বৃষ্টির মতে ঝড়ছে শিশির,উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: হিমালয়ের কোলঘেঁষে থাকা পঞ্চগড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। প্রচন্ড শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। রংপুর.দিনাজপুর,গাইবান্ধা,কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট,নীলফামারী,পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কোথায়ও কোথায়ও সূর্যের আলো চোখে পড়ছে না। আগেভাগে শীত সেমেছে উত্তরের জনপদগুলোতে। গত কয়েকদিনের শীতে কাবু উত্তরাঞ্চলের মানুষ।

৭ ডিসেম্বর শনিবার তাপমাত্রা আরও কমেছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বনি¤œতাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটি শৈত্যপ্রবাহের খুব কাছাকাছি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৩ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় এক কিলোমিটার।

তিনি আরও বলেন,শনিবার যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। আবহাওয়ার ভাষায়,তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ,৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর যদি তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আরও নিচে নেমে যায়,তাহলে তাকে তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

দিনাজপুরে তাপমাত্রা ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে অবস্থান করছে। আর কিছুটা কম হলেই এই জেলার ওপর দিয়ে বইবে শৈত্যপ্রবাহ। যদিও শনিবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছিতে ১০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমালয়ের কোলঘেঁষে থাকা পঞ্চগড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। ঘন কুয়াশায় শহরের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। একই চিত্র গ্রামের সড়কগুলোতেও।

খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার তেঁতুলিয়া অফিস বলেন,শনিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। গতকাল সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, গতকাল দিনাজপুর জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ৪ ডিসেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে,ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসের ঝাপটা স্থানীয়দের জীবন আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষের আয় উপার্জনে ভাটা পড়েছে। কৃষকরাও রয়েছে শঙ্কার মধ্যে। শনিবার সকালেই উঠেছে সূর্য, তবে প্রখরতা একেবারেই কম। যদিও গতকালের চেয়ে হিমেল বাতাস কিছুটা কম প্রভাবিত হচ্ছে।

সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকার কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন,শীতের মৌসুমটা কৃষকদের জন্য কষ্টকর। বোরো বীজতলার কাজ চলছে। এভাবে শীত এবং কুয়াশা হলে বীজ থেকে অঙ্কুরিতের হার কমে যায়। তা ছাড়া সকালে মাঠে এসে কাজ করাটাও কষ্টের।

দিনমজুর শরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে কাজে আসতে বেশ কষ্ট হয়। রোদ না ওঠা পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারি না। আর বোরো বীজতলা পানি দেওয়া, টমেটো ক্ষেতে পানি দেওয়া, আলুক্ষেতে পানি দেওয়া সময়ে পানিতে হাত দেওয়া আরও বেশি কষ্টের। মির্জাপুর এলাকার ভ্যান চালক হাবিবুর রহমান বলেন, শীতের থেকে আরও বেশি কষ্টকর হলো হিমেল হাওয়া। যেদিন বাতাস বেশি হয় সেদিন আর কাজ করার অবস্থা থাকে না। যদি বাতাস হয়, তাহলে রোদ উঠলেও গরম লাগে না।

শীত মৌসুমটা আসলেই আমাদের জন্য কষ্টের। আবহাওয়া কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমে যাবে এবং ঘন কুয়াশার প্রাদুর্ভাব হবে। এই মাসেই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে জেলার ওপর দিয়ে। এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।