ড. ইউনূসের বিবৃতি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল: ওবায়দুল কাদের
ড. ইউনূসের বিবৃতি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল: ওবায়দুল কাদের
ডেক্স রিপোর্ট:
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ড. ইউনূস একটি বিবৃতিতে বাংলাদেশের ওপর হস্তক্ষেপ করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। এ ধরনের বিবৃতি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। এটা আন্তর্জাতিক আইনেরও চরম লঙ্ঘন। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) বাংলাদেশে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দেশে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এই কার্যক্রম বেআইনি। তাঁর এ আহ্বান বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছোট করেছে। দেশকে তিনি খাটো করেছেন। তিনি একজন নোবেলজয়ী। তাঁর পক্ষে কি এটা শোভা পায়?
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যখন মামলা চলমান, তখন তিনি এ ধরনের কার্যক্রম করছেন, যা ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘এ থেকেই বোঝা যায়, চলমান বিচার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ড. ইউনূস এ ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
সাম্প্রতিক আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ব্যর্থতা মূল্যায়ন হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা দুর্বলতাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা সম্ভব হচ্ছে না। সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১৮ জুলাইয়ের আগে দলের এক কর্মসূচিতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি—এটি দলটির সাংগঠনিক ব্যর্থতা কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক কিছু আছে, সেখানে মূল্যায়ন হতে পারে, আত্মসমালোচনা হতে পারে। কিন্তু সহিংস কর্মকাণ্ড চলেছে। এখানে তার শেষ, এ মুহূর্তে বলা যায় না। আমাদের প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন হবে। সেটার মাধ্যমে সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক আছেন। সারা বাংলাদেশে সতর্ক থাকতে বলেছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, এই মুহূর্তে চলমান সহিংসতা দৃশ্যত স্বাভাবিক মনে হলেও তা শেষ হয়ে যায়নি। জঙ্গিগোষ্ঠীর যে নীরবতা এখন, এ নীরবতা তাদের পুনঃ আক্রমণের পূর্বসংকেতও হতে পারে।
সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে কি না, এমন প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নারকীয় যে তাণ্ডব, এর সঙ্গে জনপ্রিয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা তো অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াইনি। আমরা নিরস্ত্র, নিরস্ত্রদের ওপর সশস্ত্রদের হামলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো নিরস্ত্র, সেখানে সশস্ত্র হামলা হয়েছে। এর সঙ্গে জনপ্রিয়তার কোনো সম্পর্ক নেই।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় ‘হত্যাযজ্ঞ’ তদন্তে বের হয়ে আসবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের সকলকে ভাবতে শিখিয়েছে। আন্দোলন দেখতে গিয়ে শিশু মারা গেছে গুলি খেয়ে। গুলিটা কোথায়? মাথায়! জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ শিশু। গুলিটা কোথায়? মাথায়! মিছিল দেখতে গিয়ে শিশু গুলিবিদ্ধ। গুলিটা কোথায় লেগেছে? মাথায়! এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির তদন্ত করা অবস্থায় আমরা তাদের প্রভাবিত করতে পারি না। তবে এ রহস্য উন্মোচন করা দরকার।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের কাছে খবর আছে যে আন্দোলনকারীদের মিছিলে জঙ্গিগোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করে খুব কাছ থেকে অনেককে গুলি করেছে।
দেখামাত্র গুলির নির্দেশের বিষয়ে ‘ভুল বার্তা’ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কোনো আন্দোলনকারীর ওপর গুলি চালানোর নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কখনো দেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনী নিয়োগ, কারফিউ জারি। এরপর তারা কোথাও একটা গুলি ছুড়েছে, সে ধরনের খবর জানা নেই। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত হবে, চিহ্নিত করা হবে হত্যাকারীদের।
শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবনে হামলাসংক্রান্ত তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে গণমাধ্যমে এসেছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি বললাম যে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, জঙ্গিগোষ্ঠীর আরেকটা লক্ষ্যস্থল ছিল গণভবন। আমি এটা বলিনি কখনো শুধু গণভবন রক্ষার জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ধরনের হেডিং আপনারা কেউ দিয়ে থাকলে, সেটা আমার প্রতি একটা অন্যায় বলে মনে করি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য, জননিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘ক্ষমতার জন্য লন্ডনের পলাতক (তারেক রহমান) গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কা স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দখল করার টার্গেটও ওই রাতে ছিল। যদি কারফিউ জারি না হতো এই প্ল্যান তাদের ছিল। শ্রীলঙ্কা স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করা, অভ্যুত্থানের ওপর রাইড করে হাওয়া ভবনের যুবরাজ ক্ষমতা দখল করত। এটাই তো তাদের পরিকল্পনা।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বিজ্ঞান সম্পাদক আবদুস সবুর, কার্যনির্বাহী সম্পাদক তারানা হালিম প্রমুখ।