নদী পাড়ে বাড়ছে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড় তিস্তা নদী অতিথি পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্র

প্রকাশিত: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: প্রতি বছরের ন্যায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল রংপুর,নীলফামারী এবং লালমনিরহাট জেলার তিস্তা ও চরের ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। শীত প্রধান দেশগুলো থেকে একটু উঞ্চতার জন্য পাখিরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসছে। তিস্তা নদীর পাড়ে এখনো হাড় কাঁপানো শীতের দাপট জেঁকে বসেনি। তবে এরই মধ্যে দুর্লভ পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনায় তিস্তা যেন ফিরে পেয়েছে পাখি কেন্দ্রিক সৌন্দর্য।

বালুময় তিস্তার চরগুলো পরিযায়ী পাখির পদচারণায় মুখরিত হওয়াতে নদীর পাড়ে বাড়ছে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড়। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্ট থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার তিস্তা নদী ও নদীর চরে এখন বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এর কোনোটা হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিস্তা এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শীতের শুরুতেই নদীর পাড়ে পরিযায়ী পাখির দলবেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণি ও পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীরা। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থীসহ শৌখিন আলোকচিত্রীরাও।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়,প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর উভয় পার। এবারও পাখি আসছে। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা যাচ্ছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুক‚লে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে পাখিগুলো।

নদীতে থাকা শামুক,জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে পাখিগুলো। তিস্তাকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

সুদূর সাইবেরিয়া,মধ্য এশিয়া,দক্ষিণ চীন,লাদাখ থেকে এসব পাখি আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস,ছোট কান প্যাঁচা,লম্বা পা তিসাবাজ,জিরিয়া,টিটি,মনকান্ড,চখাচখিসহ ৫০ থেকে ৫৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে তিস্তায়। গত কদিন ধরে তিস্তা নদীর পাড়ে ছবি ও পাখির খোঁজে দিনভর ঘুরেছেন শৌখিন আলোকচিত্রীরা।

ক্যামেরার লেন্সে বালুচর তিস্তার কোথাও পানি কোথাও আবার সবুজের হাতছানি,এমন দৃশ্যের সঙ্গে উঠে আসে তিস্তার কিছু পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনাও। একেকটি ছবি যেন বলে দেয় পরিযায়ীরা তিস্তার পাড়ে আসছে দলবেঁধে ওড়াউড়ি ছোটাছুটি করতে।

আলোকচিত্রী আব্দুল হালিম বলেন,প্রতি বছরই দুর্লভ পাখি দেখতে এবং ছবি তুলতে তিস্তাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাই। এবার তিস্তায় গত বছরের চেয়ে বেশি পাখির আগমন ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগে ভোর হতেই পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙত বলেই কবির কবিতায় পাখির কথা উঠে এসেছে। কিন্তু আমরা আমাদের নদী, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি। পাখির বাসযোগ্য স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের জন্য আমাদের নদীমাতৃক দেশের সৌন্দর্য যেমন মন কাড়ে, তেমনি কষ্টও লাগে যখন দেখি শিকারির হাতে বন্দী পাখি।

তিস্তায় বিভিন্ন সময়ে আসা এসব দুর্লভ পাখির ছবি তুলেছেন শৌখিন আলোকচিত্রী লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মো. আমিনুল হক। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। তিস্তায় দুর্লভ পাখির বিচরণ স¤পর্কে তিনি বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত তিস্তায় কমবেশি পরিযায়ী পাখি আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে। তবে এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি পাখিদের অনুক‚লে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে পাখিগুলো।

তিস্তাপাড়ের গঙ্গাচড়ায় মনের আনন্দে পরিযায়ী পাখির বিচরণ ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করেছেন পাখিপ্রেমিরা। অনেকেই বলেন, শীত এলেই পাখিগুলো যে কোথা থেকে আসে জানি না। তবে শীতের চোট যত বাড়বে ততই পাখির আনাগোনা বাড়বে তিস্তায়। এত পাখির কলকাকলিতে মনটা ভালো হয়ে যায়। তখন পাখির মতো ওড়াউড়ি করে বেড়াতে মনটা ছটফট করে। পাখিরা যেমন মেঘের কোলে হেলে দুলে উড়ে উড়ে বেড়ায়, তেমনি ছবির খোঁজে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে শৌখিন আলোকচিত্রীরা।

ডিমলার উপজেলার শুটিবাড়ী জহিরুল ইসলাম বলেন,অনেক বছর ধরেই তিস্তা নদীর তীরে পাখি আসে। তিস্তা নদীর সঙ্গে অতিথি পাখিদের হৃদয়ের স¤পর্ক অনেক গভীর। শীত এলেই পাখির মেলবন্ধনে তিস্তাপাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। চর জেগে তিস্তার পেটে এখন তেমন পানি নেই। কোথাও হাঁটু পানি কোথাও বা কোমর পর্যন্ত। তবে বালুময় তিস্তার পাড়ভাঙা ক্ষতচিহ্ন যেমন অসহায়ত্ব জানান দিচ্ছে, তেমনি কোথাও কোথাও সামান্য পানিতে নৌকার মাঝি ছোটাছুটিও নজর কাড়ছে পাখিপ্রেমীদের। অনেকেই নৌকায় চড়ে পাখির বিচরণ দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, সচেতনতার অভাবে সামান্য স্বার্থের কারণে বা শখের কারণে অনেকেই শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিদের শিকার করে। এতে করে আমাদে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করছি। নদী ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশ অতিথি পাখির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু আইন দিয়েই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না। সর্বস্তরর মানুষকে এব্যাপারে সচেতন হতে হবে।