বর্তমান খবর, রংপুর ব্যুরো: রংপুর সদর উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনায় গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) কানিজ ফাতেমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে গুদামটি।
এদিকে গত শুক্রবার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা (সাময়িক বরখাস্ত), গুদামের লেবার সর্দার রবিউল ইসলাম ও নিরাপত্তা প্রহরী চঞ্চল সিং এর নামে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন রংপুর সদর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মণ। ওই গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নুরুন নবী বাবুকে।
রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে ওই গুদামের স্টকের গরমিল পান সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মণ। তিনি বিষয়টি জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিককে অবগত করেন। জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক গত ১ সেপ্টেম্বর গঙ্গাচড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রইচ উদ্দিনকে আহŸায়ক ও পীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমূল্য কুমার সরকারকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (কারিগরি) রিয়াজুল ইসলাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. তোজাম্মেল হোসেন ও পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ী সরকারি খাদ্যগুদামের খাদ্য পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম।
তদন্ত কমিটি গুদামের ১৪৪ মেট্রিকটন ৭৪৪ কেজি চাল, ৩০৭ কেজি গম ও ৫০ কেজির খালি বস্তা ৭ হাজার ৫০৯টি এবং ৩০ কেজির খালি ছোট বস্তা ২ হাজার ৩৫ টির হদিস পাননি। এ কারণে গত মঙ্গলবার গুদামটি সিলগালা করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন তারা। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত বৃহ¯পতিবার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম গুদাম কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, ১৪৪ মেট্রিকটন ৭৪৪ কেজি চালের সরকারি বাজার মূল্য (৪৫ টাকা কেজি দরে) ৬৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা, ৩০৭ কেজি গমের মূল্য (৩৩ টাকা কেজি দরে) ১০ হাজার ১৩১ টাকা।
এছাড়াও ৫০ কেজির খালি বস্তা ৭ হাজার ৫০৯ টির বাজার মূল্য (প্রতি বস্তা ৬৫ টাকা দরে) ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৫ টাকা এবং ৩০ কেজির খালি ছোট বস্তা ২ হাজার ৩৫ টির বাজার মূল্য (প্রতি বস্তা ৪০ টাকা দরে) ৮১ হাজার ৪০০ টাকা। এ হিসাবে দেখা যায়, গুদাম থেকে ৭০ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫৬ টাকার মালামাল আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই চাল, গম ও খালি বস্তা মিল মালিকদের মাধ্যমে গুদাম থেকে আত্মসাৎ করেছেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা। আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এর দায় উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদর্শক ও জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কারণ ওই চাল ও খালি বস্তা সরকারি গুদাম থেকে একদিনে সরানো হয়নি।
এত দিন তাঁরা কি গুদাম পরিদর্শনে যাননি? তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও পীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমূল্য কুমার সরকার বলেন, আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। তদন্ত কমিটির আহŸায়ক ও গঙ্গাচড়া উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রইচ উদ্দিন বলেন, আমরা তদন্ত করে মজুত ঘাটতি পেয়েছি। সেভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই গুদাম সিলগালা করার পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে গুদাম কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত করা কর্মকর্তাসহ তিনজনের নামে থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ওই গুদামের চাল, গম ও খালি বস্তা আত্মসাতের বিষয়টি অবগত হয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।