আবু সাঈদ হত্যা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যকে পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এসআই মো.আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করেছে। ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় রংপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড থাকা এই দুই পুলিশ সদস্যকে পিবিআই এর কাছে হন্তান্তর করা হয়।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (হেডকোয়ার্টার্স) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গত ১৬ জুলাই শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় গত ১৯ আগস্ট মামলা করা হয়। যার মামলা নম্বর-৩। ওই মামলায় আসামি এএসআই মো. আমীর হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রিকুইজিশনের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশন এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পিবিআই আবু সাঈদ হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন রংপুরের পুলিশ সুপার মো.জাকির হোসেন বলেন, এএসআই মো. আমীর হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এ ঘটনার পর থেকেই পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করে রাখা হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তাদেরকে মহানগর পুলিশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় প্রথমে পুলিশ বাদি হয়ে পর¯পর যোগসাজসে বেআইনি জনতাবদ্ধে সাধারণ ও মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করে গুরুতর জখম, চুরি, ভাঙচুর, ক্ষতিসাধন, অগ্নিসংযোগ ও নিরীহ ছাত্রকে হত্যার অপরাধে ১৪৩/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/ ৩৭৯/৪৩৫/ ৪২৭/৩০২/৩৪ ধারায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভ‚তি ভ‚ষণ রায়। এতে আসামি করা হয় অজ্ঞতানামা উচ্ছৃঙ্খল দুই থেকে তিন হাজার আন্দোলনকারী ছাত্রনামধারী দুর্বৃত্তসহ বিএনপি, জামায়াত-শিবির সমর্থিত নেতাকর্মীদের।

মামলার বিবরণে এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে জরুরি চিকিৎসার জন্য বিকাল ৩টা ৫মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত ছাত্রের নাম আবু সাঈদ। পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে যায়। এরপর আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী ১৮ আগস্ট রংপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা করেন।

ওই মামলাটি আদালতের আদেশে পরের দিন রেকর্ডভুক্ত করে আদালতকে জানান তাজহাট থানা। এরপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে। মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, পুলিশের ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন, পুলিশ সদস্য আমীর আলী, সুজন চন্দ্র রায়সহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে, গত ৩ আগস্ট এই দুই পুলিশ সদস্য এএসআই আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে বরখাস্ত করা হয়েছিল। মামলার এজাহারে নিহত আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী উল্লেখ করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদ নিরস্ত্র ও একা ছিলেন।

তিনি দৃশ্যত পুলিশের জন্য কোনো হুমকি ছিলেন না। তা সত্তে¡ও তাকে শটগান দিয়ে গুলি করা হয়। আবু সাঈদ পড়ে গিয়ে একাধিকার দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে একাধিকার গুলি করেন।

এজাহারে বলা হয় ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বরুয়ার নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। আবু সাঈদ পিছু না হটে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে যান। পুলিশের সামনে এ সময় প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান হেলমেট পরে এসে আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে গুলি করুন বলে নির্দেশ দেন।

অপর দুই আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মশিউর রহমান ও আসাদুজ্জামান মন্ডল পুলিশকে গুলি করতে প্ররোচিত করেন।

গত ১৬ জুলাই দুপুর পৌনে ২টায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে দুই হাত উঠিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে আবু সাঈদ বলেছিলেন, ওদের মারবেন না আমাকে গুলি করুন। এরপর পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায় আবু সাঈদ। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে।

মামলার বাদী রমজান আলী বলেন, আমার ভাইকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এই হত্যাকারে নির্দেশদদাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।