বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আল আজাদের মামলায় অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি বিশ্বব্যাংকের সিইডিপি প্রজেক্টে হরি লুট, দুদকের তদন্তে ধীরগতি-
বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিনিধি : বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আল আজাদের মামলায় হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিএমপির শাহ আলী থানা পুলিশকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আল আজাদ বর্তমান খবরকে বলেন, ‘আমি ২০১২ সালে মার্কেটের জায়গা ক্রয় করি। এরপর ময়েজ উদ্দিন এমপির আসলামুল হকের স্বাক্ষর জাল করে আমাকে চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে প্রথমে আমি ভয় পেয়ে যাই। পরে এমপির সহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এমপির সঙ্গে কথা বলে আমাকে জানান, আসলামুল হক ওই স্বাক্ষর করেননি। পরে এমপি ময়েজ উদ্দিনকে ডাকবেন বলে জানিয়েছিলেন আমাকে। এর মধ্যেই তিনি মারা গেলেন।
আমি সুবিচারের আশায় সি.এম.এম আদালত,ঢাকা-১৯ এ মামলা দায়ের করি ২০২১ সালে। বিবাদি (১) অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন,হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজ,মিরপুর-১। বিবাদি (২) মোঃ মজিবর রহমান,স্বত্বাধীকারী টেকনোপল কন্সট্রাকশন কোং লিঃ । বিবাদি (৩) মোতালেব হোসেন,হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজ মিরপুর-১ । এর নামে সিআর মামলা নং ও ধারা সিআর মামলা নং ১২৭/২০২১,ধারা ৩৪/৪০৬/৪১৮/৪১৯/৪২০/৪২৩/৪২৪/৪৬৫/৪৬৭৪৭৩/৪৭৭/৪৮৩/৪৮৯ পেনাল কোড।
বিজ্ঞ আদালত ২৪/০৬/২০২১ ইং তারিখে মামলার তদন্তের দায়িত্ব অর্পন করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)কে । পিবিআই থেকে মামলাটি তদন্তভার দেওয়া হয় সাব ইন্সপেক্টর মোঃ মেহেদী হাসানকে। গত ০৩/০২/২০২২ ইং তারিখে ইন্সপেক্টর মোঃ মেহেদী হাসান (১) বিবাদী অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার উদ্দেশ্য একাধিক স্বাক্ষর জাতিয়াতির বিষয়ে কোন রকম তদন্ত না করেই তদন্তে অসঙ্গতি রেখে বিবাদী (১) অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে বিবাদি (২) ও বিবাদী (৩) কে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আমি আদালতে নারাজী আবেদন করি। বিজ্ঞ আদালত আমার আবেদন গ্রহন করে মামলাটির পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য গত ১২/০৬/২০২২ ইং তারিখে সিআইডি ঢাকা”কে নির্দেশ প্রদান করেন। সিআইডি কর্তৃক অত্র সিআর মামলাটি অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য স্বারক নং ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম/মিরঃ/কোর্ট/১১০-২০২২/৩১৬,তাং ২৮/০৭/২০২২ ইং তারিখে এসআই মাইনুল ইসলামকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। এসআই মাইনুল ইসলাম অনুসন্ধানভার গ্রহন করে মামলার এজাহার পযালোচনা করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সময় এ এস পি জিয়াউর রহমান বিবাদী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে মামলা প্রত্যাহার ও বিবাদীর সাথে মিমাংসা করতে চাপ প্রয়োগ করেন।
আমি বাধ্য হয়েই সিআইডি প্রধানের শরণাপন্ন হয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের অনুরোধ করি। আমার অনুরোধে এবং সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে সিআইডি প্রধান স্বারক নং –ঢাকা মেট্রো পশ্চিম/মিরঃ/কোর্ট/১১০-২২০২২/৩১,তাং ১২/০১/২০২৩ তারিখে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসাবে উপ- পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিউল্লাহ্ রায়হান গত ১৭/০১/২০২৩ তদন্তভার দায়িত্ব দেন । উপ- পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিউল্লাহ্ রায়হান তদন্ত শেষ করে এসপি জিয়াউর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন । এসপি জিয়াউর রহমানের বিবাদীর সাথে মিমাংসার প্রস্তাবে আমি রাজী না হওয়ায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আটকিয়ে রাখেন।
তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গড়িমসি কারায় আদালত তদন্ত সংস্থা সিআইডি ঢাকাকে ১১/০৭/২০২৩ তাগিদপত্র দেন তারপরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত ব্যাখ্যা সহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিশেষ পুরিশ সুপার ( ফরেনসিক বিভাগ ),বাংলাদেশ সিআইডি,মালিবাগ,ঢাকা এর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন ।
অবশেষে গত ১১/০৯/২০২৩ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিউল্লাহ্ রায়হান ব্যাখ্যা সহ স্বাক্ষর স্ক্যান সংক্রান্ত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামত সংবলিত মূল প্রতিবেদন( ৩) পাতা জুডিশিয়াল নথিতে সংযক্তির জন্য আদালতে প্রেরন করেন। সিআইডির দীর্ঘ তদন্তে সই জালিয়াতির প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিরিন আক্তারের সই নকল করে জাল দলিল বানিয়ে আলাউদ্দিন আল আজাদের দোকান দখল চেষ্টার প্রমাণ পাওয়া যায় সিআইডির তদন্তে। এরপর সিআইডির উপপরিদর্শক মো. শফিউল্লাহ রায়হান আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে সিআইডি জানিয়েছে, আসলামুল হকের নামে দেওয়া ‘খ ও খ-১’ অনুস্বাক্ষর দুটি স্ক্যানকৃত জাল স্বাক্ষর। আর অধ্যক্ষ শিরিন আক্তার নামীয় ‘গ, গ-১ থেকে গ-৪’ অনুস্বাক্ষর দুটি স্ক্যান করা জাল স্বাক্ষর। সিআইডির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, দুটি স্বাক্ষরের নিচে যে তারিখ লেখা রয়েছে, সেটিও একই ব্যক্তির দেওয়া। দুটি লেখার মধ্যকার ৯টি বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া যায় বলেও ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।
উল্লেখ্য বিষয় হলো মামলার প্রথম তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ মেহেদী হাসান অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের কাছে ম্যানেজ হয়ে তাকে বাঁচাতে প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের সাবেক এ পিএস মাহবুবুর রহমান লিটনের কাছ থেকে লিখিত নেন যে এ পি এস লিটন সংসদ সদস্য আসলামুল হক তার সামনেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন । মাহবুবুর রহমান লিটনের লিখিত চিঠির পরিপেক্ষিতে মামলার (১) বিবাদী অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে অব্যহতি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ মেহেদী হাসান। এখন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ দ্বারা প্রমানিত প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্বাক্ষর অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন জাল করেছেন। সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায় মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়া মাহবুবুর রহমান লিটনকে মামলার ০৪ নম্বার আসামী করা হয়েছে ।
হযরত শাহ আলী গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. ময়েজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কলেজের অর্থ লুটপাট, দুর্নীতি, জবরদখল, সিল—স্বাক্ষর জালিয়াতি, শিক্ষকদের টাকা আত্মসাত, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উৎকোচ, ভুয়া বিল—ভাউচার, অনৈতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন এই অধ্যক্ষ। প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্বাক্ষর জালিয়াতি ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ—সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের সিল—স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাত করেছন অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন ।
বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বর্তমান খবরকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের কলেজ এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইপিডি)তে আমি কোন ভাবে জড়িত ছিলাম না। ভাউচারে যেই সিল—স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে কোনটাই আমার না। আমার স্বাক্ষর—সিল জালিয়েতি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি দুদক এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছে।
সিইডিপি সুত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের কলেজ এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) এর চার কোটি টাকা বরাদ্দ পায় হযরত শাহআলী মহিলা কলেজ। এই প্রজেক্টের এক কোটি ৫০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন। যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ—সহকারী প্রকৌশলী ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল মোঃ মিজানুর রহমানের সিল—স্বাক্ষর পদবী উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সিইডিপি প্রজেক্টের সাথে কোন ভাবি যুক্ত ছিলেন না। জালিয়াতির এই ঘটনা দুদক তদন্ত করছে- ইতি মধ্যে উপ—সহকারী প্রকৌশলী ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল মোঃ মিজানুর রহমানের সিল—স্বাক্ষর পদবী জালিয়াতির কথা দুদকে হাজির হয়ে জানিয়েছেন । কিন্তু তদন্ত খুব একটা এগোচ্ছেনা । তদন্ত বিষয়ে জানতে তদন্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি ।
এরআগে, ২০০৮ সালের নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও জিআর ইনস্টিটিউটে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ ও অর্থ আত্মসাৎসহ বেশকিছু অভিযোগে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।এরপর ২০১২ সালে রাজধানীর মিরপুরে হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন তিনি। ২০১৬ সালে দুর্নীতির দায়ে কলেজ কমিটির সভাপতি তৎকালীন সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিছু দিন পর আবারও স্বপদে বহাল হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এই অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুন হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক জানান, আমার কলেজের অধ্যক্ষের অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অনেক জায়গায় অভিযোগ করেছি। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ডিসি অফিসে, ২০২০ সালে ২৭ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), একই বছরের ৯ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছেও অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ২০১৯—২০ অর্থবছরের অডিটে অধ্যক্ষ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪০ টাকা। তার ক্যাশবুকে ব্যয় লেখা আছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬ হাজার ২২০ টাকা। এখানে ১১ লাখ ৪২০ টাকার গড়মিল। এই গরমিল কেন ও কী কারণে হয়েছে? তিনি (অধ্যক্ষ) নির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।
শিক্ষকদের টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে এই সহকারী অধ্যাপক বলেন, আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক পরীক্ষার ডিউটি করে থাকি। সেই সব পরীক্ষার ডিউটির ফি নিয়ম অনুযায়ী কলেজের ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার কথা। সেই টাকা শিক্ষকদের মধ্যে বন্টনের দায়িত্ব অধ্যক্ষের। কিন্তু আমাদের ডিউটির টাকা অধ্যক্ষ তার নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখেন। সেখান থেকে টাকা উত্তোলন করে তার ইচ্ছেমতো শিক্ষকদের দিচ্ছেন। যদি আমাদের বিল আসে এক লাখ টাকা। মাত্র ৩০ হাজার টাকা শিক্ষকদের দিয়ে বাকি টাকা নিজে নিয়ে নেন অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন।
এছাড়া ভুয়া বিল—ভাউচার, পণ্য না কিনে বিল তৈরিসহ কলেজ মার্কেটে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে দোন বরাদ্দ দিয়েছেন ময়েজ উদ্দিন।হযরত শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্স দোকানের সংখ্যা ৬০০টিরও বেশি। এসব দোকানের মালিকানা পরিবর্তন করতে গেলে ময়েজ উদ্দিন দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নেন। জমিদারি খাজনা দিতে গেলেও হয়রানির হতে হয়। এমনকি মার্কেটে প্ল্যান বহিভূতভাবে অনেকগুলো দোকান নির্মাণ করে তা বিক্রি করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন।
মাল্টিমিডিয়া অনিয়ম-অপকর্ম দূর্নীতিবাজ হযরত শাহ্ আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে গত ৫ জুন দূনীতি দমন কমিশন (দুদক ) এর সহকারী পরিচালক(অনু ও তদন্ত) আশিকুর রহমান সেগুন বাগিচা দুদক এর প্রধান কাযালয়ে জিঞ্জাসাবাদের জন্য তলব করেন । এর আগে একই দিন সকাল সারে নয় টায় স্বাক্ষী দিতে দুদকে আসেন ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান। জিঞ্জাসাবাদ শেষে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের কোন বক্তব্য না পেলেও প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন আমি লিখিত বক্তব্যতে যা বলেছি বিশ্বব্যাংকের কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) প্রজেক্টে আমি কোন ভাবেই জড়িত ছিলাম না কাছেই ঐ স্বাক্ষর-সীল কোনটায় আমার না । আমার স্বাক্ষর-সীল জালিয়াতি করা হয়েছে । আমি দুদক কর্মকর্তার কাছেও একই কথা বলেছি অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন আমার স্বাক্ষর-সীল-পদবী জালিয়াতি করেছেন। অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিন দুদকের কাছে এক মাসের সময় চাইলে-দুদক ময়েজ উদ্দিনকে এক মাসের সময় দিয়েছে। সময় দেওয়ার বিষয়টি দুদক সুত্র নিশ্চিত করেছে। এক মাসের জায়গায় এক বছর পার হলেও দুদকের তদন্তের কোন অগ্রগতি হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) এর চার কোটি টাকা বরাদ্দ পায় হযরত শাহ্আলী মহিলা কলেজ। এই প্রোজেক্টের এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ্য টাকা উত্তলোন করতে ময়েজ উদ্দিন ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল, মোঃ মিজানুর রহমানের সিল-স্বাক্ষর-পদবী জালিয়াতি করে। অথচ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সি ই ডি পি প্রজেক্টের সাথে কোন ভাবেই যুক্ত ছিলেন না। এবং তিনি জানতেনও না নাম-স্বাক্ষর-সিল-পদবী জালিয়াতি করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের কাছ থেকে জেনে তিনি অবাক হন। ঘটনা যখন জানাজানি হয় তখন কলেজের গভনিং বডির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসাইন,তিনি অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের নানা দূর্নীতি অপকর্মের সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে গভনিং বডির মিটিং এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে ছুটিতে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছিলেন কলেজ পরিচালনার স্বার্থে নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব দিয়েছিলেন মোঃ ফকরুল ইসলামকে। সিইডিপি প্রজেক্টে যুক্ত ও ড.এম এ মুকিম সদস্য আইজিডি ম্যানেজমেন্ট টিম ও সহকারী অধ্যাপক ইসলাম শিক্ষা হযরত শাহ্ আলী মহিলা কলেজ।
মোঃ কছিম উদ্দিন,ডিপুটি আইডিজিএম,আইডিজি ম্যানেজমেন্ট টিম ও সহকারী অধ্যাপক,হযরত শাহ্ আলী মহিলা কলেজ এবং এম এম শফিকুল ইসলাম,সদস্য আইডিজি ম্যানেজমেন্ট টিম ও সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা,হযরত শাহ্ আলী মহিলা কলেজ। এই তিনজন লিখিত জানান তারা কেউ প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে দেখেননি। এছারাও তিনজনই সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহ অনেক শিক্ষক এবং এই প্রতিবেদকের সামনে স্বীকার করেন তারা কখনো প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে দেখেননি।
পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ ফকরুল ইসলামের কাছে প্রকৌশলী মিজানুর রহমান তার স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে লিখিত ভাবে জানান ও জালিয়াতির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এবং লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন সিইডিপি প্রজেক্টের টাকা উত্তলোনে ব্যাবহৃত স্বাক্ষর তার নই-মর্মে পত্রে নিজের প্রতি স্বাক্ষর প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য থাকায় মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সহকারী অধ্যাপক-কে মামলা পরিচালনা করার ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন দেন। সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন মামলা করতে গেলে কোর্ট দুদকে আভিযোগ করতে বলেন।
শাহাদাৎ হোসেনের অভিযোগের পেক্ষিতে বর্তমানে প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি সহ অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের অনিয়ম-অপকর্ম-দূর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করছেন দুদক এর সহকারী পরিচালক(অনু ও তদন্ত) আশিকুর রহমান । ইন্জিনিয়ার আনিসুর রহমান,অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের বিশ্বব্যাংকের কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) সহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত তাকে জিঞ্জাসাবাদ করলে আরো অজানা অনেক তথ্য বেড়িয়ে আসবে ।
বিশ্বব্যাংকের কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে । স্বাক্ষর জালিয়াতি ধরা পরার পর পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখিত ভাবে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ করা হয় কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি । শুধু প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয় না । বিগত দুই বছরের বেশী সময় অসংখ বার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনের অনিয়ম-অপকর্ম-দূর্নীতি,প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্বাক্ষর জালিয়াতি,সাবেক অধ্যক্ষ শিরিন আক্তারের স্বাক্ষর জালিয়াতি”র তদন্তের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে একাধিক আবেদন করা হলেও কোন অদৃশ্য কারনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আজ পযন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেন নাই ।
এদিকে এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ময়েজ উদ্দিনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ গভর্নিং বডি। হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯’-এর সর্বশেষ (অক্টোবর ২০২৩) সংশোধিত বিধির ১৭ ধারা ক(২), ক(৩), ক(৬), ক(৭), ক(৯) অনুযায়ী পেশাগত অসদাচরণ ও নৈতিক স্খলনের দায়ে আপনাকে (ময়েজ উদ্দিন) চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সেইসঙ্গে তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করতে অভিযোগগুলো অধিকতর তদন্তের জন্য গভর্নিং বডি তদন্ত কমিটি করেছে বলেও ওই চিঠিতে জানানো হয়।