বর্তমান খবর,মেহেরপুর প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষ¥া নির্মূলে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্তে¡ও মেহেরপুরে ক্রমশঃ বাড়ছে যক্ষ¥ারোগীর সংখ্যা। সাধারণ যক্ষার পাশাপাশি মারাত্মক ঝুঁকিপুর্ণ যক্ষা হিসেবে খ্যাত এমডিআর টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ জন। ইতোমধ্যে ওই সব রোগিদের বাড়িকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনি উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ১৩ ফেব্রæয়ারী গাংনীতে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী ও বেসরকারী সংস্থা ব্রাক আয়োজিত কর্মশালায় এমনি তথ্য জানানো রোগ নির্ণয়ে শতভাগ নির্ভুল পদ্ধতি অবলম্বন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে যক্ষ¥ারোগী শনাক্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসায় যক্ষা ভাল সময় মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।
মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সহায়ক সংস্থা ব্রাকের তথ্যমতে, গেল ২০২৩ ইং সালে মেহেরপুরে যক্ষা রোগির সংখ্যা ছিল ১০২৫ জন। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৫১২ জন, গাংনীতে ৪০৮ জন ও মুজিবনগরে ১০৫ জন। গত ডিসেম্বরে সদর উপজেলায় ১০৮ জন, গাংনীতে ৪৩ জন ও মুজিবনগরে ১৮ জনকে সনাক্ত করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মেহেরপুর সদরে ১০৮ জন, গাংনীতে ৪৪ জন ও মুজিবনগরে সনাক্ত করা হয় ১৬ জনকে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৪ জন। তবে এমআরটিবি সনাক্ত করা হয় ১২ জনকে। এরা হচ্ছে- গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা গ্রামের বুলুয়ারা(৪৫), বেতবাড়িয়ার রওশনারা(৯০), লিয়াকত আলী(৬৫), তেতুঁলবাড়িয়া ইউনিয়নের রামদেবপুরের কাশেম আলী(৭৮), রামনগরের নাজির মন্ডল(৬০), পলাশী পাড়ার তহমিনা(৪৫), কাথুলি ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়ার বজলুর রহমান(৬০) ও রাইপুর ইউনিয়নের ঝোড়পাড়া গ্রামের জহুরা খাতুন(৬৫)। সদর উপজেলার কুতুবপুরের সাকিব(১৯) , আমঝুপির মিকাইল(৫০) ও মুজিবনগর শহরের নেপাল মল্লিক(৬০)। এসব আক্রান্ত রোগিরা শুধু নয়, গোটা পরিবারকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএলসিএ জাহিদুল ইসলাম জানান, যক্ষ¥ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমাতে সময়মতো রোগ শনাক্তের বিকল্প নেই। তাই পরিবারের একজনের যক্ষ¥া হলে সবার পরীক্ষা করার করার পরামর্শ দেন তারা। তবে যক্ষ¥া হলে মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চায় না। এর মূলে রয়েছে লোকলজ্জা, রোগের ব্যাপারে অবহেলা, সচেতনতার অভাবের মতো বিষয়। তা ছাড়া কর্মজীবীরা কাজ বাদ দিয়ে সহজে রোগনির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। যদিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যক্ষা রোগ নির্নয়ের প্রয়োজনিয় সরঞ্জামাদি রয়েছে। তার পর কেহ আসতে চান না পরীক্ষার জন্য।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আব্দুল্লাহ আল আরাফাত জানান, যক্ষ¥ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা পরিবারের সদস্যরা, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের অন্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, এইচআইভি, কিডনির জটিলতা, ইত্যাদি রয়েছে- এরা যক্ষ¥ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। আবার, নতুন করে সুপ্ত যক্ষ¥ার জীবাণুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যক্ষ¥া প্রধানত ফুসফুসকে প্রভাবিত করে, তবে এটি কিডনি, মেরুদÐ এবং মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। যখন একজন সংক্রামিত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দেয়, তখন টিবি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে সহযোগী সংস্থা ব্রাকের মেহেরপুর জেলা সমন্বয়কারী মনিরুল ইসলাম জানান, যক্ষ¥ার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ি। এই রোগটিতে মূলত ফুসফুস আক্রান্ত হয়৷ যক্ষ¥া রোগীদের সাধারণ যেমন কিছু উপসর্গ রয়েছে। তেমন এই ভাইরাস মূলত কাশি, হাঁচি থেকে বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায়৷
মেহেরপুর ডিএসএমও হুমাইরা আয়েশা জানান, বাংলাদেশে সর্বত্র বিনামূল্যে যক্ষ¥া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রæত তা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন। কারণ, যক্ষ¥া হলে শরীরে ক্ষয় বেশি হয়। মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তাই দ্রæত শনাক্তের পর চিকিৎসা নেয়া অনেক বেশি জরুরি। যক্ষ¥ার এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত।