নীলফামারীতে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলকুঠি

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো:

নীলফামারীর নটখানা গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির নীলকরদের আস্তানা ও নিরীহ কৃষকদের নির্যাতনের টর্চারসেল নীলকুঠি। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারীতে ২২৫ বছর পূর্বে নীল চাষের জন্য নীলকুঠি নামে একটি নীলের খামার স্থাপন করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানি। ফলে নীলকরদের আস্তানা গড়ে উঠে জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নটখানা গ্রামে।

নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন বলেন,২২৫ বছর আগে ওই বিল্ডিংটি তৈরি করে ছিল ব্রিটিশরা। এটি দেখলে নীলকরদের নির্যাতন আর অত্যাচারের কথা মনে হয়। চোখের সামনে ভেসে আসে নীলকরদের নির্যাতনের দৃশ্য। কি নির্মম ইতিহাস। নিরীহ কৃষকদের নির্যাতনের ইতিহাস বহন করে ওই দালানটি। সেই নীলখামার থেকে নীলফামারী নামটির উৎপত্তি হয়।

নীলকুঠি ছাড়াও নীলফামারীতে পুরাকীর্তি হিসেবে রয়েছে,ভীমের মায়ের চুলা,১০০ বছরের পুরোনো হাতির পানি খাওয়া কড়াই,নীলসাগর (বিন্যাদিঘী), কুন্দুরাজার মাজার,হাজার বছরের খ্রিস্টান গির্জা,চিনি মসজিদ,হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি,হরেন্দ্র গোস্বামী কাছাড়ী বাড়ি,ধর্মপালের গড় ও পাল রাজার বাড়ি। তবে এসব দর্শর্নীয় স্থান সংরক্ষণের প্রতœতত্ত¡ বিভাগের নেই কোনো উদ্যোগ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়,১৮০০ সালে ওই গ্রামে নীল চাষের একটি বৃহৎ খামার স্থাপন করে ইংরেজরা। ১৮৪৭-৪৮ সালে নীল চাষে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন কৃষকরা নীলচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ কারণে তখন নির্যাতনের শিকার হয় এলাকার নিরীহ কৃষকরা। ১৮৫৯-৬০ সালের দিকে স্থানীয় কৃষকদের আন্দোলনের ফলে নীলচাষ পুরো বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় ব্যাপক কৃষক আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে পালিয়ে যায় ব্রিটিশ নীলকররা। সেই নীলখামার থেকে নীলফামারী নামের উৎপত্তি হয়েছে। সেখানে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই ২২৫ বছর আগের নির্মিত পুরোনো ভবনটি। যা ব্রিটিশদের অত্যাচারের স্মৃতি বহন করে। এটিই মুলত ব্রিট্রিশদের টর্চার সেল ছিল।

নতুন প্রজন্ম যাতে জানতে পারে জেলা শহরের অদূরে নটখানায় নীলচাষ হতো। এরই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশের তৈরি নীলকুঠি ভবনটি পুরার্কীত হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানান স্থানীয়রা। কিন্তু প্রশাসনের অবহেলায় এখন তা বেদখলে চলে যাচ্ছে। আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, ইংরেজদের নির্দশন নীলকুঠি নীল চাষের সঙ্গে নীলফামারীর ঐতিহ্য, ইতিহাস ও নামকরণ জড়িত আছে। এটি সংরক্ষণের নেই কোনো উদ্যোগ। ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে নীলফামারীর নাম করণের ইতিহাস ও নিদর্শন।

পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম তালুকদার বলেন, সেই সময় নীলচাষে বাধ্য করা হতো এ অঞ্চলের নিরীহ কৃষকদের। নীলকররা ওই ভবনটি নির্মাণ করে সেখানে তাদের কার্যক্রম চালাত। ভবনের ভিতরে কৃষক নির্যাতনের টর্চারসেলও ছিল। আর মহকুমা অফিস (কার্যালয়) বর্তমানে জেলা শহরের কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্ত¡রে বিশাল টিনশেড চৌচালা ঘরটি। এখন সেটি অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন,উৎপাদিত পণ্য জেলা শহরের শাখা ও মাচা নামে দুটি বন্দর দিয়ে নদীপথে তারা মালামাল আনা নেওয়ার করত। এখন সেখানে সপ্তাহে দুইদিন বুধবার ও রবিবার হাট বসে। এলাকার মানুষ দলে দলে বেচাকেনা করতে আসে অতি পুরোনো শাখা মাচার হাটে। এ ছাড়াও সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নামাজ পড়ার জন্য দ্বিতল মসজিদ।

আফসার উদ্দিন বলেন, পুরোনো এই দালানটি নীলকরদের নির্যাতনের স্মৃতি হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে। অযতœ আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে দালানটি। ১০ বছর আগে শুনেছি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের কাজটি হাতে নিয়েছে। তবে কতদিনে বাস্তবায়ন হবে জানি না। এখনো সারাদেশ থেকে নীলকুঠি দেখতে ভ্রমণপিপাসু মানুষ সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও দুই ঈদে এবং পূজাপার্বণে আসে।

এছাড়াও সাধারণ মানুষ নীল গাছের ছবি তুলতে ভিড় করেন। ব্রিটিশ আমলে নীলচাষের ওই নিদর্শনটি সংরক্ষণ করে ইংরেজদের শাসন ও শোষণের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *