চরাঞ্চলের বালুতে ৬টি মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধান

প্রকাশিত: ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: বংলাদেশের মাটিতে ফলে সোনার ফসল। এ দেশে যেন মাটি নেই সবে যেন সোনা। কৃষক এ দেশের মাটিতে ফলায় সোনর ফসল। এমনিভাবে দেশের বালুতে মিলছে মূল্যবান খনিজ সম্পদ। নদী তো মানুষের জন্য আর্শিবাদ স্বরুপ। হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের কাছে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বত ও ভারতের আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

উজান থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র নদ গাইবান্ধার সাঘাটায় এসে নামধারণ করেছে যমুনা। পানি প্রবাহ না থাকায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। চরের এই বালুতেই লুকিয়ে আছে হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ। স¤প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের চরের বালুতে মিলেছে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান। গবেষণায় শনাক্তের পর ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি-আইএমএমএম বলেন প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের দাম ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। উত্তরের দুই জেলা কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের বালুতে প্রচুর পরিমাণে এসব খনিজ স¤পদ আছে নিশ্চিত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।

গবেষকরা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে পাওয়া গেছে ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজের মতো মূল্যবান ছয়টি খনিজ। এখানকার বালুতে আরো খনিজ শনাক্তের কাজ করছেন তারা। রুটাইল ব্যবহৃত হয় রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস এবং ঔষধ উৎপাদনে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এই খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে।

জিরকন ব্যবহৃত হয় সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও মোল্ডিং সেন্ডসে (ছাঁচ নির্মাণে ব্যবহৃত বালু)। বর্তমানে সারা বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিল, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এ খনিজ উপাদানটি রপ্তানি করে থাকে। ম্যাগনেটাইট চুম্বক ও ই¯পাত উৎপাদন, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা পরিষ্কার করা এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গভীর কূপ খননে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ মূল্যবান এ খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশ দুটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। গারনেট হলো ভারি ও মূল্যবান খনিজ। এটি ব্যবহার করা হয় সিরিশ কাগজ উৎপাদন, লোহাজাতীয় পাইপ পরিষ্কার ও বালুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত সারা বিশ্বে খনিজটি রপ্তানি করে থাকে। খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, কুড়িগ্রামে প্রবেশ থেকে ডাউনস্ট্রিমে গাইবান্ধা পর্যন্ত এবং তিস্তা নদীর অববাহিকায় যেসব চর, সেগুলো নিয়ে আমরা জিওফিজিক্যাল সার্ভে করি। কোন জায়গায় কোন ধরনের মিনারেলস আছে, এটার প্রাথমিক স্টাডি ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত স¤পন্ন করা হয়। এটি কার্যকরী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয় পাইলটিং করার নির্দেশনা দেন। এরপর ২০১৭ সালে একটি এটিপি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্প অনুযায়ী জয়পুরহাটে একটি খনিজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদে মূল্যবান খনিজগুলোর সন্ধান মেলে।

তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন বালুচর থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বালু সংগ্রহ করা হয়। খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালু থেকে ২ কেজি ইলমিনাইট, ২শত গ্রাম রুটাইল, ৪শত গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়। গবেষণার বরাত দিয়ে ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, ১০ মিটার গভীরতায় প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে উত্তোলনের পর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালুর বাজারমূল্য ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। আর সমপরিমাণ এলাকা থেকে প্রাপ্ত খনিজের বাজার মূল্য তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। কীভাবে কোন প্রক্রিয়া কোন প্রতিষ্ঠান এসব খনিজ আহরণ করবে, শীঘ্রই তা নির্ধারণ করবে সরকারের জ্বালানি ও খনিজস¤পদ বিভাগ।

তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত স্থানীয় নেতারা বলেন, দেশের স্বার্থ অক্ষুণè রেখে প্রয়োজনে বিদেশীদের সহায়তায় উন্নত প্রযুক্তি-প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব খনিজ উত্তোলনে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন নেতা মনজুর আলম মিঠু বলেন, দেশের স্বার্থ শতভাগ রক্ষা হবে এরকম একটা পরিকল্পনা নিয়েই এসব খনিজ স¤পদ উত্তোলন এবং ব্যবহারের উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ বলেন, জাতীয় স¤পদকে রক্ষা করার জন্য দেশের স্বার্থ অক্ষুণè রেখে সরকারকে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতি বদলে ভ‚মিকা রাখবে এসব খনিজ স¤পদ।