ঢেঁকির ধুক্কুর ধুক শব্দে আর ঘুম ভাঙ্গে না

প্রকাশিত: ৬:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: ঢেঁকির ধুক্কুর ধুক শব্দে আর ঘুম ভাঙ্গে না। এ শব্দের সাথে নতুন প্রজন্ম পরিচিত নয়। তারা জনেই না ঢেকিঁ কি কিবা তার কাজেই কি?

প্রযুক্তি নির্ভরতা ও কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঢেঁকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে প্রবাদ থাকলেও আধুনিক যুগে এসে ধান ভানার যন্ত্রের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম সেই কাঠের তৈরি ঢেঁকি। একসময় গ্রামাঞ্চলের মানুষের ধান ভানা ও পিঠাপুলির জন্য চাল গুঁড়ো করার একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। তবে এখন আর সচরাচর চোখেই পড়ে না। সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক কলের কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি কেবলই বই-পুস্তকের শব্দ।

আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষে সময় ও শ্রম কমাতে আবিষ্কৃত হচ্ছে নানা যন্ত্র, ফলে ঢেঁকির মতো গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রাচীনতম অনেক ঐতিহ্য দিনে দিনে বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বহু আগেই এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে। তব রাজপথে চলিছে মোটর সাগরে জাহাজ চলে/রেলপথে চলে রেল ইঞ্জিন দেশ ছেয়ে গেছে কলে। উত্তরের জনপদের মানুষের ধান ভানার চাহিদা মেটাতে ঢেঁকি একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

এ ছাড়াও পৌষ-মাঘে নানারকম পিঠা পুলি তৈরির জন্য চালের গুঁড়ো করতে ঢেঁকির বিকল্প ছিল না। শীত মৌসুমে মানুষ ঘুমে থাকতেই শুনতে পেতেন ঢেঁকির ধুক্কুর ধুক শব্দ। ঢেঁকির শব্দ সেই সময়ের মানুষের কাছে ছিল একটি অতিপরিচিত শব্দ। এ শব্দ শুনেই বুঝতে পারতেন কোথাও পিঠাপুলির আয়োজন হচ্ছে,বা ধান ভানছে। আধুনিক সময়ে আবিষ্কৃত ধান ভানার যন্ত্রের কারণে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে বাঙালির ঐতিহ্য ঢেঁকি হারিয়ে যাচ্ছে।

রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদা বেগম বলেন, বাড়িতে একটি তেতুল কাঠের ঢেঁকি আছে যার বয়স একশত বছরের বেশি হবে। এটা আমার দাদা শ্বশুর তৈরি করেছিলেন। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঢেঁকি সংরক্ষণ করা হয়েছে। পিঠা বানানোর জন্য চালের গুঁড়ো আমরা এখনও এই ঢেঁকি দিয়েই করি। এক সময় ধান ভানিতে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া-দুলিয়া ও ধান ভানিরে। এ গানটি এক সময় গ্রাম বাংলায় খুবই জনপ্রিয় ছিল।

আসলে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বানানোই ছিল ঢেঁকির কাজ। ঢেঁকি হচ্ছে কাঠের তৈরি। প্রায় ছয় ফুট লম্বা ও নয় ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট একটি ধড় থাকে ঢেঁকিতে। মেঝে থেকে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড়ের একেবারে সামনে দুই ফুট লম্বা একটি গোল কাঠ থাকে। এটাকে মৌনা বলা হয়। দু’টি বড় কাঠের ভেতর দিয়ে একটি ছোট হুকড়া হিসেবে কাঠের গোরাকার খির থাকে। এভাবেই তৈরি ঢেঁকি দিয়ে এক সময় ধান ভাংগানোর কাজ করা হতো। তবে একসময় প্রায় বাড়িতেই ঢেঁকি থাকলেও আধুনিক যুগে এসে ঢেঁকি প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে।

চিকিৎসকগণ বলেন,একসময় গ্রামবাংলায় ঢেঁকি ছাঁটা চাল ছিল। আধুনিক যন্ত্রের যুগে ঢেঁকি বিলুপ্ত হয়েছে। তবে চিকিৎসা শাস্ত্র মতে আধুনিক মেশিনে ভানা চাল থেকে ঢেঁকি ছটা চাল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ঢেঁকি ছাটা চালে পুষ্টিগুণ অটুট থাকে, যা আধুনিক মেশিনে অটুট থাকে না।