বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: রংপুর বিভাগের আট জেলায় কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। কৃষিজমি, জনবসতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া নেই প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রও। এসব ইটভাটা প্রতিনিয়ত পরিবেশদূষণ করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষিসহ জীববৈচিত্র্য। বিপন্ন হয়ে পড়েছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পরিবেশ সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহল। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে জনবল সংকটের কারণে অভিযান চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর।
এদিকে রংপুর ও বরিশাল বিভাগের অবৈধ ৯২২টি ইটভাটা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এক স¤পূরক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন। এর আগে দেশের অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রিট পিটিশন করেন।
আদালত রুল জারি করে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করতে সব বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বরিশাল ও রংপুর বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভাগ দুটি স¤পূণরূপে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে এইচআরপিবির পক্ষে এক স¤পূরক আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে ২৫ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, রংপুর জেলাসহ বিভাগের আট জেলায় ১ হাজার ৩৭টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ১৯৬টি। অবশিষ্ট ৮৪১টি ইটভাটা সরকারি নিয়মনীতি না মেনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। যার মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। আর সবচেয়ে কম রয়েছে পঞ্চগড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরের ২৪৭টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ২১৫টি।
বৈধ মাত্র ৩২টি। লালমনিরহাটে ৫৬টির মধ্যে ২৯ অবৈধ এবং বৈধ ২৭টি, দিনাজপুরে ২৬৩টির মধ্যে অবৈধ ২০০ আর বৈধ ৬৩টি, কুড়িগ্রামে ১১২টির মধ্যে ৭৯টি অবৈধ, পঞ্চগড়ের ৫০টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ৩৯টি, ঠাকুরগাঁওয়ের ৮০টির মধ্যে ৭৩টি অবৈধ। এ জেলায় বৈধ ইটভাটা মাত্র সাতটি। নীলফামারীর ৫৬টির মধ্যে ৫০টি অবৈধ, বৈধ মাত্র ছয়টি এবং গাইবান্ধার ১৭৩টি ভাটার মধ্যে ১৫৬টিই অবৈধ। এছাড়া আইন অমান্য করে এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ।
এতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সচেতন মহল বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েলই হচ্ছে ইটভাটাগুলোর মাটির উৎস। যার কারণে একদিকে হাজার হাজার একর জমি পতিত হয়ে কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমছে কৃষিজমি।
কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনি ভেঙে দিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও ইটভাটা প্রস্তুত হয়ে যায়। এসব ইটভাটার ছাইমিশ্রিত ধোঁয়া আম, কাঁঠাল, লিচুর মুকুল ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (উপ সচিব) সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, বিভাগজুড়ে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স¤প্রতি একটি ইটভাটার মালিক ও ম্যানেজারকে কারাদন্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অভিযান আরও জোরদার করা হবে।