সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা

কুমিল্লা সংবাদদাতা || কুমিল্লায় সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন ফজলুল কবির নামের এক বিএনপি নেতা। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী ফজলুল কবির কুমিল্লা নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি পেশায় আইনজীবী।

মামলায় কুমিল্লার প্রাচীন সংবাদপত্র সাপ্তাহিক ‘আমোদ’–এর সম্পাদক বাকীন রাব্বি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা এবং পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক তৈয়বুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। বাকীন রাব্বি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মহিউদ্দিন মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিনেরও কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি। আর তৈয়বুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মাসুদ হাসান আজ বিকেলে বলেন, মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে মানহানি করার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন পিবিআইকে।

এ মামলায় পাঁচজনকে সাক্ষী করা হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর সাক্ষী হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওরফে ওয়াসিম এবং ২ নম্বর সাক্ষী কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু।

মামলার আরজিতে বলা হয়, ৫ সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় ‘বিএনপি নেতাদের সহায়তায় পালালেন ওরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার, তাঁর মেয়ে সাবেক সিটি মেয়র তাহসীন বাহার ওরফে সূচনা, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল হক, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদসহ মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ডজনখানেক নেতা ভারতে পালিয়ে গেছেন। গত ২১ আগস্ট বুড়িচং উপজেলার চড়ানল সীমান্ত দিয়ে এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভারতে পালান তাহসীন বাহার। তাঁকে সীমান্ত পর্যন্ত যেতে সহায়তা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। তাঁদের মধ্যে দুজনের আদ্যাক্ষর ‘আ’ এবং ‘ও’। একই কায়দায় তাঁরা বাহারকেও পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন বলে বিএনপির অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে।

মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, সংবাদটিতে কোনো সূত্র উল্লেখ না করে মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। মামলার বাদী একজন সক্রিয় বিএনপি নেতা হওয়ায় তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন।

বিকেলে এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী ওরফে আবুকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মামলার প্রধান সাক্ষী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওরফে ওয়াসিম বিষয়টি অবগত রয়েছেন বলে জানান।

সাপ্তাহিক আমোদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদে আমরা কারও নাম উল্লেখ করিনি। আমাদের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে নিউজে আমরা কয়েকটি অক্ষর দিয়েছিমাত্র। এতে করেই মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে, সুতরাং আমরা বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবিলা করব।’

এদিকে মামলার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে কুমিল্লার কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ মামলা প্রত্যাহার না হলে মানববন্ধনসহ তীব্র আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

মামলাটির নিন্দা জানিয়ে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক বলেন, ‘যে সংবাদের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে, সেটিতে কারও নাম নেওয়া হয়নি। আদ্যাক্ষরে লেখা হয়েছে। কেউ যদি মনে করতেন তাঁকে মেনশন করা হয়েছে, তবে সেটি তিনি পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে স্পষ্ট করার জন্য লিখিত অনুরোধ বা প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। সাংবাদিকদের বিচারের জায়গা প্রেস ইনস্টিটিউট। সেখানেও আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আদালতে মামলা করা হয়েছে, যেটি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কলুষিত করবে বলে আমি মনে করছি। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’