বর্তমান খবর,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জমি খারিজ করতে যান ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। কাগজপত্র দেখে তহসিলদার জানান ১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে। শেষে দফারফা হয় ১৬ হাজার টাকায়। এই টাকা নিয়ে ১১৮০ টাকা গ্রহণের সাতটি রশিদ দেন তহসিলদার। এতে অনিয়ম বুঝতে পেয়ে বুধবার সাদুল্লাপুরে তহশিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত মঙ্গলবার সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) সামছুল ইসলাম সাবিনের বিরুদ্ধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন সাইদুর রহমান।
এমন অনিয়মের অভিযোগ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) এই তহসিলদারের অনিয়মের তদন্ত করবেন নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আশাদুজ্জামান। এজন্য উভয় পক্ষের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে তহসিলদারের বিরুদ্ধে তদন্তের সংবাদে ভুক্তভোগী আরও অনেকেই সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে।
তহসিলদার সামছুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় বুধবার রাতে ধাপেরহাট বাসষ্টান্ড এলাকায় চড়াও হন ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানের উপর। এনিয়ে দু’জনের বাকবিতন্ডা শুরু হলে তাদের নিবৃত্ত করেণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি জালাল উদ্দিন মন্ডল হিরু ও স্থানীয় প্রেসক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম। এর সত্যতা নিশ্চিত করে তাঁরা দু’ জন বলেন, তহসিলদার সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান।
ধাপেরহাট বন্দরের স্বর্ণকার বিপ্লব কর্মকার বলেন,জমি খারিজের জন্য তাঁর কাছে ১২ হাজার টাকা দাবী করেন তহসিলদার সামছুল ইসলাম। পরে সেটি ১ হাজার ৫’শ টাকায় খাজনা পরিশোধ দেখান। ধাপেরহাট শাহ আজগার আলী ডিগ্রী কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বখতিয়ার রহমান জানান,তার জমি খারিজের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চান এই তহসিলদার। কিন্তু এই টাকা দিতে না পারায় তার জমি খারিজ হয়নি।
তহসিলদার সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তালেব মিয়া। তিনি বলেন এখানে প্রায় ৫ বছর ধরে কর্মরত এই তহসিলদার। একজন রাজনৈতিক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। জমির খারিজ করতে গেলেই দিতে হয় বাড়তি টাকা। এছাড়া ঢাকা~রংপুর মহাসড়কের দু’পাশের জমি অধিগ্রহণ কাজেও তিনি স্থানীয়দের কাছে সুবিধা নিয়ে সরকারের বাড়তি অর্থ ব্যয় করেছেন।
ধাপেরহাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন বলেন,সিন্ডিকেট বানিয়ে ২০২২ সালে স্থানীয় ‘পীরেরহাট মেলা’ কৌশলে ডাক হতে দেয়নি তহসিলদার সামছুল ইসলাম। পরে ওই মেলায় খাস আদায় করেন তিনি। কিন্তু ৫ লক্ষাধিক টাকা খাস আদায় হলেও, সরকারি কোষাগারে জমা দেন মাত্র ২০ হাজার ১’শ ৭০ টাকা। অথচ ২০২৩ সালেও এই মেলা ডাক হয়েছে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। নিজের আখের গোছাতে তিনি ২০২২ সালে সরকারি রাজস্ব বঞ্চিত করেছেন।
আর্থিক বিষয়ে অনৈতিক চাহিদার কারণে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া স্থানীয় অনেকে তহসিলদার সামছুল ইসলামের কাছে জমি খারিজ করতে আসেনা। এতে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার যারা খারিজ করতে আসেন তাদের বাড়তি টাকা গুণতে হয় বলে জানান ধাপেরহাট বাজারের সাবেক ইজারাদার সাইদুর রহমান। এমনকি তিনি নিজেও বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাই তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
এসব নিয়ে তহসিলদার সামছুল ইসলাম বলেন,এখন অনলাইনে সবকিছু করতে হয়। তাই সাইদুর রহমানকে সমুদয় টাকা জমার দাখিলা (রশিদ) দেওয়া হয়েছে। তদন্তের দিন কাগজপত্র দেখাবো। এনিয়ে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। সাইদুর রহমান খুশি হয়ে আমাকে ২ হাজার টাকা বকশিস দিয়েছে,এখন আমার বিরুদ্ধেই লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি তার বকশিসের টাকা ফেরত দেব।
উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান বলেন,অভিযুক্ত তহসিলদার সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার। ওইদিন সবার কাছ থেকেই শুনানি নেওয়া হবে।।