শিক্ষার্থীরা মেসে আসা শুরু করলেও কাটেনি আতঙ্ক

শিক্ষার্থীরা মেসে আসা শুরু করলেও কাটেনি আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে গত ১৭ জুলাই অংশ নেন গাইবান্ধার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা চড়াও হয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালায়। ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আহত হয়। এ ঘটনার জেরে আহতদের কর্মী-সমর্থকেরা গাইবান্ধার শহরের বিভিন্ন মেসে গিয়ে ছিনতাই, মারধর, টাকা লুট করে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে মেস ছাড়তে বাধ্য করেন।

শিক্ষার্থীরা মেসে আসা শুরু করলে এখনো সেই আতঙ্ক কাটেনি। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, এককেএস স্কুল এন্ড কলেজ, আহম্মেদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে শহরের কলেজ পাড়া, ফয়জারের মোড়, টাবু পাড়া, সুন্দর জাহান মোড়, পলাশপাড়া, থানা পাড়া, খানকা শরিফ ও স্টেশন এলাকায় কমপক্ষে শতাধিক মেস রয়েছে। এসব মেসে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর আবাসস্থল। মেসগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসা শুরু করছেন। তবে ওই সব এলাকা সুনসান নীরবতা বিরাজ করছেন। শিক্ষার্থীরা ভয়ে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন না।

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলা করে টাকা, মোবাইল ছিনতাইকারীরা প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের মধ্যে এখনো শঙ্কা কাটেনি। শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৭ জুলাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে শহরে ১নম্বর রেল গেটে আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁদের ধাওয়া করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন আন্দোলনকারীরা চড়াও হয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালায়।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, খান মোহাম্মদ জসিমসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়। বিষয়টি শহরে ছড়িয়ে পড়লে আহত নেতাদের কর্মী ও সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন মেসে গিয়ে মোবাইল ছিনতাই, মারধর, টাকা লুট করে তাঁদের হুমকি দিয়ে মেস ছাড়তে বাধ্য করেন।

কলেজপাড়া মেসে থাকা শিক্ষার্থী মো. রোমান মিয়া বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি আদায়ে সব শিক্ষার্থীর মতো আমিও গিয়েছিলাম। ১৭ জুলাই মেয়র মতলুবর রহমান আহত হওয়ার পর তাঁর নেতা-কর্মীরা কলেজ পাড়ার মেসগুলোতে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারধর করে মোবাইল ও টাকা নিয়ে মেস থেকে হুমকি দিয়ে বের করে দেন। সেই দিনের হামলার কথা মনে হলে এখনো রাতে ঘুম আসে না। মেয়রের লোকজন এর আগেও বিভিন্ন মেস থেকে চাঁদা নিয়েছেন। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। আবার মেসে গেলে তারা হামলা করে কিনা ভয়ে আছি।

থানা পাড়ায় মেসে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মেসের মালিক হুমকি দিয়েছেন আমাদের মেস থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। হাসিনা ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে নেতা-কর্মীরা ঘাপটি মারে আছে। এখনো ভয়ে আছি। যে কোন সময় তাদের সেই ভয়ংকর রুপে মাঠে নামতে পারে।

শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ৮আগস্ট মেসে আসছি। কলেজ পাড়া এলাকায় মেয়রসহ তার লোকজন রাত-দিন শোডাউন দিচ্ছে। আমাদের ভয় লাগছে। এর আগে আমাদের শিবিরের ট্যাগ লাগিয়ে পুলিশে ধরে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছে। মুখ খোলার সাহস পাইনি। নীরবে সহ্য করে গেছি।

গাইবান্ধা ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সমন্বয়ক মৈত্রীয় হাসান জয়ীতা বলেন, কোন কোন এলাকায় ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীর যা যা করছে সব আমরা জানি। এবিষয়ে মেয়র মতলুবর রহমানের সঙ্গে বসে কথা বলব ছাত্রদের ছিনতাই করা মোবাইল, টাকা উদ্ধারসহ তার লোকজন যেন মেসের শিক্ষার্থী ভাই-বোনের ওপর অত্যাচার না করে। তবে কয়েকবার বসার চেষ্টা করলে তিনি আমাদের ডাকে এখন পর্যন্ত সাড়া দেননি। ওই সমন্বয়ক আরও বলেন, ছাত্রলীগ বা কোনো নেতা-কর্মী যদি আমার আর কোনো ভাই-বোনের ওপর অপ্রীতিকর ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাজ পথে অবস্থান নেব।