বর্তমান খবর,মেহেরপুর প্রতিনিধি ঃ ভরা মৌসুমে মেহেরপুরের মাঠে মাঠে নানান জাতের সবজির সমারোহ থাকলেও বাজারে সবজির দাম চড়া। অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো সবজি কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। গেল একসপ্তাহ ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে স্বাভাবিক মূল্যে সবজি কিনলেও হাত বদল হয়ে ক্রেতা সাধারণের কাছে পৌছানো পর্যন্ত দাম বেড়ে যাচ্ছে প্রায় দেড়গুন। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্রেতা সাধারণ।
কৃষি অফিসের হিসেব মতে, চলতি রবি মৌসুমে গাংনী উপজেলায় ২১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে আলু ২৩০ হেক্টর, পেঁয়াজ ৯১০ হেক্টর, কপি ৫০০ হেক্টর বেগুন ৪৫০ হেক্টর ও টমেটো ৩২০ হেক্টর উল্লেখ্য। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনাতেও সবজি চাষ হচ্ছে।
গত শুক্রবার বামন্দী বাজার ও শনিবার গাংনী বাজার ঘরে দেখা গেছে সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়ামূল্যে। আলু ৫০ টাকা, বেগুন ৬০, ফুলকপি ৩০ লাউ প্রতিটি মাঝারি আকারের ৪০, গাজর ৩০ টমেটো ৫৫ , কাচা মরিচ ৮০ টাকা ও পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকা, ফুলকপি ২৫ টাকা, টমেটো ৪০/৪৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ টাকা, পেয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ৭৫ টাকায়। এ ছাড়াও অন্যান্য সবজিতে কেজি প্রতি বেড়েছে দুই তিন টাকা। যা ক্রেতা সাধারণ বিশেষ করে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
বাজার করতে আসা মালসাদহ গ্রামের বাপ্পি জানান, এখন সবজির ভরা মৌসুম অথচ সব ধরনের সবজির দাম চড়া। বিশেষ করে আলু লাউ পেয়াজ টমেটো আর কাচা মরিচের দাম সবাইকে হতাশ করেছে। সাধারন মানুষের মজুরী ও আয় বাড়েনি অথচ বাজারে সবজিসহ সব ধরনের পন্যের বাজার চড়া। নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে ব্যবসায়িরা ইচ্ছেমত দাম বাড়াচ্ছেন বলেও দাবী করেন তিনি।
ক্রেতা মইনুল ইসলাম জানান, গাজর, শিম, কাঁকরোল, টমেটো, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ সব সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে একটু কম ছিল। সবজি কিনতে গেলে অন্যান্য পন্য কেনা অসম্ভব। তিনি আরো জানান, সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। শ্রমিকদের মজুরী বাড়েনি অথচ সব কিছুরই দাম বেড়েছে। সংসারের অন্যান্য খরচের সাথে আবার দ্রব্য মূলের ঊর্ধ্বগতি। সব মিলিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে সবারই।
সবজি বিক্রেতা আলী হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে সবজির দাম ছিল কিছুটা চড়া। এখন আরো বেড়েছে। আড়তে দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়িরা চড়ামুল্যে কিনে আনছেন সেই সাখে যোগ হচ্ছে পরিবহন খরচ। ফলে ক্রেত সাধারণ পর্যন্ত পন্য পৌঁছুতে দাম পড়ে যাচ্ছে বেশি। একই কথা জানালেন বামন্দী বাজারের সবজি বিক্রেতা মনিরুল ও আলাউদ্দিন।
বামন্দীর সবজির আড়ৎদার আবু মোহাম্মদ জানান, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি যে দামে সবজি কেনা হয় তার সাথে পরিবহন খরচ লেবার খরচ যোগ করলে সবজির দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া কাঁচা মাল তাই অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও অনেক সময় দাম বেড়ে যায়। তিনি আরো জানান, কৃষকের সবজি ক্ষেত থেকে সবজি তুওেল এনে অন্ততঃ তিনবার হাত বদল হয়ে যায়। এতে দাম বেড়ে যেতে পারে।
সবজি গ্রামখ্যাত সাহারবাটির কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, অকে ব্যবসায়ি সরাসরি ক্ষেত থেকে সবজি কিনে নেয়। ক্ষেত থেকে ব্যবসায়িরা প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, বেগুন ৪০, ফুলকপি ২৫ টাকা, লাউ প্রতিটি মাঝারি আকারের ১৫ টাকা, গাজর ২০ টমেটো ৩৫, কাচা মরিচ ৬০ টাকা ও পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে কিনে নেয়। আর নানা অজুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, ইতোমধ্যে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সবজিসহ অন্যান্য দ্রব্যের ব্যাপারেও অভিযান চালানো।