রংপুরে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য -ড.ইউনূস

রংপুরে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য -ড.ইউনূস

প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের নিহত আবু সাঈদের করব জিয়ারত করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ রংপুরের আবু সাঈদের করব জিয়ারত ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করারর জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ১০ আগস্ট শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় হেলিকপ্টারে করে পীরগঞ্জে অবস্থিত রংপুর মেরিন একাডেমি মাঠে অবতরণ করেন।

সেখান থেকে তিন কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিয়ে সকাল ১১টার দিকে তিনি আবু সাঈদের বাড়ি বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে যান। তারপর আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন।

এসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবু সাঈদ এক পরিবারের সন্তান নয়, আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। নিহত আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার করা হবে। বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক সবার ঘরের সন্তান আবু সাঈদ।

শহীদ আবু সাঈদ আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সবার। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আবু সাঈদ যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন,আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। আবু সাঈদের মা সবার মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে হবে। কোথাও যেন কেউ কোনো গোলযোগ করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেন, আমরা সবাই এই মাটিরই সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি।ছোট ছেলে মেয়ে বড় হবে, তারা পড়বে আবু সাঈদের কথা। নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। পরে ড. ইউনূস আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আবু সাঈদের গ্রামের বাড়ী পীরগঞ্জ থেকে সড়কপথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের দেখতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এবং আহত শিক্ষার্থী ও জনতার সাথে কথা বলে তাদের চিকিৎসার খোজ খবর নেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। যে স্থানে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন সেই স্থান পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভরনে শিক্ষাক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন।

এসময় তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার শক্তির মাত্রা অনেক, সেই আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখতে হবে। মতবিনিময়ের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মা ইউনূস এর সাথে ছিলেন আরও দুই উপদেষ্টা। তারা হলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া। আবু সাঈদের বাড়িতে ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ –বিষয়ক স¤পাদক আখতার হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমš^য়ক সারজিস আলমও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর পীরগঞ্জে আগমন উপলক্ষে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। সড়কে, মোড়ে, মাঠে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা কঠোর পাহারায় রয়েছেন। পুরো এলাকায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করা হয়।

তিনি ৮ আগস্ট শপথগ্রহণের পর শনিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে আসেন। আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমš^য়ক ছিলেন।

গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে প্রকাশ্যে পুলিশ গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। ১৭ জুলাই বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।