
বর্তমান খবর,চট্টগ্রামের প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের রাউজানে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রমরমা ভাবে বিক্রি হচ্ছে নকল আকিজ বিড়ি। রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের জগন্নাথ হাটে মামুন অ্যান্ড সন্স নামের দোকান মালিক মামুন মিয়া এই নকল বিড়ি সিন্ডিকেটের মূল হোতা। কুষ্টিয়া ও রংপুর থেকে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত আকিজ বিড়ি আমদানি করে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রাউজানের বিভিন্ন বাজারেও বিক্রি করছে এই মামুন মিয়া। তার দোকানে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, জরিমানা ও মামলা হলেও বর্তমানে সক্রিয়ভাবে নকল বিড়ি বিক্রি করে চলছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,ডাবুয়া এলাকার শামসুল আলমের ছেলে মো.মামুন মিয়া ডাবুয়া জগন্নাথ হাটে মামুন অ্যান্ড সন্স নামের দোকানে দীর্ঘদিন ধরে নকল আকিজ বিড়ি বিক্রি করে আসছে। কুষ্টিয়া ও রংপুর অঞ্চলে উৎপাদিত বিড়িতে জাল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে চট্টগ্রামের রাউজানসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। এই অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের মুলহোতা মামুন মিয়া। সে ওই সব অঞ্চল থেকে নকল আকিজ বিড়ি বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এর গাড়িতে এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাউজানে আমদানি করে। পরে এসব নকল পণ্য রাউজানের বিভিন্ন এলাকার দোকানে সরবরাহ করা হয়।
স্থানীরা জানান,জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত নকল আকিজ বিড়ি বিক্রির অভিযোগে পূর্বে মামুন অ্যান্ড সন্স নামের মামুন মিয়ার দোকানে বেশ কয়েক বার অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও আইনকে তোয়াক্কা না করে সে নকল বিড়ির ব্যবসা পুরা দমে চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুসারে ২৫ শলাকার ১ প্যাকেট বিড়ির দাম ১৮ টাকা। কিন্তু নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে এক প্যাকেট বিড়ি ৮-১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। নকল পণ্য বিক্রির ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
মামুন মিয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়কার সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং আওয়ামী নেতা ও ডাবুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান চৌধুরী ওরফে লালু চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে নকল বিড়ির ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নকল বিড়ি ব্যবসার মুনাফার একটি অংশ আওয়ামী নেতাদের একাউন্টে জমা হতো। মামুনে বিরুদ্ধে জুলাই ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
জগন্নাথ হাট বাজার কমিটির এক সদস্য জানান,নকল বিড়ি ব্যবসায়ি মামুনকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তবুও সে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত সকল ব্যবসায়িকে আইনের আওতায় আনা হোক।
জানা গেছে,চলতি বছরের ০৯ মার্চ পুলিশের উপস্থিতিতে মামুন মিয়ার দোকান থেকে ৩৪০ প্যাকেট নকল আকিজ বিড়ি উদ্ধার করা হয়। সেময় আসামির বিরুদ্ধে নকল বিড়ি বিক্রি অপরাধেরাউজান থানায় মামলার আবেদন করা হলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে নকল আকিজ বিড়ি বিক্রির অপরাধে মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রামে গত ১৩ মার্চ আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীর রাউজান এলাকা ডিলারশীপ ম্যানেজার আব্দুর রহমান মামলা দায়ের করেছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে,আকিজ বিড়ির ট্রেডমার্ক জাল করে নকল বিড়ি বিক্রির দায়ে ৪৮৩/৫০২ (২) ধারা ও সরকারি শুল্ক কর পরিশোধিত প্রতীক জাল জালিয়াতি করে সরকারি রেভিনিউ ফাঁকি দেওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫ এ (সি) ধারায় অত্র মামলা বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু পূর্বক শাস্তির বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।
পরবর্তীতে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই-তে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট ভ্রাম্যমান আদালত মামুন মিয়ার দোকানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় বিপুল পরিমান নকল বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা উদ্দার করে। আসামির দোকান ও গোডাউন সিলগালা করে এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে।
এ বিষয়ে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরী লিমিটেডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপক (ইনচার্জ) মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরী লিমিটেডের সুনাম নষ্ট করতে কিছু অসাধু চক্র নকল আকিজ বিড়ি তৈরি করছে। এই অবৈধ ব্যবসার আড়ালে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে একটি সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নকল বিড়ি বন্ধ করতে আমরা পুলিশ, র্যাব, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহযোগীতা কামনা করছি।