থাকায় পুরো ফলই ক্ষেতে নষ্ট হবে। এতে পুরোদমে লোকসানের মুখে পড়বে আবাদকৃত কৃষকরা। শীতল আবহাওয়ার কারনের জন্যই সময়মতো ফলন পাওয়া যায়নি বলে মনে করছেন চাষিরা।

উপজেলার কৃষ্ণপুর ও ভাষানচর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে বাঙ্গি ও লালমি চাষ করা হয়েছে। রমজানের আগে প্রায় আড়াই মাস পরিচর্যা শেষে প্রথম রোজা থেকে ফল তোলা শুরু করেন চাষিরা। স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। তবে এবার এখনও রমজানের বাজারে চাষিরা বাঙ্গি ও লালমি তুলতে পারেননি।

আগাম চাষ করা কিছু কৃষকের বাঙ্গি ও লালমি বাজারে পাওয়া গেলেও তা অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আবার কিছু চাষি অতি মুনাফার লোভে অপরিপক্ব বাঙ্গি তুলে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছেন। কৃষক ও কৃষি অফিস বলছে, এবার ১৫ রমজানের আগে পরিপক্ব বাঙ্গি ও লালমি বাজারে পাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে গত বছরের তুলনায় আবাদও ৪০শতাংশ কম হয়েছে। তবে যেসব জমিতে আবাদ হয়েছে, সেখানে ভালো ফলন হয়েছে।

সরেজমিন সদরপুরের লালমি ও বাঙ্গির ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, এখনও অনেক ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে হলদে ফুল। আর বেশির ভাগ ক্ষেতে মাটির ওপর গাছের পাতার নিচে ধরে আছে লালমি ও বাঙ্গি। গায়ের রং এখনও সবুজ। দেখেই মনে হচ্ছে অপরিপক্ব।

উপজেলার দরিকৃষ্ণপুর গ্রামের আলামিন সিকদার ১৪বিঘা জমিতে লালমি-বাঙ্গি চাষ করেছেন। এ ছাড়া আরও ৩০ বিঘা জমির বাঙ্গি ক্ষেত কিনে রেখেছেন। সব মিলে তাঁর খরচ হয়েছে ৮লাখ টাকা। গত সাত বছর ধরে রমজানে তিনি লালমি ও বাঙ্গি বিক্রি করে আসছেন। এরই মধ্যে তিনি ৪ লাখ টাকার বিক্রি করেছেন। তবে তা ক্ষেতের লালমি-বাঙ্গির মাত্র ২শতাংশ। তিনি বলেন, শীতের কারণে এবার লালমি ও বাঙ্গি পাকতে দেরি হচ্ছে। গত বছর ৬০ থেকে ৭০দিনে ফলন পেলেও এবার ৯০দিনেরও বেশি সময় লাগছে।

দাম নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম রমজানে আমি ঢাকার পাইকারি বাজারে ১০০ লালমি সাড়ে ৭হাজার এবং বাঙ্গি প্রায় ১৫হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমি নিজেই ঢাকার বাজারে পণ্য নিয়ে যাই। রোজার মাঝামাঝিতে সব কৃষকের বাঙ্গি-লালমি বাজারে আসবে। তখন আর এত দাম থাকবে না।

স্থানীয় আরেক কৃষক কুদ্দুস খান বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে লালমি চাষ করেছি। চাষাবাদে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুনেছি এ বছর বাজার ভালো। তবে এখনও সাত-আট দিন সময় লাগবে লালমি বাজারে তুলতে। সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, গত বছর সদরপুরে ৫০০ হেক্টর জমিতে লালমি চাষ হলেও এ বছর ৩২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আর গত বছরের ১০ হেক্টরের জায়গায় এ বছর বাঙ্গি আবাদ হয়েছে ৮হেক্টর জমিতে। শীতের কারণে কৃষকরা দেরি করে চাষ করায় রমজানের শুরুতে এবার ক্রেতারা বাঙ্গি-লালমি খেতে পারছেন না। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

বাজারে অতিরিক্ত দাম কম প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো ভোক্তা অধিকারের বিষয়। তারা দাম ও অপরিপক্বতার বিষয়টি দেখবে। জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ বলেন, বাজারে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রতিদিনই ফল ও নিত্যপণ্যের বাজারে সতর্ক ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। আগামীতে অপরিপক্ব লালমি ও বাঙ্গি বাজারজাতকরণ ঠেকাতে এবং অতিরিক্ত দামের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করব।