বর্তমান খবর,মেহেরপুর প্রতিনিধি: অপার সৌন্ধর্যের লীলা ভূমি মেহেরপুরে জীব বৈচিত্র এখন হুমকীর মুখে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দোয়েল কোয়েল ঘুঘু চড়াইসহ নাম না জানা সব পাখি। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়,বন বাদাড় ধ্বংস আর খাদ্য সংকটের কারণে জীব বৈচিত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জীব বৈচিত্র রক্ষায় আধুনিক বনায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সবুজ বনায়ন আর সৌন্ধর্যের মাঝে বসবাসে অভ্যস্ত দোয়েল কোয়েল ঘুঘু ময়না আর বুলবুলি। বছর বিশেক আগেও ঘন বনে বাস করা এসব পাখিদের দেখা মিলতো। কোকিলের কুহু তান আর কাটঠোকরার খটখট শব্দ সেই সাথে নাম জানা পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখর ছিল গ্রাম বাংলার পরিবেশ। শালিক ফিঙে আর ইস্টিকুটুমের ঝগড়া ছিল নিত্য সঙ্গী। বনে বেড়ে ওঠা গাছের ফলমুল খেয়ে এবং নিরাপদ বংশ বিস্তার করতো। এখন আর নেই সেই চিত্র। অবাধে বিচরণ করতে না পেরে এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বন বাদাড় উজাড় হওয়া ও নতুন নতুন বনায়ন সৃষ্টি না হওয়া ও কীটনাশকের অবাধ প্রয়োগের কারণে এসব জীব বৈচিত্র ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।
গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক রমজান আলী জানান, এদিকে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব ও নিরাপদ বনাঞ্চল না থাকায় বিলুপ্ত হচ্ছে বানর, হনুমান কাঠ বেড়ালী। ক্ষেত খামারে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে খাবারের সন্ধ্যানে আসা পশু পাখির অকাল মৃত্যু হচ্ছে। তাছাড়া প্রজনন ক্ষমতাও হারাচ্ছে। তাছাড়া পশু পাখি শিকারীরাও অবাধে শিকার করছে এসব পশু পাখি। পাখি শিকার বন্ধের দাবী জানান প্রকৃতি প্রেমীরা।
ভাটপাড়া ইকো পার্কে বেড়াতে আসা গাংনী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী আজমেরী ও রাফসান জানান, পাঠ্য পুস্তকে বিভিন্ন পাখির নাম শোনা যায়। অথচ সেগুলো আর চোখে দেখা যায় না। এসব পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করাসহ পাখি শিকার বন্ধের দাবী জানান শিক্ষার্থীরা।
পাখি প্রেমি কাথুলী গ্রামের ফিরোজ আলী জানান, জেলায় যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেখানে কৃত্রিমতায় ভরপুর। জীব বৈচিত্র রক্ষায় আধুনিক বনায়নের পরামর্শও দিয়েছেন পাখি প্রেমিরা। সেই সাথে ক্ষেত খামারে কীটনাশকের অপপ্রয়োগ বন্ধেরও দাবী জানান তারা।
পাখি বিষারদ মাজেদুল হক মানিক জানান, আগে সব জায়গায় ঘন জঙ্গল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফল গাছ ছিল। সেই সব গাছের ফল খেয়ে তারই শাখায় বাসা বেধে থাকতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। অবাধে বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় এবং দেশী প্রজাতির গাছ না লাগানোর কারণে পাখিরা খাবার সংকট ও বংশ বিস্তার করতে পারছে না। ফলে জীব বৈচিত্র বিলুপ্ত হচ্ছে। পাখি রক্ষায় দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণের পরামর্শ দিলেন এই পাখি বিশারদ।
গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা হামিম হায়দার জানান, জীব বৈচিত্র রক্ষায় নতুন নতুন বনভূমি সৃষ্টি ছাড়াও বাড়ি বাড়ি ফলজ গাছ রোপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও কোন বণ্য প্রাণি যাতে কেউ হত্যা বা শিকার না করতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বলে জানালেন উপজেলা বণ কর্মকর্তা।
বণ্যপ্রাণি তথা জীব বৈচিত্র রক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা।