বর্তমান খবর,বিশেষ প্রতিনিধি : কোভিড ১৯ এর কারণে ২০২০ সালে কাজ হারিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। ফেরত আসা অধিকাংশ কর্মী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন।অর্থ কষ্ট সহ নানা সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রত্যাগত কর্মীদের জরুরী ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে এবং তারা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রবাসীরা এতদিন আমাদের দিয়েছেন এবার আমরা তাদের দিব তার এই মূল্যবান দিকনির্দেশনার উপর ভিত্তি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড রেইজ প্রকল্পে তিরিশ টি অফিস ওয়েলফেয়ার সেন্টার নামে কার্য
ক্রম ৬৪ টি জেলায় চালু করে।
প্রত্যাগত অভিবাসী ফিরে এলেও পাশে আছি এই শ্লোগান বুকে ধারণ করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ৩০ শে জুলাই ২০২৩ চালু করে ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায় মূল কনসালটেন্ট আই ও এম এবং সহযোগী কনসালটেন্ট ব্রাক, ওকাপ, ওয়ারবি, রামরু, bnsk, কেএসইউএস, এবং প্রত্যাশী এই সাত প্রতিষ্ঠান recovery and advancement of informal sector employment (RAISE) reintegration of returning migrants প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদেরকে পুন একত্রিকরণের লক্ষে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজন সহায়ক প্রকল্প বাস্তবায় করছে।২৮শে জুলাই ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একনেক সভায় রেইজ প্রকল্প অনুমোদিত হয় । বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২৭ অক্টোবর ২০২১ সালে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ প্রকল্প মোট অর্থের পরিমাণ ৪২৭. ৩০৩ ৫ কোটি টাকা যার মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ঋণ সহায়তা বাবদ ৪২৫ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২. ৩০৩৫ কোটি টাকা প্রদান করে।
শুরুতে প্রকল্প চালু হতে একটু বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও পরবর্তীতে ৩০ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে একযোগে ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার ভার্চুয়াল উদ্বোধনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শুভ সূচনা করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি।
কোভিড ১৯ এ প্রত্যাগত ২০২০ সালে ফেরত আসা ৫ লক্ষ কর্মীদের সেবার চিন্তা করে প্রকল্প চালু হলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পরবর্তীতে জানুয়ারি ২০১৫ সাল হতে ফেরত আশা কর্মীরা এই সেবার আওতাধীন হয়েছে।
এ প্রকল্পর উপকারভোগী কর্মী সংখ্যা ২ লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২ লক্ষ কর্মীকে কাউন্সিলিং ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হবে। ২৩৫০০ জন কর্মীকে আরপিএল এর আওতায় সনদ প্রদান করা হবে। আর্থিক প্রনোদনা জন প্রতি ১৩৫০০ টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। বিগত দিনে বিদেশ হতে যেসব কর্মীরা দেশে ফেরত আসছেন তাদের সঠিক ডাটা সরকারের কাছে নেই। রেইজ প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্য সমৃদ্ধ ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।৮ বিভাগ ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার দ্বারা ৬৪ টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ৩০ জন সহকারী পরিচালক দিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এই বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে কনসাল্টেন্ট আইওএম এবং সহযোগী আরো সাতটি কনসালটেন্ট। সেন্টার গুলোতে ৭৮ জন কাউন্সিলর, ৩০ জন ডেপুটি কাউন্সিলর, ৩০ জন অফিস সহকারী, ৩০ জন অফিস সহায়ক দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে । এত কম সংখ্যক জনবল দ্বারা এতগুলো প্রতিষ্ঠানে সেবার মান ধীরগতিতে হচ্ছে। তাছাড়া এই প্রকল্পের কাজ ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রসারিত। কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যানবাহন প্রয়োজন হলেও তা এখনও দেওয়া হয়নি। এর কারণে কাজের গতি খুবই ধীর।
ওয়েলফেয়ার সেন্টার কর্তৃক সেবাগুলো হচ্ছে প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মী নির্বাচন ও নিবন্ধন , ওরিয়েন্টেশন, মনো- সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদান, রেফারেলের আওতায় কর্মীদের দক্ষতা ও উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা, বিদেশ ফেরত কর্মীদের আর পি এল এর আওতায় দক্ষতা সনদ প্রদান, নির্বাচিত কর্মীদের ক্যাশ ইন্সেন্টিভ প্রদান, প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের তথ্যসম্বলিত ডাটাবেজ তৈরি এবং সুযোগ- সুবিধার জন্য কার্ড প্রদান।
কর্মীদের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স সহ পাসপোর্ট বা আউট পাস অথবা রিটার্ন টিকিট কিংবা বোর্ডিং কার্ড নাহয় ফেরত আসার সংক্রান্ত অন্য প্রমাণক এবং জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন। এখন পর্যন্ত ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলোতে এক লক্ষ এর উপরে নিবন্ধন হয়েছে। ১০ হাজারের উপরে রেফারেল করা হয়েছে। ৪০০০ কর্মীকে ১৩৫০০ টাকা করে সরাসরি তাদের ব্যাংকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। ৫০০ এর উপরে কর্মীদের আরপিএল করানো হয়েছে।
সর্বাধিক গুরুত্বের সহিত ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলো স্থানীয় জনপ্রশাসন, জনপ্রতিনিধ, অন্যান্য সরকারি বা আধাসরকারি অফিস, এনজিও সাংবাদিকদের নিয়ে সেমিনার ও ওরিয়েন্টেশন করে যাচ্ছে।
এ সকল সেবার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক অফিসে রেফারেল করলেও প্রবাসী ফেরত কর্মীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। আবার অনেক প্রবাসী কর্মীরা এবিষয় সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উচিৎ রেইজ প্রকল্পের ব্যাপক হারে প্রচার ও প্রচারণা করা ।
সেবাগুলো প্রবাস ফেরত কর্মীদের মাঝে পৌঁছতে হলে অবশ্যই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়দের একান্ত সুদৃষ্টি দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল ও যানবাহন সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় এত বড় মহতি সেবা নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।