বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিনিধি : রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হলো জাতীয় প্রবাসী দিবস। রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের জমকালো এ অনুষ্ঠানে যোগদেন এক হাজারেরও বেশি প্রবাসী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তারা বলেন,১৭০টি দেশে ছড়িয়ে প্রায় দেড় কোটি অনাবাসী বাংলাদেশীর কৃতিত্ব, অর্জন ও সাফল্যকে মর্যাদা দিতেই প্রতি বছরের ৩০ শে ডিসেম্বরকে ‘প্রবাসী দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাফল্যের সাথে কর্মরত, কৃতি, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার অংশীদার এবং দেশের জন্য নিবেদিতসহ নানা ক্যাটাগরিতে প্রবাসীদের সন্মান জানাবে সরকার।
যে হারে বিদেশে কর্মী যাচ্ছে,রেমিট্যান্স সেভাবে আসছে না। এর দায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নয় বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার মতে, রেমিট্যান্স আনার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
অন্যদিকে ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করে’, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রবাসীদের পাসপোর্ট এবং এনআইডি সেবা নিয়ে যে অভিযোগ আসে, সেটার দায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়। আবার বিদেশে গিয়ে চাকরি না পেলেও সেটার দায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়।
শনিবার(৩০ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।
দেশে প্রথমবারের মতো পালন করা হয় ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’। এর আগে গত বছর ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রবাসী দিবস হিসেবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, আমরা প্রচুর লোক বিদেশে পাঠাচ্ছি। গত বছর ১১ থেকে সাড়ে ১১ লাখ মানুষ বিদেশে গেছে। এবারও গত বছরের রেকর্ড ভেঙে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ যাবে বলে আশা করছি। যে হারে কর্মী বিদেশ যায়, সেই হারে রেমিট্যান্স আসছে না। এই রেমিট্যান্স আনার দায়িত্ব আমাদের নয়। রেমিট্যান্স আনার দায়িত্ব হলো অর্থ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমরা আমাদের কাজ করছি। এখন তারা তাদের কাজ করলে রেমিট্যান্স স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রবাসীদের সব সমস্যার সমাধানের জন্য দূতাবাসেই যেতে হয়। দূতাবাস ছাড়া তাদের আর কোনও জায়গা নেই। পাশাপাশি কর্মীরাও দূতাবাস থেকে সব ধরনের সেবা পাচ্ছে। কিছু অভিযোগ মাঝেমধ্যে আসে। চাহিদা বাড়লে অভিযোগ থাকবেই। সমাধানও সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়।
প্রবাসী শ্রমিক পাঠানোয় গত বছর রেকর্ড হয়েছিল। এ বছরও রেকর্ড হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, সামনের বছরও রেকর্ড হবে। কারণ সারা বিশ্বে কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। তবে আমরা দক্ষতা উন্নয়ন ট্রেন্ডে ফেল করছি। আমরা যত কর্মী পাঠাচ্ছি, তার অর্ধেকের বেশি অদক্ষ কর্মী। এটা পরিবর্তন করতে হবে। দক্ষ করেই পাঠাতে হবে। আর এটা রিক্রুটিং এজেন্সির ভূমিকা ছাড়া সরকার একা করতে পারবে না।
আমরা যদি প্রচুর পরিমাণে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারি, তাহলে অন্যান্য শ্রমবাজার আমাদের থেকে চেয়ে কর্মী নেবে। নতুন নতুন শ্রমবাজার রিক্রুটিং এজেন্সির চেয়ে মন্ত্রণালয় বেশি খুঁজে বের করছে এবং শ্রমবাজারগুলো খোলার চেষ্টা করছে। তবে নতুন শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, অদক্ষ কর্মীর প্রয়োজন নেই বলে জানান বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের লোকেরা তাদের পরিবারের জন্য দেশে টাকা পাঠায়। সেই সুযোগে সরকার রেমিট্যান্স পায়। তবে রেমিট্যান্স খুব বেশি নয়। রেমিট্যান্সে আমরা সপ্তম। আমাদের চেয়ে অনেক অল্পসংখ্যক লোকের দেশ ফিলিপাইন কিংবা মেক্সিকো অনেক রেমিট্যান্স পাঠায়, ভারত রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ। আমাদের রেমিট্যান্স কম আসার বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের বিরাট সংখ্যক দক্ষতাসম্পন্ন নয়।
তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করছে, অভিযোগ করা যায় এনআইডি তারা পান না। অভিযোগ করা হয়, বিদেশে গিয়ে অনেক প্রবাসী চাকরি পান না। মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাকরির অভাবে ৩৫ শতাংশ ফিরে আসে। কিন্তু এগুলোর সব দায় দেওয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পাসপোর্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইস্যু করে না। পররাষ্ট্র শুধু তথ্য বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়। তারা (স্বরাষ্ট্র) যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট তৈরি করে। যখন তারা (স্বরাষ্ট্র) তৈরি করে, পররাষ্ট্র সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করে। অথচ বাজারে কথা আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দিতে দেরি করে।
কর্মীদের বিদেশ গিয়ে চাকরি না পাওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে গিয়ে অনেক চাকরি পান না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাকরি জোগাড় করে না। বিএমইটি আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাতো, এ রকম একটা কোম্পানি থেকে চাহিদা এসেছে, ওদের যাচাই-বাছাই করা দরকার। সম্প্রতি এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খবরই দেয় না তারা। তারপর আমরা জানি না, এটা ভুয়া কোম্পানি নাকি তার কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ হতে হবে।
বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতকি সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে নির্বাচিত সিআইপিদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও সিআইপি কার্ড তুলে দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী।
নির্বাচিত সিআইপিদের (এনআরবি) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সরকার অনুমোদিত পরিচয়পত্র দেয়া হয়। দেওয়া হয় গাড়ির স্টিকার ও সার্টিফিকেট। সিআইপি কার্ডের মেয়াদ থাকাকালীন তারা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশপত্র পান এবং সরকার নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পারেন।
এছাড়াও সিআইপিরা দেশ-বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার পান। জাতীয় গুরুত্বপুর্ন দিবসগুলোতে বিদেশে থাকা বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পান তারা। সড়ক, বিমান, নদীপথে ভ্রমণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকিট পাবেন। হোটেল- রেস্তোরাঁ,হাসপাতাল চিকিৎসা ও আইনি সহায়তায়ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পাবেন।
আলোচনা সভা শেষে ২০২৩ সালের ৫৯ জন সিআইপি-কে (এনআরবি) সম্মাননা দেওয়া হয়। পাশাপাশি পাঁচ জন প্রবাসীর সন্তানকে শিক্ষবৃত্তি দেওয়া হয়।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সভাপতি আবুল বাশার ও সিআইপি এনআরবি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাতাবুর রহমান।