বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: এক সময় সরিষার তেলের উপর নির্ভর ছিল রান্নাসহ পরিবারের ধরণের কাজ। পিঠা তৈরী থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে ব্যবহার করা পর্যন্ত সরিষার তেলের কোন বিকল্প ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়াল সরিষা চাষ কিছুটা হারিয়ে গেলেও বর্তমানে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাম বাংলার কৃষকগণ পরিবারের তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য আবারও সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
রংপুর,গাইবান্ধা,কুড়িগাম,নীলফামারী ও লালমনিরহাটে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন সরিষা ক্ষেত হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। চারদিকে তাকালেই দেখা যায় হলুদ রঙের ফুলের সমারোহ। ফুলের সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে বেশ ভালো লাগে। সরিষার মাঠে গেলে ফুলের গন্ধে মন ভরে ওঠে। হলুদ রং মন কেড়ে নেয়। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না হলে চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে সরিষার বা¤পার ফলন আশা করা হচ্ছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন। লালমনিহাট কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, প্রতি বছর লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় প্রচুর পরিমাণে সরিষার চাষ হয়। ফলনও হয় বেশ ভালো। আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নামে সরিষা চাষ করতে। এক সময় লালমনিরহাটে আমন ধান কাটার পর জমিগুলো পতিত থাকত। কিন্তু বর্তমানে লালমনিরহাটে আমন ধানের জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর,আদিতমারী,কালীগঞ্জ,হাতীবান্ধা,পাটগ্রাম উপজেলায় ব্যাপক হারে সরিষা চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল গনি বলেন, চলতি বছর তিনি ১বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার রোগবালাই দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ সরিষার ফলন হবে। সরিষা তোলার পরই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। তাছাড়া সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলন ভালো হয়।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, সরিষা চাষে লাভ বেশি খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রি করা যায়। সরিষা ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই আবার কম সারে বোরো ধানের চাষ করা যায়।
লালমনিরহাট কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, চলতি মৌসুমে লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৮ শত ৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। কৃষকদেরকে অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। যাতে কৃষকের কোনো প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। আশা করা হচ্ছে, প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে এবার বা¤পার সরিষার ফলন হবে।