আমাদের ক্ষমতার পদে এমন লোক দরকার যারা আমাদের সংগ্রাম বোঝে
দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চান খুলনার ঋষিপাড়ার দলিত সম্প্রদায়
চন্দ্রমল্লিকা (ছদ্মনাম), ৪০ বছর, একজন গৃহিণী ও দর্জি। খুলনার ঋষিপাড়ায় তার স্বামী এবং তিন সন্তানের সাথে একটি ছোট বাড়িতে থাকেন। অন্তত একটি ভাল ঘরে মর্যাদার সাথে বসবাস করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন তার কিন্তু দলিত সম্প্রদায় হওয়ায় তারা তা করতে পারে না। ১০-১১ ফুট একটা ঘরে স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে থাকছে। ছোট খুপরিতে গাদাগাদি করে বাস করে স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ ৫ জনের এই পরিবার। তার স্বামী সেলুনে কাজ করেন। স্বামীর আয় তাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয় তাই সে সেলাইয়ের পাশাপাশি ঘরের কাজও করে। তাদের সমৃদ্ধিতে বসবাস করার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ নেই এবং বেশিরভাগ দলিত সম্প্রদায়ের একই অবস্থা। চন্দ্রমল্লিকা এবং তার প্রতিবেশী প্রায় ৭০টি পরিবার খুলনার গল্লামারীর এই ঋষি পাড়ায় বসবাস এবং প্রত্যেক পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা সামাজিক মর্যাদা একই। খুলনা শহরে দলিত সম্প্রদায়ের উপচে পড়া ভিড়। ঋষি পাড়ার অবস্থা বেশ করুণ। বর্ষাকালে ঋষি পাড়ায় জল জমে। বৃষ্টির দিনে ছাদ অথবা টিনের চাল দিয়ে অবিরত পানি পড়ে। ভারী বর্ষণে ড্রেনের ময়লা পানি ঘরে প্রবেশ করে। তখন কষ্ট ও দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। খুলনা সিটি কর্তৃপক্ষ আবাসন সমস্যার সমাধানে নানা প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও তা আর আশার আলো দেখে না। দলিত সম্প্রদায়ের বসবাসের এলাকা কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্বাচন করা হয় এবং কেউ যদি দলিত সম্প্রদায়ের বাইরে থাকতে চায় তবে তারা পারে না কারণ তাদের যথেষ্ট |
সম্পদ নেই। ঋষি পাড়ায় বসবাসের জন্য কাঁচা-আধাপাকা বেশ কিছু ঘরে রয়েছে। এখানে না আছে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, না আছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এ পাড়ায় ধর্মীয় উপাসনালয় কিংবা মন্দির নেই বললেই চলে। এখানের সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। চন্দ্রমল্লিকারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়, তারপর উধাও। কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাহায্য করার চেষ্টা করে, কিন্তু যথেষ্ট নয়। “আমাদের ক্ষমতার পদে এমন লোক দরকার যারা আমাদের সংগ্রাম বোঝে,” বলেছেন চন্দ্রমল্লিকা। দলিত জনগোষ্ঠী খাদ্য ও পুষ্টিমানের ঘাটতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আবাসন সংকট, শিক্ষার অধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, বাল্যবিয়ে, বহুবিয়ে, মাদকসহ নানা আর্থ-সামাজিক সংকটে আবর্তিত। উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে তাদের জন্য কোনো অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনা নেই। অন্যদিকে, সংখ্যায় কম হওয়ায় রাজনীতির মঞ্চেও তাদের দাবিদাওয়াগুলো জোরেশোরে উঠে আসে না। চন্দ্রমল্লিকার বড় ছেলে স্কুল শেষ করেছে, কিন্তু উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। চন্দ্রমল্লিকা বলছেন, তাদের পেশায় অন্য সম্প্রদায়ের মানুষজন প্রবেশ করার ফলে তাদের কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যথাযথ সুযোগ সুবিধার অভাবে চন্দ্রমল্লিকারা ধীরে ধীরে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন এবং নানা ধরণের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংবিধানের অধিকার; সবার জন্য সমান অধিকারের বাস্তবতা চায় চন্দ্রমল্লিকা। |
লেখকঃ জোসেফ মাহতাব
প্রতিষ্ঠাতা
আর্থকেয়ার ফাউন্ডেশন ও মানবাধিকার কর্মী।
Email : joseph.mahtab100@gmail.com