রংপুরে দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ ফাইল বন্দি

প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: রংপুরে ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশনের অধীনে দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের আবেদনের ১৬ বছর পেরিয়েছে। জমির অভাবে এখনো আলোর মুখ দেখেনি দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ। এতে করে বিভাগীয় নগরী রংপুরে পরিকল্পিতভাবে শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। হোঁচট খেতে হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের।

প্লট বরাদ্দ কমিটি ও উদ্যোক্তাদের বলেন, রংপুরে বিসিকের অধীনে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। জমির অভাবে দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের আবেদন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকায় যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে প্রতিনিয়ত কৃষিজমির উপর চাপ বাড়ছে। বিসিক সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নতুন শিল্পনগরী স্থাপনের প্রক্রিয়া দ্রæত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। উন্নয়ন ও আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি রংপুর বিসিক শিল্পনগরীতে। নানা সংকটের কারণে জায়গা হচ্ছে না নতুন উদ্যোক্তাদের।

১৯৮০ সালে ২০ একর জায়গা নিয়ে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় গড়ে উঠে বিসিক শিল্পনগরী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্পনগরীটিতে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বেহাল সড়ক, ভাঙা ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিরাপত্তার অভাব, অনুন্নত অবকাঠামোসহ নানা সংকট ব্যবসায় অন্যতম বাধা। এতে মোট ৮২টি প্লট রয়েছে। প্লটগুলোর আয়তন সর্বনি¤œ ৩ হাজার ১৫০ স্কয়ার ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার স্কয়ার ফুট। মোট শিল্প ইউনিট রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে চালু আছে ২০টি ইউনিট।

শিল্পোদ্যোক্তা বাড়লেও বাড়েনি প্লটের সংখ্যা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট না থাকায় এসব শিল্প ইউনিটকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে নিজ উদ্যোগে বর্জ্য অপসারণ করতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে কারখানা পরিচালনা ব্যয়। বিসিক শিল্পনগরীর ভেতরের সড়কগুলো খানাখন্দে ভর্তি। বর্ষাকালে বা সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে নানান সংকট ও সীমাবদ্ধতায় থাকা শিল্পনগরীর সংস্কার এবং বিকাশের জন্য বিভিন্ন সময়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা তুলে ধরা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শিল্পনগরী স¤প্রসারণে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগেও আলো পড়েনি। বিসিক শিল্পনগরীর কারখানার মালিকরা বলেন, গ্যাস সংযোগ থাকলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেত। অনেক সময় বিদ্যুৎ না থাকলে উৎপাদন বন্ধ থাকে।

নতুন শিল্পনগরী হলেও নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ হবে। রংপুরের ছোট-বড় শিল্পের বিকাশের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। বিসিক ২০০৪ সালে নগরীর অদূরে দমদমা এবং ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে প্রায় ৫০ একর জমি অধিগ্রহণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল। সেই আবেদন আলোর মুখ আর দেখেনি। পরবর্তীতে নতুন আরেকটি এলাকায় দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেটি এখনো পাস হয়নি। নতুন শিল্পোদ্যোক্তারা প্লটের জন্য এসে ঘুরে যাচ্ছেন।

তাদের প্লট দিতে পারছে না বিসিক কর্তৃপক্ষ। বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখায় ২০০৯ সালে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা সামসী আরা জামান কলি বলেন, জায়গার অভাবে তিনি চামড়া ও পাটপণ্য উৎপাদনে কোনো কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। তিনি দ্রæত দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলে নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে জমি বরাদ্দ দেওয়ার আহŸান জানান। তাহলে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলে নারীদের কর্মসংস্থানের পথ আরও সহজ হবে।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পোদ্যোক্তা আব্দুল মতিন বলেন, প্লটের অভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পারছেন না। নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। চেম্বার নেতৃবৃন্দ বলেন, বিসিকের দ্বিতীয় শিল্প নগরী স্থাপন কার্যক্রম সচল করা জরুরি। বিসিক শিল্পনগরীর ১ম প্লট শেষ হওয়ায় এ অঞ্চলের বর্ধিত জনসংখ্যার কর্মসংস্থান তৈরির চাহিদা পূরণে সমস্যা হচ্ছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, রংপুরে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী তৈরি করা প্রয়োজন। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী বলেন, বিসিকের জায়গা না থাকায় যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠায় প্রতিনিয়ত কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়ছে। দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, রংপুর জেলা প্রশাসন সদর উপজেলার পাগলাপীর পানবাজার এলাকায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। রংপুর বিসিকের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম এহেছানুল হক বলেন, বিসিক দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের জন্য জমির বিষয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছি। রংপুর বিসিককে স¤প্রসারণ করে সম্ভাবনাময় কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা গেলে রপ্তানি আয় বাড়বে। সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি, তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান।