বর্তমান খবর,চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গায় একদিনে পৃথক ঘটনায় নারী-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার দামুড়হুদা,জীবননগর ও সদরের বদরগঞ্জ এলাকায় এসব মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ধান্যঘরা গ্রামে বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে মারা গেছেন ছোট বোন। জীবননগরে ধান ঝারতে গিয়ে এক নারী এবং সরোজগঞ্জের বদরগঞ্জ এলাকায় পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
দামুড়হুদার ধান্যঘরা গ্রামের শাহাবুদ্দিন ভিকুর বড় ছেলে আরজুল্লাহ (৫০)নিজ বাড়িতে স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এ খবর শুনে তার ছোট বোন উক্তন নাহার খাতুন (৪৩) ছুটে আসেন ভাইয়ের বাড়িতে। ভাইয়ের মৃত্যুতে কান্নাকাটির এক পর্যায়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনিও।
পরিবারের স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে বিকালে বাদ আছর নামাজের পর বড়ভাই আরজুল্লাকে ও ছোট বোন উক্তন নাহার খাতুনকে ঠাকুরপুর স্বামীর বাড়ি বাদ মাগরিবের পর জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন দুই ভাই বোন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, দুই ভাইবোনের একসাথে মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার ও এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জীবননগরে ধান ওড়ানোর সময় ধান ওড়ানো মেশিনে কাপড় পেঁচিয়ে খোদেজা খাতুন (৫২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার সুবলপুর গ্রামের রনক আলীর বাড়ীর উঠানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত খদেজা খাতুন ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের মৃত জাকারিয়ার স্ত্রী।
স্বজনরা জানান,নিহত খদেজা খাতুন গত দুই দিন আগে সুবলপুর গ্রামের রনকের বাড়িতে অসুস্থ ভাগনে (বোনের ছেলে) আশাদুলকে দেখতে আসে। ঘটনার দিন খদেজা খাতুন তার বোনের সহযোগিতা করার জন্য ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলারের সাথে স্টিলের বড় (খাঁচা ছাড়া) ফ্যান লাগিয়ে বাতাস দিয়ে ধান পরিস্কার করছিলেন। এ সময় অসাবধানতায় তার পরনের শাড়ী ফ্যানের সাথে পেঁচিয়ে শরীরের ডান দিকে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান জানান,এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বদরগঞ্জ আলিয়াপুর গ্রামে জুনায়েদ আহাম্মেদ নামে ২ বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুরে ডুবে তার মৃত্যু হয়। মৃত জুনায়েদ আহাম্মেদ কুতুবপুর ইউনিয়নের আলিয়ারপুর গ্রামের খোকনের নাতি ছেলে এবং যশোর জেলার নিউ মার্কেট এলাকার জামিল আহম্মেদের ছেলে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে শিশু জুনায়েদ আহমেদ খেলার জন্য বাড়ির পাশে যায়। এরপর থেকেই তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে অনেক খোঁজাখুজির পর শিশু জুনায়েদকে না পেয়ে বাড়ির পাশে পুকুরে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। এ সময় পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
জুনায়েদের নানা খোকন জানান,দুই ভাইয়ের মধ্যে জুনায়েদ ছোট। গত সোমবার জুনায়েদ যশোর থেকে মায়ের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। নাতী আমার অনেক চঞ্চল ছিল। সকালে খেলতে খেলতে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে পুকুরের পাড়ে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পার হলেও তাকে কোথাও না দেখে আমরা খুঁজতে শুরু করি। এক পর্যায়ে পুকুরের পানিতে তাকে ডুবে থাকতে দেখে দ্রুত উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় সে মারা গেছে। পরে জুনায়েদ মরদেহ দাফনের জন্য নিজ বাড়ি যশোরে নিয়ে যাওয়া হয়।