বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিনিধি :
অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম। চাকরি করেন আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে পঙ্গুতে। সকাল থেকে দুপুর পর্ন্ত হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য সময় দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সময় দেন মাত্র দুই এক ঘণ্টা। তিনি হাসপাতালে আসেন মূলত রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজ করতে।
অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে তিনি বেশ কয়েকজন লোককে পঙ্গু হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে দালাল হিসেবে রেখেছেন। প্রথমে রোগীর সঙ্গে কথা বলেন দালাল চক্র। এরপর ডাক্তার নিজেই কথা বলেন রোগীর সঙ্গে। তারপর রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যান শ্যামলীতে অবস্থিত একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘদিন রেখে চিকিৎসা করিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন রোগীকে।
ওই হাসপাতালটি কয়েকজন ব্যক্তির দ্বারায় পরিচালিত হয়। হাসপাতালটির নাম বিডিএম হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিক সেন্টার। এই হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম সকাল দুপুর বিকেল এবং রাতেও বসেন ও অপারেশন করান। এর বাইরে তিনি রংপুরেও একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সপ্তাহে দুই দিন বসেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার পর একজন রোগীকে দীর্ঘদিন প্রাইভেট হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করান। এরপর রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত বিল হাতে ধরিয়ে দেন। একদিকে হাসপাতাল থেকে অপারেশনের টাকা পান অন্যদিকে রোগীকে সরবরাহ করা বিভিন্ন অপারেশন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি থেকেও অতিরিক্ত বিল থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ডা. আব্দুস সালাম রোগী ভাগিয়ে আনার সময় বলেন, সময় কম লাগবে, টাকাও লাগবে কম। অথচ আসার পর গলাকাটা বিল ধরিয়ে দেন। পরিশোধ করতে না পারলে সামান্য কিছু কমিয়ে দিয়ে সিমপ্যাথি নেন। এরপর রোগীর স্বজনরা নিরুপায় হয়ে টাকা পয়সা ম্যানেজ করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হয়।
নিয়ম মতে, জাতীয় অর্থ পেডিক হাসপাতালে প্রতিদিন তার অপারেশনের কথা থাকলেও এক সপ্তাহে তিনি একটি অপারেশনও করেন না। অথচ ওই একই সপ্তাহে প্রাইভেট হাসপাতালে তিনি ৩০টি অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। বিডিএম হাসপাতালের একজন সহকারী ম্যানেজার এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (২৯ মে) রাজধানীর হুমায়ুন সড়কের বিডিএম হাসপাতালে বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজনদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ওসমান গণি নামে এক স্বজন বলেন, তার ছেলের সাইকেল চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হলে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে আসেন। সেখানে একদিন ছিলেন। কিন্তু কোনো ডাক্তার না আসায় অস্থির হয়ে পড়েন। এদিকে ব্যথায় ছেলের কাতরানো দেখে অস্থির বাবা নানা জনকে ডাক্তার আসার কথা জানতে চান। পরে একজন তাকে পরামর্শ দেন বিডিএম হাসপাতালে গেলে ছেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। না গেলে এখানে ডাক্তার কোন দিনই আসবে না। পরে তার কথা মতো বিডিএম হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছেলেকে নিয়ে। বিডিএম হাসপাতালে কথা হয় ডা. আব্দুস সালামের সাথে। ডাক্তারের আশ্বাসে ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে কয়েকদিন ধরে। এরইমধ্যে ৮০ হাজার টাকা চলে গেছে। আরও ৩০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই দিন নাসির উদ্দিন নামে আরেক স্বজনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন তার ভাইকে নিয়ে। ভাই আকবর আলী মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট হয়ে দুই হাত ভেঙ্গে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ডাক্তারের ঠিকমতো সেবা না পেয়ে দালালের খপ্পরে প্রথমে মোহাম্মদপুরে এক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে টাকা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আরেক দালালের মাধ্যমে বিডিএম হাসপাতালে আসেন। সেখানে কথা হয় ডা. সালামের সাথে। সালামের আশ্বাসে এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় অপারেশন হয়। এখন কত দিন থাকতে হবে তা বলেনি ডাক্তার। এই চিকিৎসাটাই সরকারি হাসপাতালে পেলে হয়তো অর্ধেক টাকাতেই চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেতো। ডাক্তারদের গাফিলতির কারনেই সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নাটোর থেকে এসেছেন নজির উদ্দিন। তিনি তার বাবাকে নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো এসেছেন বিডিএম হাসপাতালে। এক বছর আগে তিনি উড়ুর মধ্যে রড ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এক বছর ধরে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। এরপর বাবাকে নিয়ে আব্দুস সালামের কাছে পুনরায় নিয়ে এসেছেন। সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তার জানিয়েছেন, রডে মরিচা ধরেছে। এটি পরিবর্তন করাতে হবে। এজন্য এক লাখ ২০ টাকা খরচ হবে। অথচ এর আগে তিনি বলেছিলন, আর কোনো সমস্যা হবে না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আব্দুস সালাম বলেন, আমি নিয়মিত অফিস করছি। ছুটির দিন ও সন্ধ্যার দিকে প্রাইভেট চেম্বার করে থাকি। তাছাড়া হাসপাতালেই বেশির ভাগ অপারেশন করে থাকি। রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এই বিষয়ে ডা. আব্দুস সালামকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো আমতা আমতা করে অস্বীকার বরে বলেন আপনি আসেন বসে কথা বলবো।