বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিনিধি : বিমানবন্দরে বিদেশগামী, প্রবাসী, প্রত্যাগত কর্মী ও তাদের পরিবারের সার্বিক সহযোগিতা এবং কল্যাণ নিশ্চিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। ইতোমধ্যে স্বচ্ছ সেবা প্রদানের দৃষ্টান্ত স্থাপনও করেছে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ৬টি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ ৬টি ডেস্ক। এখানে ৩টি শিফটে ১৩ জন করে এবং সহযোগী স্টাফসহ মোট ৪৬ জনের একটি টিমের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম আন্তরিকতার সঙ্গে চলমান আছে।
তথ্যসূত্র বলছে, ১৯৯২ সালের ১ জুলাই অনুষ্ঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের ১ম বোর্ড সভায় বোর্ডের অর্থায়নে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বিধিমালা, ২০০২ বিধি ৭(গ) অনুসারে বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের গমনাগমনকালে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আইন ২০১৮ ধারা ৮(৫) “অভিবাসী কর্মীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিমানবন্দরে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য বহির্গমন ও প্রত্যাগত স্থানে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও পরিচালনা” কার্যকর করা হয়েছে। ফলে ওই আইনের ক্ষমতাবলে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ ও সেবামূলক কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে “প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক” পরিচালিত হচ্ছে।
নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সেবা প্রদান কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন ও অভিবাসীদের সন্তোষজনক সেবা প্রদানের ব্যাপারে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা জানান বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবব্রত ঘোষ।
তিনি জানান, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোট ৬টি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম চলমান আছে। প্রবাসীদের সুবিধার্থে বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে এই ডেস্কগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান ডেস্কটির অবস্থান : টার্মিনাল-২ এর বহির্গমন কনকোর্স হলে (৫নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ডান দিকে), দ্বিতীয় ডেস্কটি টার্মিনাল-১ এর দক্ষিণ পার্শ্বে বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে রাখা হয়েছে (ইমিগ্রেশন-১ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বামে), এছাড়া তৃতীয়টি টার্মিনাল-১ এর উত্তর পার্শ্বে বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে (ইমিগ্রেশন-২ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বামে) সেবা প্রদান করে চলেছে, ৪র্থ ডেস্কের অবস্থান টার্মিনাল-২ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার সংলগ্ন (ইমিগ্রেশন-৩ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বামে), পঞ্চমটি আগমন ইমিগ্রেশন হলে পর্যটন ডিউটি ফ্রি শপ এর দক্ষিণ পার্শ্বে এবং সর্বশেষটি রয়েছে আমদানি কার্গো ভবনে।
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের নভেম্বর মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে দেবব্রত ঘোষ বলেন, প্রধান ডেস্কের মাধ্যমে সৌদি আরবগামী কর্মীদের ভিসা/আকামা মেয়াদ যাচাই করা হয় ৬৪ হাজার ৩২০ জনের। এছাড়া বিদেশগামীদের প্রয়োজনে যেকোনো ডকুমেন্ট বিনামূল্যে প্রিন্ট ও ফটোকপি করে সহায়তা দেওয়া হয় এবং বিমানে চেক-ইন করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়। অন্যদিকে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন ৩টি ডেস্কের মাধ্যমে বিদেশগামী অভিবাসী কর্মীদের স্মার্ট কার্ড/বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স যাচাই করা হয়। এর সংখ্যা নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪২ জন। অনিয়মিত অভিবাসন রোধে বিএমইটির ছাড়পত্র না থাকা/ফেইক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে গমনকারীদের যাত্রাবিরতি/অফলোড করা হয় ১০৩ জনের।
ডেস্কের সহকারী পরিচালক জানান, আগমন ডেস্কের মাধ্যমে প্রত্যাগত ও অন্যান্য ডেস্কের মাধ্যমে বহির্গমন নভেম্বরে যাত্রীদের তথ্য সহায়তা প্রদান করা হয় ২ হাজার ৮০০ জনের। এই ডেস্কের মাধ্যমে রেফারেল সার্ভিস প্রদান করা হয়।
এছাড়া কার্গো ডেস্কের মাধ্যমে প্রবাসে মৃত বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ গ্রহণ করা হয় ৩৭২ জনের। মৃত কর্মীর ওয়ারিশদের মাঝে মরদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ প্রত্যেক পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা করে মোট বিতরণ করা হয় ১৩ কোটি ২০ হাজার টাকা। অ্যাম্বুলেন্সযোগে প্রবাসে মৃত কর্মীর মরদেহ পরিবহন করা হয় ১৪ জনের। ১০৫ জন অসহায় কর্মীদের মাঝে নগদ আর্থিক সহায়তা (জনপ্রতি ১-২ হাজার) টাকা প্রদান করা হয়। গুরুতর অসুস্থ/মানসিক বিকারগ্রস্থ কর্মীদের আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর এবং ৫০ হাজার টাকার এককালীন আর্থিক চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয় ১ জনকে। এছাড়াও ৩ জন গুরুতর অসুস্থ কর্মীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এই ডেস্কের মাধ্যমেও রেফারেল সার্ভিস প্রদান করা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবব্রত ঘোষ আরও জানান, বিদেশগামী কর্মীদের প্রয়োজনে বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ ও পূরণসহ অন্যান্য সহযোগিতা, প্রবাসগামী বৈধ কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র যাচাইপূর্বক বিদেশ গমনে সহায়তা, কোনো প্রবাসী কর্মী অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরত আসলে অথবা বিমানবন্দরে এসে অসুস্থ হলে তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ সরকারী হাসপাতালে প্রেরণসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিতের ব্যবস্থা, বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে অসুস্থ কর্মীদের হাসপাতালে স্থানান্তর এবং অতিরিক্ত প্রয়োজনে ভাড়ায় চালিত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা, হাসপাতালে অসুস্থ কর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসা খরচ বহন, গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে রোগের ধরন অনুযায়ী বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতালে প্রেরণ, প্রত্যাগত/জেল/আউটপাস নিয়ে ফেরত আসা কর্মীগণের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় সরবরাহসহ নানা সুবিধা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি-ব্যবহার নির্দেশিকা) অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক প্রদান করে থাকে।
বিদেশ ফেরত মৃত প্রবাসীদের মরদেহ আত্মীয় স্বজনরা যেন সঠিক উপায়ে পেতে পারেন এজন্য বেশকিছু নির্দেশনাও স্পষ্ট করে দেওয়া আছে সেখানে। এছাড়াও ডেস্কে অনুসন্ধান করা মাত্রই সেখানে কর্তব্যরত কর্মীরা সহযোগিতা করে থাকে। মরদেহ পরিবহন ও দাফন খরচের জন্য ডেস্কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করলেই তারা মৃত ব্যক্তির পরিবারকে অর্থ প্রদান করে থাকে।
মরদেহ পরিবহন ও দাফন খরচের অর্থ পেতে যা যা লাগবে…
১. স্থানীয় চেয়ারম্যান/ কমিশনারের প্রদত্ত ওয়ারিশ সনদ/পারিবারিক সদস্য সনদ;
২. (ক) বিবাহিত হলে মৃতের স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি;
(খ) অবিবাহিত/তালাকপ্রাপ্ত হলে বাবা/মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি;
৩. মৃতের পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে)।
সেবা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, প্রত্যাগত/জেল/আউটপাস নিয়ে ফেরত আসা কর্মীগণের বাড়ি পাঠাতে গাড়ি ভাড়া বাবদ আর্থিক সহায়তা, মানসিকভাবে অসুস্থ বিদেশ ফেরত কর্মীকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট বা এ সংক্রান্ত অন্যান্য সরকারী হাসপাতালে প্রেরণ, বিদেশ গমন/নাগমনকালে কোনো কর্মী বিমানবন্দরে মৃত্যুবরণ করলে মৃতদেহ বাড়িতে পাথানো ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা, পিতৃ/মাতৃ পরিচয়হীন বা পরিত্যক্ত প্রবাস ফেরত শিশুকে কল্যাণ ডেস্কের নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরভূক্ত শিশু সনদ/এতিমখানায় পাঠানো, যুদ্ধাবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি লে-অফ, লে-আউট বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দুরবস্থা বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক।
এছাড়াও বিদেশগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে সাময়িক অবস্থানের (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) ব্যবস্থা, প্রবাস ফেরত অসুস্থ কর্মীর সঙ্গে আগত সংশ্লিষ্ট দেশের চিকিৎসক/নার্স/অ্যাটেনডেন্টকে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে সাময়িকভাবে অবস্থানের ব্যবস্থা, মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান, আহত ও অসুস্থ কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, মৃতদেহ গ্রহণ করে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর, প্রবাস ফেরত কর্মীর প্রয়োজনে বিমানবন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সহযোগিতা প্রদান এবং বিমানবন্দরে লাগেজ/মালামাল হারিয়ে গেলে এয়ারপোর্টের (Lost and Found) বিভাগকে অবহিত করে লাগেজ প্রাপ্তিতে সহায়তা, বিভিন্ন দেশ হতে নির্যাতিত/নিপীড়িত/প্রতারিত ফেরত কর্মীর অভিযোগ গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ (ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় প্রেরণ), বিমানবন্দরে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে প্রবাস ফেরত ও প্রবাসগামী কর্মীকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিমানবন্দরের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন, প্রবাসগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের নিকট মন্ত্রণালয় ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাসমূহের কল্যাণমূলক সেবা, যেসব সেবা প্রদানে আর্থিক সংশ্লেষ আছে, সেসব সেবাগ্রহীতার নাম, মোবাইল নং ও পাসপোর্ট নম্বর এবং বিএমইটি’র ক্লিয়ারেন্স নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সংগ্রহ পর্যন্ত করে থাকে এই প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক।
ঢাকা বাদেও চট্রগ্রামের হযরত শাহ আমানত বিমানবন্দরে ১টি, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১টি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সাথে যোগাযোগ করা যাবে নিম্নবর্ণিত ঠিকানায়।
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা
+৮৮-০১৪০৪৪১৩৩৮৮ (মোবাইল), +৮৮০২-৮৯০১০৪০ (প্রধান ডেস্ক), +৮৮০২-৮৯০১৩৬৫ (কার্গো ডেস্ক)
ইমেইল: welfaredesk@gmail.com
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক: হযরত শাহ আমানত বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম
+৮৮০২-৩৩৩৩০০৯৫৭, +৮৮-০১৭৫৮০২৬২৬২, +৮৮-০১৭১৯৫৫২৩২৬
ইমেইল: pdkctg@gmail.com
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক: ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট
+৮৮-০১৭৯৯৯০৮৩০৬
ইমেইল: pkdsylhet@gmail.com
বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার
+৮৮-০১৭৫৪৭১৫৭২০, +৮৮-০১৩১০৩৫০৫৫৫
প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার
১৬১৩৫ (টোল ফ্রি, দেশ থেকে), +৮৮০৯৬১০১০২০৩০ (বিদেশ থেকে)