রংপুরে প্রচন্ড গরমে গাছ থেকে আম ঝরে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্চে আম। গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরে রংপুরে কেনাবেচা হয়েছে দুই থেকে আড়াই শত কোটি টাকার আম। আর এসব আম উত্তরবঙ্গ ও রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও চাহিদা মেটায়। রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম স্বীকৃতি পেয়েছে জিআই পণ্য হিসেবে। তবে এবারের তীব্র খরায় আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষিরা। সারাদেশের ন্যায় রংপুরেও চলছে দাবদাহ। তীব্র গরমে জনজীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। টানা খরায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ফসলের মতো আম চাষেও।

আম চাষিরা বলেন, চলতি বছরে আমের মুকুল আসার সময় অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে বৃষ্টি হওয়ায় কালচে হয়ে মুকুল নষ্ট হয়েছে। অবশিষ্ট মুকুল থেকে যা আমের গুটি হয়েছে তা চলতি বৈশাখ মাসে টানা খরা, দাবদাহ ও পোকার আক্রমণে ঝরে পড়ছে। সেচ ও ¯েপ্র দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এতে আমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রংপুরের আমচাষিরা। রংপুরের সবচেয়ে বড় আমের হাট মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ সংলগ্ন আমের বাগানে আম গাছগুলোতে কম গুটি দেখা যায়। এছাড়া রংপুরের বিভিন্ন জায়গার কৃষকরা বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর আমের গুটি কম এসেছে এবং খরায় আমের গোড়া শুকিয়ে গুটি ঝরে পড়ছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রোস্তমাবাদ গ্রামের আমচাষি নিয়াজুল করিম বলেন, চলতি বছর বাগান লিজ নেওয়া সহ সাত বিঘা জমিতে আম বাগান করছি। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মুকুল আসার সময় বৃষ্টি হওয়ায় মুকুল কালো হয়েছে, গুটিও কম হয়েছে। এখন গরমে গোড়া শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। একই গ্রামে দশ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন ইয়াকুব আলী। তার বাগানে যেয়েও আমের গুটি কম দেখা যায়।

ইয়াকুব আলীর স্ত্রী বলেন, এতদিন আমের ভারে ডাল বেঁকে পড়ার কথা। কিন্তু এখন পাতা ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এ বছর বেশি আম ধরেনি। আম বাগান পরিচর্যা করছিলেন চাষি নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, এ বছর গাছে খুব বেশি একটা আম নেই। তার ওপর পোকার আক্রমণও বেশি। ¯েপ্র করিয়েও কাজ হচ্ছে না। আমচাষি আবু সাইদ বলেন, আমের প্রচুর মুকুল এসেছিল। শুরুতে বৃষ্টির সঙ্গে শিলা বৃষ্টি হওয়ায় তখন থেকে আমের ক্ষতি হওয়া শুরু হলো। এখন বাগানে আম কম। যা আছে সেটাও যদি ঝরে পড়া ঠেকানো যেত তাহলে কিছুটা লাভ হতো। আমচাষের জন্য এ সময়ে বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। একই সঙ্গে আমের উৎপাদনও কমবে।যে বাগানে সেচের ব্যবস্থা আছে সেখানে সেচ দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোতে তুলনামূলক বেশি আম দেখা যাচ্ছে। আর যে বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই, সে বাগানগুলো থেকে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। তীব্র খরায় আমের গুটি রক্ষায় প্রতিদিন গাছে পানি ¯েপ্র করার মাধ্যমে আমগাছ ধুয়ে দেওয়া সহ পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঔষধ ¯েপ্র করার পরামর্শ দিয়েছেন রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমের মুকুল আসার সময় পরপর কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় মুকুলের সমস্যা হয়েছিল। এখন সারাদেশেই দাবদাহ চলছে। এ সময় করণীয় হচ্ছে, বাগানে প্রচুর পরিমাণে সেচ দিতে হবে। যেসব চাষিরা নিয়মিত সেচ দিচ্ছে তাদের আমের গুটি পড়ে যাচ্ছে না। যারা একদিন সেচ দিচ্ছে আর এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ দিচ্ছে না তাদের এই সমস্যা হচ্ছে। আমের পোকা রোধে করণীয় স¤পর্কে তিনি বলেন, আমের বাগানে পোকা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ¯েপ্র করতে হবে। সঠিক ঔষধ ও পানির অনুপাত ঠিক রাখলে পোকা দমন করা সম্ভব। চলতি খরা মোকাবিলা করে আমের গুটি রক্ষা করতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।

সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গা আম চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন।