লাইফস্টাইল ডেস্ক || দিব্যি সম্পর্কের মধ্যে আছে কিন্তু বিয়ের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বেলায় পিছিয়ে যায়—এমন মানুষদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সম্পর্কের সব নিয়মই কম–বেশি পালন করছে, কিন্তু সম্পর্কটাকে ‘নাম দিতে’, জনসম্মুখে আনতে বা স্বীকৃতি দেওয়ার বেলায় দে ছুট! এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্কটাই টিকিয়ে রাখা বা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে অপর পক্ষের জন্য। আবার অনেক সময় অপর পক্ষ এহেন আচরণে বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। আপনি ভাবছেন, ‘আর কত? মানুষের সহ্যের তো একটা সীমা আছে!’ অথচ আপনি হয়তো জানেনই না, অপর পক্ষ বিশেষ একটা রোগে ভুগছেন। তাঁর প্রয়োজন চিকিৎসা আর কাছের মানুষের সহযোগিতা–সহমর্মিতা।
অন্যান্য ‘ফোবিয়া’র মতোই বিয়ে বা সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিতে চাওয়ার যে ভয়, এর নাম গ্যামোফোবিয়া। আপনি যদি গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বিয়ের কথা শুনলেই বা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাবে অন্যান্য ফোবিয়ার মতোই আপনার ভেতর কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
১. অস্থিরতা, বুকে ব্যথা
২. নিশ্বাস নিতে না পারার অনুভূতি
৩. ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
৪. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
৫. আতঙ্কে, ভয়ে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারা
৬. ঠিকভাবে কথা বলতে না পারা
৭. মাথাব্যথা
৮. হুট করে রেগে যাওয়া
৯. ঘামা, পানির পিপাসা লাগা
১০. কাঁপাকাঁপি
উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও গ্যামোফোবিয়ার রোগীরা বিয়ের কথা শুনলেই অনাগত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে পারেন। ওই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার জন্য উদ্যোগী হতে পারেন। মোদ্দাকথা হলো, ‘প্যানিক অ্যাটাক’ থেকে নানা নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে ছয় মাস পর্যন্ত হতাশা আর বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন ওই ব্যক্তি।
কেন হয় গ্যামোফোবিয়া?
গ্যামোফোবিয়ার পেছনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ রয়েছে। কী সেগুলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
১. অতীতের ট্রমা
ইমাদের বেলায় যেটি দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী গ্যামোফোবিয়ার সবচেয়ে বড় কারণ এটি-ই। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। অনেক সময় একটা সম্পর্কে প্রতারিত হয়ে ব্যক্তির ভেতর আবারও নতুন করে সম্পর্কে প্রতারিত হবার ভয় ঢুকে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে মা–বাবার বিচ্ছেদের কষ্ট বা বিষাক্ত সম্পর্ক দেখে সম্পর্কের প্রতি একধরনের নেতিবাচকতা বা ভয়ের অনুভূতি তৈরি হয়। এমনও হয়, সে হয়তো কাছ থেকে কোনো বন্ধু বা আত্মীয়কে সম্পর্কে জড়িয়ে ভুগতে দেখেছে। সেও একই অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে চায় না। একই কারণে অনেকে একবার বিচ্ছেদের পর নতুন করে বিয়ে করতে চান না।
২. সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতা
সম্পর্কে অস্থিরতার অনুভূতি যেন বর্তমান সময়ের তরুণরা অতীতের যেকোনো সময় থেকে আরও বেশি করে অনুভব করছেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ যোগাযোগের সহজলভ্যতা। এর ফলে তৈরি হয়েছে ‘সিচুয়েশনশিপ’, ‘ডাবলিং’, ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’, ‘ঘোস্টিং’, ‘বেঞ্চিং’, ‘ব্রেডক্রাম্বিং’ আরও কত কী! একটা সম্পর্কে অনিরাপদ বোধ করা বা অনিশ্চয়তার অনুভূতি থেকে অনেকের ভেতর তৈরি হয় গ্যামোফোবিয়া।
৩. পরিবারের সঙ্গে বন্ধনহীনতা
সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই পারিবারিক বন্ধন ততটা দৃঢ় নয়। যাঁরা নিজেরা পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ নন, তাঁদের পারিবারিক বন্ধনে আবন্ধ হওয়ার বিষয়ে একধরনের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ভয়, নেতিবাচকতা কাজ করে।
৪. জিনগত কারণ
বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়ার পেছনে জিনগত কারণও রয়েছে। হয়তো তাঁর মা–বাবা পরিবারের কাছের কেই গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ছিল। সেটি–ই জিনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মে।
৫. সামাজিক চাপ
আমাদের সমাজে একটা সম্পর্ক ভাঙাকে স্বাভাবিক চোখে দেখা হয় না। এর ফলে অনেকে সম্পর্ক ভেঙে গেলে কী করবেন, কীভাবে সেই পরিস্থিতি সামাল দেবেন, লোকে কী বলবে—এমন সব চিন্তা থেকেও সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিতে বা বিয়ে করতে ভয় পান।
কীভাবে সেরে উঠবেন?
আশার কথা হলো, গ্যামোফোবিয়ার সুচিকিৎসা রয়েছে। একজন সাইকোলোজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট ও এ রকম পেশাদারদের মাধ্যমে থেরাপি নিয়ে আপনি সহজেই এ রকম পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন। সম্পর্কে থিতু হওয়ার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। অনেক সময় আপনজনেরা, বিশেষ করে যাঁর সঙ্গে সম্পর্কে আছেন, তিনিও গ্যামোফোবিয়া কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে এই রোগ থেকে সেরে উঠতে আপনার আন্তরিকতা, ইতিবাচকতা ও নিরন্তর প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড