হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সবচেয়ে দুর্বল প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪

বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবীর ১৭৬ টি দেশে এক কোটির অধিক প্রবাসী কর্মী কর্মরত রয়েছে। তাদের কঠোর পরিশ্রমে মাধ্যমে অর্জিত রেমিটেন্স (বৈদেশিক মুদ্রা) দেশের উন্নয়ন তথা অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। প্রবাসীদের কল্যাণার্থে ১৯৯০ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড গঠিত হয়।

১৯৯২ সালের ১ জুলাই অনুষ্ঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের ১ম বোর্ড সভায় বোর্ডের অর্থায়নে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বিধিমালা, ২০০২ বিধি ৭(গ) অনুসারে বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের গমনাগমনকালে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আইন ২০১৮ ধারা ৮(৫) অভিবাসী কর্মীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিমানবন্দরে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য বহির্গমন ও প্রত্যাগত স্থানে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও পরিচালনা” কার্যকর করা হয়েছে। ফলে ওই আইনের ক্ষমতাবলে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ ও সেবামূলক কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক” পরিচালিত হচ্ছে।

নিরাপদ বিদেশ গমন এবং প্রত্যাবর্তনকালে বিমানবন্দরস্থ প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক” এর মাধ্যমে কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়। বর্তমানে দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট এবং শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম-এ স্থাপিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে কর্মীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সুত্রমতে, ১৯৯৫ সাল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জনবল পদায়ন করে সেবা প্রদান শুরু করে । প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে ওয়েজ আর্নারস কল্যাণ বোর্ড ও বিএমইটি থেকে জনবল পদায়ন করা হয়ে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স পরিচালনা শুরু হয় একজন উপ-সহকারী পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে পদায়ন করতে হয় । সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একজন সহকারী পরিচালক বা উপ-সহকারী পরিচালক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়ে আসছে। যেহেতু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৪ ঘন্টা সচল সেহেতু প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ককে সর্বক্ষণ সেবা প্রদানের জন্য কর্মকর্তাদের ডিউটি তিন শিফটে ভাগ করা হয়েছে । প্রতি শিফটে একজন করে শিফট ইনচার্জসহ ১৪ থেকে ১৫জন কর্মচারী ১২ ঘন্টা করে ডিউটি করেন। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোট ৬টি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম চলমান আছে। প্রবাসীদের সুবিধার্থে বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে এই ডেস্কগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধান ডেস্কটির অবস্থান : টার্মিনাল-২ এর বহির্গমন কনকোর্স হলে (৫নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ডান দিকে), দ্বিতীয় ডেস্কটি টার্মিনাল-১ এর দক্ষিণ পার্শ্বে বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে রাখা হয়েছে (ইমিগ্রেশন-১ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বামে), এছাড়া তৃতীয়টি টার্মিনাল-১ এর উত্তর পার্শ্বে বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে (ইমিগ্রেশন-২ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বামে) সেবা প্রদান করে চলেছে, ৪র্থ ডেস্কের অবস্থান টার্মিনাল-২ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার সংলগ্ন (ইমিগ্রেশন-৩ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বামে), পঞ্চমটি আগমন ইমিগ্রেশন হলে পর্যটন ডিউটি ফ্রি শপ এর দক্ষিণ পার্শ্বে এবং সর্বশেষটি রয়েছে আমদানি কার্গো ভবনে।

প্রধান ডেক্স বিদেশগামী কর্মীদের ফরমপূরণ ও বোর্ডিং কার্ড পাওয়ার সহায়তা করে থাকে। সৌদি হতে ছুটিতে আশা কর্মীদের ছুটির কাগজ সত্যায়ন করে থাকে। দাপ্তরিক আনুষঙ্গিক কাজ করা হয়। বিমানবন্দরে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে প্রবাস ফেরত ও প্রবাসগামী কর্মীকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিমানবন্দরের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন, প্রবাসগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের নিকট মন্ত্রণালয় ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাসমূহের কল্যাণমূলক সেবা, যেসব সেবা প্রদানে আর্থিক সংশ্লেষ আছে, সেসব সেবাগ্রহীতার নাম, মোবাইল নং ও পাসপোর্ট নম্বর এবং বিএমইটি’র ক্লিয়ারেন্স নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সংগ্রহ পর্যন্ত করে থাকে এই প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। এছাড়া বিদেশগামীদের প্রয়োজনে যেকোনো ডকুমেন্ট বিনামূল্যে প্রিন্ট ও ফটোকপি করে সহায়তা দেওয়া হয় এবং বিমানে চেক-ইন করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়।

অন্যদিকে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন ৩টি ডেস্কের মাধ্যমে বিদেশগামী অভিবাসী কর্মীদের স্মার্ট কার্ড/বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স যাচাই করা হয়। অনিয়মিত অভিবাসন রোধে বিএমইটির ছাড়পত্র না থাকা/ফেইক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে গমনকারীদের যাত্রাবিরতি/অফলোড করা হয় ।

আগামনী ডেস্ক এর মাধ্যমে প্রবাস ফেরত অসুস্থ কর্মীর সঙ্গে আগত সংশ্লিষ্ট দেশের চিকিৎসক/ নার্স/ অ্যাটেনডেন্টকে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে সাময়িকভাবে অবস্থানের ব্যবস্থা, প্রবাস ফেরত কর্মীর প্রয়োজনে বিমানবন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সহযোগিতা প্রদান এবং বিমানবন্দরে লাগেজ/মালামাল হারিয়ে গেলে এয়ারপোর্টের (Lost and Found) বিভাগকে অবহিত করে লাগেজ প্রাপ্তিতে সহায়তা, বিভিন্ন দেশ হতে নির্যাতিত/নিপীড়িত/প্রতারিত ফেরত কর্মীর অভিযোগ গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

কার্গো ডেস্কে প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর মৃতহে দেশে পৌঁছালে বিমানবন্দরস্থ প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে মৃতের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় প্রত্যেক মৃত কর্মীর পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। গুরুতর অসুস্থ/মানসিক বিকারগ্রস্থ কর্মীদের আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর এবং ৫০ হাজার টাকার এককালীন আর্থিক চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয় । গুরুতর অসুস্থ কর্মীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এই ডেস্কের মাধ্যমেও রেফারেল সার্ভিস প্রদান করা হয়। বিদেশে ফেরত অসুস্থ এবং প্রবাসে মৃত কর্মীর মরদেহ পরিবহনের জন্য বিমানবন্দর হতে সাশ্রয়ী মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া অসুস্থ কর্মীর সাথে আগত সহযোগী চিকিৎসক ও নার্সকে মানসম্মত হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়।

নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সেবা প্রদান কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন ও অভিবাসীদের সন্তোষজনক সেবা প্রদানের ব্যাপারে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা জানান বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবব্রত ঘোষ।

তিনি আরওজানান, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কোন অফিস রুম নাই। প্রধান ডেস্ক হতে উন্মুক্ত অবস্থায় অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।বিমানবন্দরে অন্যান্য সংস্থার ডেস্ক ছাড়া তিন থেকে চারটি অফিস রুম রয়েছে। অথচ হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক অন্যান্য সংস্থার চেয়ে বেশি সেবা দিয়ে থাকে। তিন শিফটে জনবল আনা নেওয়ার জন্য মাইক্রোবাস একটি রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ০৩ টি মইক্রোবাস দরকার।

প্রবাসী কল্যাণ ডেক চালু হওয়ার পর থেকে সরকারি পরিচালক বা উপসহকারী পরিচালক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক পরিচালক করে আসছে। সেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা পরিচালক দ্বারা পরিচালিত করছেন। যার ফলে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। একজন সহকারী পরিচালক সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক কোন সমস্যা দিতে পারে না তাকে ওয়েজআর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বা বিএমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান দিতে হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে একজন কর্মচারীর ০৪(চার) বছরের জন্য প্রদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানে অনেক কর্মচারী ৫(পাঁচ) থেকে ১০(দশ) বছর কর্মরত রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তাদের সেবায় অনীহা বা সেচ্ছাচারিতার মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে যার ফলে প্রবাসীরা সেবা থেকে বঞ্চিত। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রবাসীদের অর্জনকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন বিধায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচের নিয়ে আসু সমাধানে আসা উচিত। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে একজন পরিচালক/উপ-পরিচালক পদায়ন এবং প্রতি শিফটে একজন করে সহকারী পরিচালক পদায়ন করে অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করা উচিত। তাতে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কাজের গতিশীলতা বাড়বে। প্রবাসী কর্মীরা প্রকৃত সেবা পাবেন।