বর্তমান খবর,শেরপুর প্রতিনিধি: খেজুরের রস-গুড়ের জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর খ্যাতি থাকলেও গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুরে খেজুরের চাষ হয় না তেমন। ফলে খেজুরের রসও এখানে দুর্লভ। কিন্তু গত তিন বছর ধরে মিলছে খেজুরের টাটকা রস। আর এই রস পান করতে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরেই ভোজন রসিকরা ভিড় জমাচ্ছেন পাহাড়ি এলাকায়। এদিকে খেজুরের কাঁচা রস পানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা যাওয়ার পথে সড়কের দু’ধারে দেখা মিলবে এসব খেজুর গাছের সারি। পরিচর্যার ফলে ওই গাছগুলোতে মিলছে রস। রসের খবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলাজুড়ে। ফলে টাটকা খেজুরের রস পান করতে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরেই রসিক পিপাসুরা ছুটে আসছেন পাহাড়ি এই এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, খেজুর গাছগুলো অনেক বছর যত্নের অভাবে পড়েছিল। যদিও কয়েক বছর ধরে পরিচর্যা করা হচ্ছে। এই পরিচর্যার ফলেই রস এসেছে। এছাড়াও নন্নী এলাকার আরও বেশ কিছু বাড়িতে খেজুর গাছ থেকে রস নামানো হচ্ছে বলে জানান তারা। খেজুরের রস পান করতে গত এক সপ্তাহ ধরে ভোর থেকে ভিড় করছেন সৌখিন পিপাসুরা।
সম্প্রতি ভোরে মধুটিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভোর হওয়ার আগেই রস পিপাসুরা এসেছেন খেজুরের টাটকা মিষ্টি রস পান করতে। আর এসব রস মাত্র ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কথা বলে জানা যায়, যারা এসেছে বেশিরভাগই শেরপুর শহরের তরুণ-তরুণী।
কথা হয় শেরপুর পৌর শহরের রাজাবাড়ী মহল্লার কলেজ গেইট হতে আসা মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, খেজুর রসের কথা অনেক শুনেছি এবং ফেসবুকে অন্যান্য বন্ধুদের ছবি দেখেছি এখান হতে রস নিতে। কিন্তু কোনো দিন গাছ থেকে নামানো টাটকা রস পান করিনি। তাই আজ বন্ধু ও ছোট ভাইদের নিয়ে পান করতে আসলাম। যদিও শীতের সকালে বাইকে আসতে কষ্ট হয়েছে।
সজিব ও রাশেদুল ইসলাম রাজু দম্পতি এসেছেন রসের স্বাদ নিতে। তারা বলেন, যদিও খুব ঠান্ডা তবুও টাটকা রস আর ভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ খুব ভালো লেগেছে। এখানে রসের ব্যাপক চাহিদা, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
এ দম্পতি আরও বলেন, খেজুর রস সম্পর্কে বইয়ে পড়েছি। অনেক গল্প শুনেছি। আজই প্রথম গাছ থেকে নামানো টাটকা রস পান করলাম এটি খুবই চমৎকার অভিজ্ঞতা। এটি স্মৃতি হয়ে থাকবে।
এখানে আসা কয়েকজন তরুণ-তরুণী প্রথমবার গাছ থেকে নামানো টাটকা খেজুরের রসের স্বাদ গ্রহণ করেন এদিন। তাদেরকে রস টাটকা খেলে শরীরে ক্ষতি করতে পারে, এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অবগত নয় বলে জানান।
পান করার পরিমাণ সম্পর্কে এ পুষ্টিবিদ বলেন, একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। তবে এক গ্লাস খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস কিংবা কিডনি রোগীদেরকে খেজুরের রস না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
কাঁচা রস পানে কি কি ক্ষতি হতে পারে জানিয়ে তাসলিমা বলেন, খেজুরের কাঁচা রস পানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ২০২৩ সালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪ জনের ১০ জনই মারা গেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এ রসে নিপা ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে। নিপা ভাইরাস এক ধরনের ‘জুনোটিক ভাইরাস’, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে নিশাচর প্রাণী বাদুর বেশি ছড়ায়। আর খেজুরের রসে রাতে বাদুর বসে। রস খাওয়ার সময় বাদুর ভাইরাস ছড়ায়। এই দূষিত রস কাঁচা অবস্থায় খেলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়া নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার অনেক বেশি।
খেজুরের রস পান করা নিয়ে এ পুষ্টিবিদের পরামর্শ হচ্ছে, রাতে বা সকালে রস খেতে পারেন বা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন। তবে রস যেহেতু খোলা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে জীবাণু থাকতে পারে। এটা অস্বাস্থ্যকর। এ জন্য রস হালকা আঁচ দিয়ে বা ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়া ভালো। এ ছাড়া রস জ্বাল দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে খেতে পারেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, শেরপুর অঞ্চলের কৃষকদের খেজুর গাছ চাষের প্রবণতা কম। সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বেশি খেজুরের চাষ করেন। পর্যাপ্ত রোদ, কম আর্দ্রতা, কম বৃষ্টিপাত এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় চাষের জন্য উপযোগী।