বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: অর্ধযুগ পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যাথল্যাব চালু করা হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার ভরসার স্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ২০১১-১২ অর্থবছরে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার চালু করা হয় ক্যাথল্যাব। প্রথম দিকে কয়েক বছর ল্যাবটি ভালোভাবেই চলেছে। তবে বিভিন্ন সময় যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে বন্ধ হয়েছে এটি। মেরামতের পর আবার তা সচল হয়েছে। তবে ২০১৯ সালের পর থেকে বন্ধ ছিল ল্যাবটি। এ সময়ে হাসপাতালটিতে এনজিওগ্রাম, রিং স্থাপনসহ হার্টের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাও বন্ধ ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, পুরনো একটি এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে পুনরায় ল্যাবটি চালু করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে হার্টের এনজিওগ্রাম, হার্টের রক্তনালিতে স্টেন্ট (রিং) বসানো এবং পেস মেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আবারো শুরু হয়েছে। এতে হৃদরোগিদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে। হৃদরোগে আক্রান্ত গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর আব্দুল জব্বার (৬০) এ রোগের ব্যয়রহুল চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। রমেক হাসপাতালে পেসমেকার চালুর সংবাদ জানতে পেরে চিকিৎসা করানোর জন্য আসে হাসপাতালটি। চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন তিনি।
রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার ক্যাথল্যাব চালু হয়। সেই সময় দেড় শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপন করেছেন চিকিসকরা। তবে কভিডের কারণে তিন বছর এবং মেশিন নষ্টসহ বিভিন্ন কারণে মোট ছয় বছর ক্যাথল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নতুন করে ল্যাবটি চালু হওয়ায় হৃদরোগিদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমেছে। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম করতে খরচ হয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। তবে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। একেকটি রিং ক্রয় করতে ৭০ হাজার থেকে প্রকারভেদে দেড় লক্ষ টাকা লাগে। রিং বসাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে রিং বসানো চার্জ ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা এবং পেসমেকার যন্ত্রের দাম দেড় লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। পেসমেকার স্থাপনে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকার বেশি। সেখানে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।
৭ মার্চ ক্যাথল্যাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে এক রোগির এনজিওগ্রাম করা হয়। রোগির সঙ্গে আসা রংপুর চেকপোস্ট এলাকার মো. নুর আমিন বলেন, রোগি নিজাম উদ্দিন (৭০) রংপুরে ছেলের বাড়িতে বেডাতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসক তাকে বলেন, তার হার্টের অবস্থা ভালো নয়। দ্রæত এনজিওগ্রাম করাতে হবে।
এ ধরনের পরীক্ষা তার মতো নি¤œবিত্ত পরিবারের জন্য সত্যিই কষ্টকর। তবে যখন চিকিৎসকের কাছে তারা যখন জানতে পারেন রমেক হাসপাতালে পুনরায় কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব সচল হয়েছে। তখন তাকে সেখানে ভর্তি করানো হয়। এনজিওগ্রাম বাইরে থেকে করালে লাগত ১৭ হাজার টাকা। সেখানে রমেক হাসপাতালে লেগেছে দুই হাজার টাকা।
রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় ছয় বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব পুনরায় সচল করেছি। হার্টের সর্বোচ্চ এবং আধুনিক চিকিৎসা বলতে যা বোঝায় তা ক্যাথল্যাবে দেয়া সম্ভব। এখন রংপুরের হৃদরোগিদের আর ঢাকা অথবা দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কম খরচে এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা রমেক হাসপাতালে হচ্ছে। বর্তমানে একটি মাত্র পুরনো এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিদিন ক্যাথল্যাব চালু রাখার সক্ষমতা থাকলেও একজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে সপ্তাহে মাত্র দুদিন চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান ডা. মাহবুবুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ক্যাথল্যাব সবসময় সচল রাখার জন্য দুটি মেশিন এবং দুজন টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। যাতে একটি মেশিন খারাপ হলে অন্যটি দিয়ে কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাবে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। ফিলিপস কো¤পানির মাধ্যমে ল্যাবটি সচল করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যাতে ল্যাব সচল থাকে, এজন্য কো¤পানিটির সঙ্গে ক¤িপ্রহেনসিভ মেইনটেন্যান্স কেয়ার (সিএমসি) চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।