৮ বিভাগে প্রবাসীদের কল্যাণে ৮টি ভবন নির্মাণ করা হবে- সিলেটে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী
বর্তমান খবর,বিশেষ প্রতিনিধি : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন তার মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের জন্য ব্যাপক কাজ করছে। বিভিন্ন দেশে থাকা এবং প্রত্যাগত অভিবাসীদের জন্য মন্ত্রণালয় অধীনে কাজ করছে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা। বাস্তবায়ন করছে বিভিন্ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অধীনে বিদেশ হতে মৃতকর্মীর লাশ এলে বিমানবন্দরে মৃতর পরিবারকে লাশ পরিবহন ও দাফন বাবদ তাৎক্ষণিক ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য বাবদ তিন লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। অসুস্থ পঙ্গু বিভিন্ন রোগের ফেরত কর্মীদের চিকিৎসা সাহায্য বাবদ দেড় লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী সন্তানদের প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হয়। প্রবাসীদের বীমা সেবার আওতায় আনা হয়েছে। কোন প্রবাসী মৃত্যুবরণ করলে ২ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
বিদেশ থেকে যারা ফিরে আসেন তাদেরকে রেইজ প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিং কাউন্সিলিং ডাটাবেজ তৈরি ও এককালীন অফেরত যোগ্য ১৩৫০০ টাকা প্রদান করা হয় এবং তাদের পুনরায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা হয়।এসব কার্যক্রম প্রচার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মানুষকে জানতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রবাসীদের পাশে রয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
গত শনিবার ৯ মার্চ বেলা ১২টায় সিলেটের খাদিমনগর এলাকায় একটি রির্সোটে কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীর কল্যাণে বহুমুখী কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সেমিনার recovery and advancement of informal sector employment (RAISE) reintegration of returning migrants শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশী জনের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন দেশের মানুষকে বিদেশে নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তারিই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রবাসে রয়েছেন। প্রবাসীরা মহান মুক্তিযোদ্ধা সহ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশকে রেমিটেন্স পাঠিয়ে সহায়তা করছে। তাদের মূল্যায়ন করতে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর বুঝলাম এখানে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার সময় বলেছেন তুমি প্রবাসী, প্রবাসীদের জন্য কাজ করার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। যাও তাদের জন্য কাজ কর। তারই পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন প্রবাসীরা আমার ভাই কারণ তারা দুর্দিনে এগিয়ে আসেন।
তিনি বলেন- দেশের আটটি বিভাগে প্রবাসীদের কল্যাণে আটটি ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিএমইটি,ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক টিটিসি ও বোয়েসেল যারাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের সেবা প্রবাসীদের ভবন থেকে দেওয়া হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ২০১৮ এর আইনে নতুন অফিস স্থাপনের অনুমোদন রয়েছে। প্রবাসীদের কল্যাণার্থে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ রয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা আসলে যে কোন সময় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড অফিসে স্থাপন করতে প্রস্তুত।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী এনডিসি এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাইরুল আলম, আইওএম এর চিফ অব মিশন ( বাংলাদেশ) আবু সত্ত্বার এসোয়েভ, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান মশিউর রহমান (পিপিএম বার পিপিএম),সিলেট রেঞ্জের মেট্রোপলিটন কমিশনার মোহাম্মদ জাকির হোসেন খান( পিপিএম) এবং সিলেট চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিএর সভাপতি তাহমিন আহমেদ।
আরো বক্তব্য রাখেন রেইজ প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব সুরেন্দ্রনাথ সাহা, আইওএম এর স্পেশালিস্ট নাসরিন জাহান।
মতবিনিময় সভায় সিলেট বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সেবা প্রাপ্ত ও অংশীসুধীজনের মতামত গ্রহন করা হয় অনুষ্ঠানে।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মৃত প্রবাসী ৩টি পরিবারকে আর্থিক সাহায্য বাবদ তিন লক্ষ টাকা করে তিনটি চেক এবং তিনটি পরিবারকে তিনটি প্রতিবন্ধী ভাতার চেক প্রদান করেন প্রধান অতিথি।
উল্লেখ্য প্রবাস ফেরত কর্মীর পুনরায় একতি করণের লক্ষে ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩০ টি জেলায় ৩০ টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ৩০ টি সেন্টারের মাধ্যমে ৬৪ জেলায় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লক্ষ কর্মী নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং প্রদানের পর প্রতি কর্মীকে ১৩৫০০ টাকা প্রনদোনা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান পেতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
এ প্রকল্পের কাজ গত বছরের ৩০ জুলাই থেকে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে এবং চলবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।