ডা.মাহাবুবুর রহমানের রিং বাণিজ্যের অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ৪:২০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
ডা.মাহাবুবুর রহমান

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং (স্টেন্ট) স্থাপন করে তিনটির টাকা নেন। কখনো রিং স্থাপন না করে শুধু সার্জারি করেই রিংয়ের টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। প্রয়োজন না হলেও রোগীকে আতঙ্কিত করে রিং স্থাপনে উৎসাহিত করেন তিনি। চিকিৎসক হিসেবে রিং বিক্রির নিয়ম না থাকলেও তিনি নিজেই রিং বাণিজ্য করেন। এমনই একজন হৃদরোগের চিকিৎসক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান। অথচ এই চিকিৎসকের বেশভূষা-চেহারা দেখে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন না যে তিনি রোগীদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করতে পারেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো.মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুজন ভুক্তভোগী রোগী দুর্নীতি দমন কমিশন ও রমেক হাসপাতাল পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে এমন অভিযোগ করেছেন। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পাওয়া প্রতারণার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনে প্রতিনিধি চেয়ে রমেক অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ডা. মাহবুবুর রহমান দীঘদিন ধরে হার্টে সার্জারি করে নিজেই রিং বিক্রি করে স্থাপন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে বিভিন্নভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে এনজিওগ্রাম, সার্জারি, রিং স্থাপনসহ নানা রকম সেবার অন্তরালে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময়েও রোগীরা প্রতিবাদ জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন দাবি করে ডা. মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন আতোয়ার হোসেন ও মশিউর রহমান নামে দুজন ভুক্তভোগী। সেই অভিযোগের কপি দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসি, রমেক হাসপাতাল, রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে সরাসরি ও ডাকযোগে পাঠিয়েছেন তারা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের আতোয়ার হোসেন ওই লিখিত অভিযোগে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহাবুবুর রহমান প্রতারণার মাধ্যমে রমেক হাসপাতালে আমার হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং (স্টেন্ট) পরিয়ে তিনটি রিংয়ের টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন। ডা. মাহাবুবুর রহমান রিং পরানোর যে সিডি দিয়েছেন তাতে রিং লাগানোর কোনো নজির নেই,তবে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় একটা রিং পরানোর রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু ডা. মাহাবুবুর তিনটি রিং লাগোনোর কথা বলে তার (আতোয়ার হোসেন) নিকট থেকে তিন লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

আতোয়ার হোসেন বলেন, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর হার্ট অ্যাটাক হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. মাহাবুবুর রহমানের অধীনে ভর্তি হন তিনি। এনজিওগ্রাম করে ডা. মাহাবুবুর জানান যে, হার্টের রক্তনালীতে তিনটি বøক আছে এজন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এরপর ৯ শতক জমি বিক্রি তিনটি রিংয়ের জন্য মেডিকেলের এমএলএস শহিদুল ইসলামের সহায়তায় তিন লক্ষ ২০ হাজার টাকায় তিনটি রিং পরাতে রাজি হন ডা. মাহাবুবুর। রিং পরানোর পর অবস্থার উন্নতি না হলে কয়েকদফা ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ডা. মাহাবুবুরের অধীনে। এরপরও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে আতোয়ার চলতি বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি আরেক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. হাসানুল ইসলামের অধীনে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়ে সুস্থ হন। এসময় জানতে পারেন তার হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং পরানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন,তিনি হার্টের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে তাকে কষ্টে দিনানিপাত করতে হচ্ছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আরেক ভুক্তভোগী মো. মশিউর রহমান তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, পেটে ব্যথা হলে তার মাকে রংপুর মহানগরীর কছির উদ্দিন মেডিকেলে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ডা. জিয়াউর রহমানের নিকট দেখাতে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পিত্তথলির অপারেশন করাতে হবে বলে জানান এবং অপারেশনের আগে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের নিকট চেক করে নিতে পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মোতাবেক ১১ সেপ্টেম্বর তার মাকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মাহাবুবুর রহমানের নিকট তার চেম্বার রংপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে দেখালে তিনি এনজিওগ্রাম করাতে বলেন।

১৮সেপ্টেম্বর ডা. মাহাবুবুর রহমান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করে বলেন যে তার মায়ের হার্টের রক্তনালীতে ৭৫ শতাংশ বøক আছে, তা এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে রিং (স্টেন্ট) পরাতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাদের সন্দেহ হলে ঢাকা ন্যাশন্যাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামানকে ৩০ সেপ্টেম্বর এনজিওগ্রামের সিডি (রেজি নং ১২৫২২/৩২) দেখালে তিনি বলেন যে তার মায়ের হার্টে কোনো প্রকার বøক নেই। এরপর রংপুরে এসে ১৫ অক্টোবর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো.হাসানুল ইসলামকে দেখালে তিনিও বলেন যে তার মায়ের হার্টের রক্তনালীতে কোনো বøক নেই। তবে তিনি সামান্য কিছু ঔষধ খেতে পরামর্শ দেন। তার মায়ের যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো ভালো হয়ে যায়। অতঃপর ৭ নভেম্বর ডা. মো. মিজানুর রহমানের অধীনে পিত্তথলির অপারেশন করানো হয়।

ভুক্তভোগী মাসুমা বেগমের ছেলে মোহা. মশিউর রহমান বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজে বসে এভাবে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত করছেন ডা. মাহাবুবুর রহমান। শুনেছি এ রকম প্রতারণা করে তিনি প্রতিনিয়তই রিং বিক্রি করছেন। এ ধরনের চিকিৎসা বণিজ্য বন্ধ করাসহ ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

বিভিন্ন সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিনিয়তই রিং বাণিজ্য করে যাচ্ছেন ডা.মাহাবুবুর রহমান। তিনি এজন্য বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন তার ভিজিটিং কার্ড ও ফাইল ফোল্ডারে। যেখানে লেখা রয়েছে সুখবর সুখবর সুখবর! আর নয় ঢাকা, আর নয় ইন্ডিয়া। এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই অতি অল্প খরচে হার্টের এনজিওগ্রাম, হার্টের রক্তনালীতে স্টেন্ট (রিং) বসানো (এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্টিং) মাইট্রাল ভালভুলোপ্লাস্টি ও হার্টের পেসমেকার স্থাপন করছেন ডা. মো.মাহাবুবুর রহমান।

রিং বিক্রি বাড়াতে এভাবেই নিজের বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ডা. মাহাবুবুর, যা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ অনুযায়ী অপরাধ। ডা. মাহাবুবুর রহমান তার ভিজিটিং কার্ডে ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিএমডিসির এমডি (কার্ডিওলজি), এফএসিসি (আমেরিকা) এ ধরনের ভুয়া ডিগ্রি লিখে প্রলুব্ধ করেন রোগীদের। বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের প্রচারণা অনুচিত। কারণ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ধারা ২৯ (১) বলা হয়েছে এই আইনের অধীনে কোনো মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোনো নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করিবেন না যার ফলে তার কোনো অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করেন, যদি না তা কোনো স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। এই ধারা ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।

গত ১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সাঘাটা বোনারপাড়া এলাকার লাল মিয়া (৫০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, হৃদরোগে আক্রান্ত হলে গত ২৭ নভেম্বর লাল মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হলেও পরে তড়িঘড়ি করে তার হার্টে রিং স্থাপন করা হয়। হার্টে রিং স্থাপনের দুদিন পর মারা যান লাল মিয়া।

নিহতের স্ত্রী ফরিদা বেগম ও ভাগ্নে ফেরদৌস হাসান ফিরোজ বলেন, রোগীর অবস্থা দেখে সে বাঁচবে না মরবে সেটা তো ডাক্তার ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু ডাক্তার মাহবুবুর রহমান সেটা বলেননি। বরং দ্রæত অপারেশন করার তাগিদ দেন। রিং স্থাপনে এক লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানান। এরই মধ্যে অপারেশন করা হলে দুদিন পর রোগীর মৃত্যু হয়। লাল মিয়ার মরদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রামে নিয়ে ফেরার সময় হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র তারা সঙ্গে আনতে পারেননি বলে জানান। তবে রোগীর মৃত্যু হওয়ায় পরিবার ওই চিকিৎসককে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দেননি বলেও স্বীকার করেন ফরিদা বেগম।

সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে রিং বাণিজ্য ও বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহাবুবুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রত্যেকটা রোগীর হার্টে রিং স্থাপনের পর তাকে রিপোর্ট কপি এবং সিডি দেওয়া হয়। সেখানে বিস্তারিত তথ্য থাকে। এরপরও যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে এটা দুঃখজনক। ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমানের কাছ থেকে তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমাকে যে তিন লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে তার কী কোনো ডকুমেন্ট আছে? এটা সত্য না মিথ্যা সেটা আগে তো প্রমাণ হতে হবে। আমাকে কোনো রোগী টাকা দিয়েছে সেটা আমার মনে নেই। কারণ অনেক রোগীতো হার্টে রিং নিয়েছে। যারা হার্টে রিং নিয়েছে তাদেরতো টাকার রিসিভ কপি দেওয়া হয়। বা যেগুলোর ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট দেওয়া হয়, তার তো কাগজপত্র রয়েছে।

এ ব্যাপারে আমার খেয়াল নেই। বিভিন্ন ডিগ্রি লিখে বিজ্ঞাপন প্রচারে ভিজিটিং কার্ড ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এটাতো সব ডাক্তারই করে থাকেন, নতুন কিছু নয়। ওই রোগীর অভিযোগের পেছনে অন্যান্য ডাক্তারের ইন্ধন রয়েছে। কারণ তারা চায় না রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্টে রিং স্থাপনসহ অন্যান্য চিকিৎসা ভালোভাবে হোক। দীর্ঘদিন ধরে রমেক হাসপাতালে হার্টে রিং স্থাপন বন্ধ ছিল। মেডিভয়েস থেকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চেষ্টা করে আমি রিং স্থাপনের কার্যক্রমটা শুরু করেছি। এখন আমাদের কোনো কোনো ডাক্তার চাইছেন না এটা এখানে স্টাবলিস্ট হোক। তারাই রোগীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।

সরকারি হাসপাতালে বসে রিং স্থাপনে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ যে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, তা সরকারি বিধি সম্মত কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুর রহমান বলেন, সারা বাংলাদেশের সব জায়গায় যেখানেই হার্টে রিং স্থাপন করা হয়, সেখানে কো¤পানিরা রিং প্রোভাইট করে থাকে। তারা রিং স্টক দিয়ে রাখে। এটা জানতে দিনাজপুর, রাজশাহী, ঢাকায় খবর নিতে পারেন। কোন রিংয়ের কত দাম, সেটার মূল্য তালিকাও দেয়ালে টাঙানো রয়েছে। অনেক জায়গায় রোগীর কাছ থেকে আগে টাকা নিয়ে তারপর রিং স্থাপন করা হয়। কিন্তু আমি তো সেটা করি না। রিং স্থাপনের তিন-চার দিন পর টাকা নেওয়া হয়। নয় বছর ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছি। করোনা মহামারির পর থেকে রিং স্থাপন করে আসছি। কেউ তো আমার বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ করেনি। এখন যদি কেউ অভিযোগ করে তা সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখা হোক, আসলেই সত্য কিনা। আমি তো অভিযোগের জবার দিতে প্রস্তুত আছি। আপনারা (মিডিয়া) যদি আমার বিরুদ্ধে লিখতে চান লিখে যান তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। এদিকে গত ২৬ নভেম্বর রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষকে তদন্ত কমিটিতে একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন প্রসঙ্গে দেওয়া পত্রে (স্মারক নংসিএস/রং/প্রশা/৩১/২৪/৩৪৩৬) বলা হয়েছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে দুটি অভিযোগ ১) মো. মশিউর রহমান, পিতা- আফসার আলী, গ্রাম-দোয়ানী হাজিপুর, মুন্সিপাড়া, বদরগঞ্জ, রংপুর ও ২) আতোয়ার হোসেন, পিতা- মৃত আবুল হোসেন, গ্রাম- কুমারপাড়া, ডাক-খোলাহাটি, থানা- গাইবান্ধা সদর, জেলা- গাইবান্ধা অভিযোগ দাখিল করিয়াছেন।

উল্লেখিত অভিযোগ সমূহ তদন্ত করণের নিমিত্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক তদন্তকার্য স¤পন্ন করা হইবে। এমতাবস্থায় তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসাবে আপনার কার্যালয় হইতে একজন সহযোগী অধ্যাপক বা তদুর্ধ্ব কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিনিধির নাম প্রেরণ এবং উক্ত বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে তা জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, আমরা দু’জন ভুক্তভোগীর অভিযোগপত্রের অনুলিপি পাওয়ার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের কাছ থেকে তদন্ত কমিটিতে থাকার জন্য একজন প্রতিনিধি ও তার মতামত চেয়েছি। মতামত পেলে আমরা তদন্তের বিষয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেব।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, দুজনের দুটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতামত দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার ক্যাথল্যাব চালু হয়। সে সময় দেড় শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তবে কোভিডের কারণে তিন বছর এবং মেশিন নষ্টসহ বিভিন্ন কারণে মোট ছয় বছর ক্যাথল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। চলতি বছরের শুরুতে নতুন করে ল্যাবটি চালু হওয়ায় খুশি হন হৃদরোগী ও তাদের স্বজনরা। কারণ ধরে নেওয়া হয়েছিল চিকিৎসা ব্যয় কমবে। কিন্তু সেবার আড়ালে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ সচেতন মহল।