প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের টুকরো কাজ

প্রকাশিত: ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৪

বর্তমান খবর,দেবব্রত ঘোষ : তখন রাত সাড়ে এগারোটা। একটা ফোন এল অফিসিয়াল নাম্বারে। প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার থেকে তিনি এ নাম্বারটি সংগ্রহ করেছেন। রিসিভ করে দেখি ওপার থেকে মধ্য বয়সী এক মহিলার কন্ঠ। গলাটা বেশ ভারী লাগছে। ভাবলাম এতো রাতে ফোন দেওয়ার কারণ কি হতে পারে? উত্তর করলাম, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বলছি। আপনার জন্য কি করতে পারি?

অনেকটা কান্নার স্বরে মহিলা বলল, আমার স্বামী গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় সৌদি আরব থেকে রওনা দিয়েছে শুনেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। দয়া করে আপনি যদি একটু সাহায্য করতেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার স্বামীর পাসপোর্ট নাম্বার বা বিমানের টিকিট আছে কিনা? উনি বললেন, না, আমার কাছে তার কোন ডকুমেন্টস নেই। আমি বললাম, কিছু না পেলেও অন্তত পাসপোর্ট নাম্বারটা লাগবে। খুঁজে দেখেন, পেলে আমাকে WhatsApp-এ সেন্ড করেন।

তিনি বললেন, খুঁজে পেলে এক্ষুনি দিচ্ছি। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ভদ্র মহিলা তার স্বামীর পাসপোর্টের কপি WhatsApp এ পাঠালেন।

আমি তখন বাসায়। ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের এক শিফট-ইন-চার্জ কেবি হেলাল উদ্দিন তখন বিমানবন্দরে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আমি ভদ্র মহিলার স্বামীর পাসপোর্টের কপি পাওয়ার সাথে সাথে হেলাল সাহেবকে ফরোয়ার্ড করে লিখলাম,পাসপোর্টের এই ব্যক্তি গতকাল সৌদি আরব হতে রওনা দিয়ে এখনো বাড়ি যায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখেন বাংলাদেশে এসেছে কিনা? হেলাল সাহেব একটু তাড়াতাড়ি জানান।

হেলাল সাহেব জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাচ্ছি।
ইতোমধ্যে ভদ্র মহিলা ৫/৭ বার ফোন করে চলেছেন। আমি যেহেতু বিমানবন্দরে হেলাল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে তার স্বামীর তথ্য সংগ্রহ করার কাজে ব্যস্ত তাই ফোনগুলো রিসিভ করতে পারিনি।
এবার ফোন ধরলাম। উৎকন্ঠা এবং উদ্বিগ্নতায় ভদ্র মহিলা যেন বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। ক্ষীণ কন্ঠে অনুরোধ করে বললেন, ভাই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, ছেলে মেয়েগুলো চিন্তায় এখনও ঘুমায়নি। আমার স্বামীর খবর যেভাবেই হোক আমাকে জানান।

আমি বললাম, আমি চেষ্টা করছি। আপনার স্বামীর সংবাদ পেলেই আমি জানাচ্ছি আপনাকে।
এতক্ষণে হেলাল সাহেব ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে গিয়ে ঐ ব্যক্তির পাসপোর্ট নাম্বার সার্চ দিয়ে জানাল, ভদ্র মহিলার স্বামী গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছে। ফলে উক্ত ব্যক্তির দেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেল।

সাথে সাথে আমি ভদ্র মহিলাকে ফোন করে তার স্বামীর অবস্থান জানালাম। কিন্তু এই সংবাদে তিনি আরও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। দুপুর ১২টায় দেশে এলে এখনও বাড়িতে কেন আসেনি? কোথায় গেল, কোথায় যেতে পারে? অনেক প্রশ্ন করতে থাকে সে।

এদিকে রাত তখন বারটা পেরিয়ে গেছে। আমি বললাম, আপা চিন্তা করবেন না, এখন রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন। কাল যেভাবেই হোক আপনার স্বামীকে খুঁজে বের করা যাবে।

সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠেই ফোন দিলাম ভদ্র মহিলাকে। প্রথম দুবার রিসিভ করেননি। ৩য় বারে কথা হল। যা জানা গেল তা বেশ করুন নাটকীয়।

ভদ্রলোকের নাম মিজানুর রহমান। বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায়। কিন্ত বর্তমানে বাগেরহাট জেলার মংলাতে বাড়ি করেছেন। সেখানে এক ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী বসবাস করেন।
ভদ্র মহিলার নাম আখি। আখি আপা সকালে জানালেন, উনার স্বামী বাসায় এসেছেন রাত ২টায়। এসে কারো সাথে তেমন কোন কথা বলেননি। এমন আচরণ করেছেন যেন তার কাছে সবাই অচেনা। সন্তানদের বিষয়েও তেমন আগ্রহ নেই উনার।

কোথায় ছিলেন মিজান ভাই এতো দীর্ঘ সময়? দেশে এসে যোগাযোগ করেননি কেন? সৌদি আরব থেকে কবে কখন দেশে আসবেন সে বিষয়ে আগে বাড়িতে কোন নির্দিষ্ট সময় দেননি কেন?
সন্তানের উপর টান নেই কেন?

এসব প্রশ্নগুলো আখি আপাকে এখন অনেক ভাবিয়ে তুলেছে।

Written by

Debabrata Ghosh
Assistant Director
Expatriate Welfare Desk
Hazrat Shahjalal International Airport Dhaka