ঘুষ-দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই রাজউকের অথরাইজড অফিসার শেগুপ্তা শারমিন

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪

বর্তমান খবর,বিশেষ প্রতিনিধি(অপরাধ অনুসন্ধান)।। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামে কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায় সেই উচ্ছেদ হওয়া ভবন পুণরায় নির্মাণ হচ্ছে। এমন কর্মকান্ডে রাজউকের উচ্ছেদ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান কি সংষ্কার, নাকি অবৈধ লেনদেনের পথ শুগম করা? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে।

রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ইমারত বিধিমালার বাস্তবায়ন ও দেখভালের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের উপর। কিন্তু কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের জন্য এ দপ্তর আজ কলুষিত। রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য আর দুর্নীতির কারনে অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছে মালিকানাধীন ও ডেভেলপার কোম্পানিগুলো। নোটিশ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ভবনের অংশ বিশেষ অপসারন কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের অপকৌশলে পরিণত হয়েছে। ভবন নির্মান বিধিমালার ব্যাতিক্রম দেখিয়ে ভবনের একক মালিক কিংবা ডেভেলপার কোম্পানির মালিকদেরকে নোটিশের মাধ্যমে অফিসে ডেকে এনে অনিয়মকে মৌখিক নিয়মের ছাড়পত্র দেবার আশ্বাস দিয়ে ঘুষ লেনদেন যেন এখন তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

অভিযোগ আছে জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার শেগুপ্তা শারমিন, পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার ১৩৪/১, ১৪৬/ই/৩, ১৪৬/ই/৩/১ হোল্ডিংয়ের আগারগাঁও ৬০ফিট কলাপাতা রেস্তোরার পিছনে ও বিপরীতে থাকা ভবনগুলো বিগত ০৭/১০/২০২৪ তারিখে রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট সহ অভিযান পরিচালনা করলেও কোনো এক অদৃশ্য কারনে তা পূর্বের রুপে ফিরেছে। কিভাবে উচ্ছেদকৃত ভবনগুলো পুর্বের রুপে ফিরছে এ বিষয়ে নির্মানাধীন ভবনের মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা রাজউকের কর্মকর্তাদের দিকেই অভিযোগের ইঙ্গিত দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, আগে যারা ছিলেন তারা বর্তমান কর্মকর্তাদের থেকে কিছুটা ভালো ছিলেন। তিনি বলেন অথরাইজড স্যারকে জানিয়ে বাড়ির মালিককে অফিসে ডেকে এনে মিমাংসা করে দেয়ার পরেও শেগুপ্তা শারমিন সেই বাড়ি ভেঙে দেন।

কারন মিমাংসা করে দেয়ার অর্থ তার মনপুত হয়নি, জানিনা এইভাবে চাকুরি কতদিন করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার মিটিংয়ে কোনো ফাইল ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২,০০,০০০ টাকা অবৈধ লেনদেন ছাড়া কোনো ইমারত প্লান পাশ করেন না।

এই অর্থের লেনদেন হয় শেগুপ্তা শারমিনের ব্যক্তিগত সহকারী জানে আলমের মাধ্যমে। জানে আলমের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল আসলেই পাস হয় প্লান। কোন অথরাইজড অফিসারের সরকারিভাবে ব্যক্তিগত সহকারী থাকার সুযোগ আছে কিনা এমন তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে সরকারিভাবে কোন অথরাইজড অফিসারকেই ব্যক্তিগত সহকারী দেয়া হয় না। শুধু অথরাইজড অফিসারের ব্যক্তিগত সহকারী আছে এমন নয় ইমারত পরিদর্শকদেরও রয়েছে ব্যক্তিগত সহকারী। প্রশ্ন আসে এই ব্যক্তিগত সহকারীদের বেতন আসে কোথা থেকে? শেগুপ্তা শারমিনের ব্যক্তিগত সহকারীই এই লেনদেনের সাথে জড়িত নয় তার সাথে রয়েছেন সহকারী অথরাইজড অফিসার মামুনও।

রাজউক থেকে ইমারতের প্লান পাস করতে সরকারিভাবে যে অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় তারপরেও প্লান পাস করানোর জন্য মিটিং এর সময় দিতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। আর এই অর্থ না দিলে প্লান পাশ হয় না এমনই তথ্য পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে। তারা আরো বলেন যথা সময়ে ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলে পরবর্তীতে দ্বিগুণ ঘুষ দিয়ে প্লান পাশ করাতে হয় তাই প্লান পাশের মিটিংয়ের পূর্বেই অগ্রিম ঘুষের টাকা প্রদান করতে হয় অথরাইজ অফিসার শেগুপ্তা শারমিনের ব্যক্তিগত সহকারী অথবা সহকারি অথরাইজড অফিসার মামুনের কাছে।

উচ্ছেদকৃত ভবন গুলো পুনরায় আবার কিভাবে আগের রূপে ফিরে গেছে তার তদন্ত করতে গিয়ে উঠে এসেছে শেগুপ্তা শারমিনের এই দুর্নীতির চিত্র। উচ্ছেদকৃত ভবন গুলো আগের রূপে কিভাবে ফিরে গেল এই বিষয়ে শেগুপ্তা শারমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলি। এর কিছুক্ষণ পরেই উচ্ছেদ হওয়া এক ভবন মালিক প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে চান এবং তার এক প্রতিনিধিকে দেখা করতে পাঠাতে চান। এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায় কিভাবে বাড়ির মালিক প্রতিবেদকের ফোন নাম্বার পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে? এবং কিভাবেই জানলো কে এই বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে?

রাজউক জোন ৩ এর পরিচালক মো: সালেহ আহমদ জাকারিয়া কে এই বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে চলছে আরও তদন্ত।