কেরানীগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৪
কেরানীগঞ্জ উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সবুজ হাওলাদার

বর্তমান খবর,বিশেষ প্রতিনিধি।। ঢাকা কেরানীগঞ্জ উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সবুজ হাওলাদার ও একজন ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিকার চেয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারীরা,স্যাকমো,পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা,পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক সহ বেশকিছু কর্মকর্তা কর্মচারীরা নাম বেনামে লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে,কেরানীগঞ্জ উপজেলার পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়ের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা দায়িত্ব পালন করছেন। সবুজ হাওলাদার ২০২১ সালের ৯ মার্চ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান। ঐ সময় ফলোয়া করে প্রচার করে বেড়াতেন স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে। তিনি উপজেলায় সপ্তাহে দুইদিন অফিস করলেও বাকি দিনগুলো সময় দেন বিভিন্ন তদবীর বাণিজ্যে বিভাগীয় অফিস ও অধিদপ্তরে। যদিও তার সপ্তাহে পাঁচদিন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে থাকার কথা। কথিত আছে সবুজ হাওলাদারের হস্ত এতটাই প্রসারিত যে, তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে পারেন না এমন কর্ম নেই। তিনি নাকি দুর্নীতিকে শিল্পের মর্যাদায় রূপ দিয়েছেন। কেউ কেউ তাকে মহাগুরু বলে ও উল্লেখ করেন।

বলা হয়,সবুজ হাওলাদারের কাছে অর্থই মুখ্য, সেটা বৈধ বা অবৈধ যা-হোক। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরে শক্তিশালি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ওই সিন্ডিকেটের চাপে অন্যরা প্রায় অসহায়। এমনটাই বলেছিলেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরানীগঞ্জ উপজেলার অধীন বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবুজ হাওলাদারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে প্রতিকার চেয়েছেন।

যোগদানের পর থেকে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস ও উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস এবং অডিট খরচের নামে মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে অর্থ গ্রহণ করেন। উপজেলার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন অহেতুক সৃজিত অভিযোগ দিয়ে বদলী ও বহিষ্কার করার ভয় দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের ঘুষ গ্রহণ করেন। ঈদের আগে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিকট থেকে ঈদ বকশিশ আদায় করছেন।

এছাড়াও তিনি পরিবার কল্যাণ সহকারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ২০২১ সালের জুলাই থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত পরিবার কল্যাণ সহকারীদের উঠান বৈঠকের বিল পাওনা থাকলেও সেগুলো দেওয়া হয়নি। এছাড়া করোনার সময় টিকা প্রদানের জন্য সরকার টাকা দিলেও তারা পায়নি। মাঠ কর্মচারীদের ভ্রমণ ভাতা হতে ৪০-৫০ শতাংশ টাকা আদায় এবং অন্যান্য সকল ভাতা হতে বাড়তি মোটা অংকের উৎকোচ জোরপূর্বক আদায়ের অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের নেতার এবং সেলিব্রেটিদের সংগে সখ্যতা আছে এমন কিছু প্রচার প্রচারণা করে বেড়াচ্ছেন। নিজেকে আওয়ামীলীগের লোক হিসেবে ধারাভাষ্য দিলেও আসলে তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। খোজ নিয়ে জানতে পারি সবুজ হাওলাদার বরিশালের স্থানীয় বিএনপি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং তার পিতা ছিলেন একজন কৃষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা।

অতি সম্প্রতি নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের নির্দেশে সবুজ হাওলাদারের বিরুদ্ধে একটি দায়সারা তদন্ত হয়েছে। সেখানে গুঞ্জন উঠেছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সবুজ হাওলাদার নিজের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন করিয়েছেন। কিন্তু সবুজ হাওলাদারের কিছুই হয়নি বরং সময়ের ব্যবধানে তিনি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।

পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সবুজ হাওলাদারের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ উঠেছে। নামে-বেনামে সম্পত্তিসহ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সবুজ হাওলাদার ঢাকা ও নিজ জেলা শহরে স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় জমি, নিজ এলাকায় মার্কেট করাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রেখেছেন টাকা। শুধু এখানেই শেষ নয়,ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী মাঠকর্মীদের সঙ্গে জোরপূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন,নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্য,নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগও ওঠেছে।

আসবাবপত্র ও অন্যান্য উপকরণ ক্রয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ,ঘুষ গ্রহণ,ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই দপ্তরের ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উল্লেখ্য যে গোপনে নিরপেক্ষ বিভাগীয় তদন্ত হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির কাছে সবুজ হাওলাদারের সিন্ডিকেটের দুর্নীতির দালিলিক প্রমান রয়েছে। যার অংশবিশেষ অর্থাৎ কেবলমাত্র সাবুজ হাওলাদারের বিষয়টি রিপোর্ট তুলে ধরা হলো। অভিযোগ গুলোর বিষয়ে বক্তব্য নিতে সবুজ হাওলাদারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন কল রিসিভ করেনি বা কল ব্যাকও করেননি। চলবে………………….