বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিনিধি : এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর ‘রুটিন দায়িত্ব’ পেয়েছেন শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠ আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ। গত রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন-১ শাখা থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এলজিইডির পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-২) গোপাল কৃষ্ণ দেনাথকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর ‘রুটিন দায়িত্ব’ প্রদান করা হয়। আর এ রুটিন দায়িত্ব পাওয়াতেই আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীরা উজ্জীবিত। তারা জয় বাংলা সেøাগান দিয়ে উল্লাস করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
এদিকে আওয়ামীপন্থি ও শেখ সেলিমের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পাওয়ার পর উজ্জীবিত আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীরা। হাসিনা সরকারের পতনের পর দেড় মাস ধরে যারা কোণঠাসা ছিলেন তারা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। এলজিইডিতে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেছেন আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন অবসরোত্তর ছুটিতে যান গত ১৭ অক্টোবর। আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথকে ‘রুটিন দায়িত্ব’ দেয়া হয়।
অভিযোগ আছে,আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গোপাল কৃষ্ণই ছিলেন এলজিইডির নাটের গুরু। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ, এলজিইডি শাখার এই সহ-সভাপতির বাড়ি বাগেরহাটে হলেও তিনি নিজেকে গোপালগঞ্জের মানুষ বলে পরিচয় দিতেন। শেখ সেলিম ও শেখ হেলালের সঙ্গে ভীষণ ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। এলজিইডিতে এই দুই শেখের ইচ্ছাপূরণই ছিল গোপালের প্রধান কাজ এবং এর বিনিময়ে এ অধিদপ্তরে ব্যাপক দাপুটে ছিলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীরা বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। সে সময় আরেক আওয়ামীপন্থি আলি আকতার হোসেন ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী। তিনি এলজিআরডি সচিবকে দিয়ে কৌশলে আওয়ামীপন্থিদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ জারি করান। যাতে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বদলি করতে পারবে না। তার মানে আওয়ামীপন্থি সুবিধাভোগীরা স্বপদে বহাল থাকবে।
সচিব বহাল থাকা অবস্থায় এলজিইডিতে কোনো আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীকে বদলি করতে দেখা যায়নি। বরং টাকার বিনিময়ে অনেককে প্রাইজ পোস্টিং দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট সচিব ও প্রধান প্রকৌশলকে ম্যানেজ করে বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর আলী ছিলেন এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য।
এলজিইডিতে দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাবঞ্চিত ও ডাম্পিং পোস্টিংয়ে থাকা ভুক্তভোগী প্রকৌশলীরা জানান, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বা নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না-থাকা কেউ প্রধান প্রকৌশলী হতে পেরেছেন, এমন নজির খুবই কম। অনেক মেধাবী কর্মকর্তা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হয়েই অবসরে গেছেন।
অথচ আওয়ামীপন্থি ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ প্রধান প্রকৌশলীর ‘রুটিন দায়িত্ব’ পাওয়ার পর তার অনুসারীরা প্রচার করছে যে, তিনিই প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। এজন্য আওয়ামীপন্থিরা নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সদ্য বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী আলি আকতার হোসেন এলজিইডিকে অস্থির অবস্থায় ফেলে গেছেন। একদিনও অফিস করতে পারেননি আন্দোলনকারীদের কারণে। এমতাবস্থায় আওয়ামীপন্থি ও শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন প্রকৌশলীকে প্রধান প্রকৌশলীর ‘রুটিন দায়িত্ব’ দিয়ে সরকার এলজিইডিকে আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেললো।