বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগিদের চিকিৎসার শেষ ভরসা ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। তবে সেখানেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। যেসব সরঞ্জাম আছে তার মধ্যে কয়েকটি অচল থাকায় আইসিইউর নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে আইসিইউ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তির কারণে মুমূর্ষু রোগির চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে বলে জানান রোগির স্বজনরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিটি শয্যায় অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউর সব সুবিধা মুমূর্ষু রোগিদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তবে শুরু থেকে ডায়ালাইসিস মেশিন না থাকায় কিডনি রোগির ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ৫ বছর ধরে অচল হয়ে আছে হার্টের ইকো মেশিন। দুই বছর ধরে নষ্ট বুকের পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন। এ অবস্থায় মুমূর্ষু রোগিদের বিকল্প উপায়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগির ব্যয়ও বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে সময় মতো আইসিইউতে বেড পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। কোনো বেড ফাঁকা হলেই ওই বেডের জন্য কমপক্ষে ৩ জন রোগির স্বজনরা তৎপর হয়ে উঠেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে বেড না পেয়ে বেসকারি হাসপাতাল রংপুর কমিউনিটি মেডিকেলে ভর্তি করা এক রোগির স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগির অক্সিজেন লেবেল কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে বেড ভাড়া, অক্সিজেন, ঔষধ এবং লাইফ সার্পোট নিয়ে তাদেরকে প্রতিদিন অনেক খরচ বহন করতে হচ্ছে। অপরদিকে রমেক হাসপাতালের আইসিইউতে তার রোগি ভর্তি থাকলে কোনো খরচ হতো না। যে ঔষধ হাসপাতালে পাওয়া যায় না শুধু সেই ঔষধ ক্রয় করতে হতো।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের খাজা মিয়াকে (৫৫) মুমূর্ষু অবস্থায় গত বুধবার রাতে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। স্বজনের ধারণা ছিল তার হার্টের রোগ হয়েছে। পরে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। তবে খাজা মিয়ার স্বজনরা জানতে পারেন তার হার্টে নয়, ফুসফুসে সমস্যা হয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা এলাকার রাজু আহমেদ বলেন, আমার শ্বশুর দুলা মিয়াকে মস্তিঙ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। খরচ বলতে ঔষধ ক্রয় করতে হচ্ছে। অথচ নগরীর কোনো বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে যদি তাকে রাখা হতো তাহলে প্রতিদিন শুধু আইসিইউ চার্জ দিতে হতো প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
তাছাড়া ঔষধসহ অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক রোগির স্বজন বলেন, হাসপাতালের প্রয়োজনীয় মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে আছে। এ কারণে বেশিরভাগ পরীক্ষা নিরীক্ষা হাসপাতালের বাইরে থেকে করতে হয়। ঔষধ যে খুব একটা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় তেমনটাও নয়। সরকারি হাসপাতালে রোগিকে ভর্তি করা হয় ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে এ আশায়। কিন্তু এখানে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায় না।
জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল আহমেদ বলেন, রংপুর বিভাগীয় হাসপাতাল হিসেবে রমেকে ৫০বেডের আইসিইউ দরকার। আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আইসিইউ পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। রমেক হাসাপাতালের আইসিইউতে বর্তমানে এসবের যথেষ্ট ঘাটতি আছে।
রমেক হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট প্রধান ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, এখানে শয্যা কখনো ফাঁকা থাকে না। এজন্য প্রাপ্ত আবেদন যাচাই করে রোগি ভর্তি করা হয়। সেক্ষেত্রে কোনো ফি দিতে হয় না। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, হাসপাতালে দুটি ইকো মেশিন রোগিদের সেবা দিচ্ছে। তবে আইসিইউ ইউনিটে আলাদা একটি ইকো মেশিন এবং পোর্টেবল এক্স-রে মেশিনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া আইসিইউর জন্য একটি ডায়ালাইসিস মেশিন চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ৫ শয্যা করে শিশু এবং গাইনি আইসিইউ ইউনিট চালুর কার্যক্রম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত হবে।