ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড এর মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন এর প্রতিবেদন মনগড়া ভিত্তিহীন
বর্তমান খবর,মোঃ আবুল হাছান : ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড এর মামলার শুনানীতে কোম্পানি পক্ষের আইনজীবি এহসানুল হক সমাজী বলেন, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড এর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন এর পক্ষে আজ ২জন স্বাক্ষী বন বিভাগের কর্মকর্তা (বন বিভাগের কর্মমকরতা তোফিকুল বারী ও মোঃ রাকিবুল ইসলাম) বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন,সাক্ষ্য প্রদান কালে তারা প্রতিবেদন এবং পত্র সাক্ষ্য হিসেবে দাখিল করেছেন। তাদের প্রদত্ত জবানবন্দী শেষে আমরা তাদের জেরা করেছি এবং জেরায় আমরা সাক্ষীদেরকে প্রশ্ন করেছি এই প্রতিবেদনে যারা প্রস্তুতকারী এবং অন্যান্য যারা আছেন কবে কোন তারিখে বাগান পরিদর্শন করেছেন,কারা কারা গিয়েছিলেন এবং এই প্রতিবেদনে গর্ভে অর্থাৎ একটা প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য যে আবশ্যকীয় উপাদান গুলো দরকার সেগুলো এখানে অনুপস্থিত।
মঙ্গলবার(১৬ জানুয়ারী) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন এর উপস্থিতিতে মামলার শুনানীর কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ১০টা ৩০ ঘটিকায় শুরু হয়ে আদালতের শুনানির কার্যক্রম চলে ১১টা ৩০মিনিট পর্যন্ত। পরে বিরতি দিয়ে ১১টা ৫০মিনিটে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের মামলার শুনানীর কার্যক্রম চলে ১২ টা ৩৫মিনিট পর্যন্ত।মামলার শুনানী শেষে আগামী ২৩শে জানুয়ারী পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেন।
ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর ও তার সহকারী এডভোকেট মোরশেদ আলম শুভ।
প্রতিবারের ন্যায় আজও শুনানীর সময় মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গন ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডেরে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মত। সকল বিনিয়োগকারীদের একটিই প্রত্যাশা দ্রুত পূর্বের মামলার ন্যায় এই মামলাটিও দ্রুত নিস্পত্তি।
মামলার শুনানী শেষে ডেসটিনি পক্ষের আইনজীবি এহসানুল হক সমাজী, দৈনিক বর্তমান খবরকে বলেন,ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড এর মামলার শুনানীতে কোম্পানি পক্ষের আইনজীবি এহসানুল হক সমাজী বলেন,ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড এর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন এর পক্ষে আজ ২জন স্বাক্ষী বন বিভাগের কর্মকর্তা (বন বিভাগের কর্মমকরতা তোফিকুল বারী ও মোঃ রাকিবুল ইসলাম) বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন,সাক্ষ্য প্রদান কালে তারা প্রতিবেদন এবং পত্র সাক্ষ্য হিসেবে দাখিল করেছেন। তাদের প্রদত্ত জবানবন্দী শেষে আমরা তাদের জেরা করেছি এবং জেরায় আমরা সাক্ষীদেরকে প্রশ্ন করেছি এই প্রতিবেদনে যারা প্রস্তুতকারী এবং অন্যান্য যারা আছেন কবে কোন তারিখে বাগান পরিদর্শন করেছেন কারা কারা গিয়েছিলেন এবং এই প্রতিবেদনে গর্ভে অর্থাৎ একটা প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য যে আবশ্যকীয় উপাদান গুলো দরকার সেগুলো এখানে অনুপস্থিত।
এই প্রতিবেদনে কোন তারিখ উল্লেখ নাই কিংবা তারা সরেজমিনে তদন্ত করেছেন বা গিয়েছেন তারও ছকে উল্লেখ নাই। সুতারাং আমরা পরামর্শ দিয়েছি বলেছি প্রকৃত পক্ষে প্রতিবেদনটি হচ্ছে তাদের নিজস্ব মনগড়া ভিত্তিহীন এবং এর আইনগত লিগ্যাল কোন ভিত্তি তথ্য প্রমান অনুযায়ী নেই। প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র এই প্রতিবেদনে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের কথা বলেছেন। কমিটির সদস্য কারা হবেন কমিটির টামস অফ রেফারেন্স কি হবে তাদের বিষয়বস্তু কি থাকবে এই ধরনের কোন বিষয় বস্তু বা তথ্যাদি আজকে দাখিলকৃত ডকুমেন্টের মধ্যে কোথাও কোন বর্ণনা এর মধ্যে নেই।
কিছু বাগান ও কিছু গাছের কথা উল্লেখ করেছেন সেটা আংশিক হিসাব। আমাদের মূল বিষয়টা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তারা যদি সরেজমিনে গিয়ে থাকেন এই অল্প সময়ের মধ্যে তাহলে এই অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য প্রমানাধি সংগ্রহ করাটা আইনত এবং ন্যায়ত অসম্ভব এবং এটা নট পসিবল। যেহেতু এই প্রতিবেদনের মধ্যে সেই বর্ণনা গুলো নেই সুতরাং তাদের এই প্রতিবেদনটি আইনের দৃষ্টিতে লিগ্যাল কোন ভ্যালুস ক্রিয়েট করে না।
ডেসটিনিটি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের সমুদয় যে বাগান ছিল সেই বাগান গুলোর মধ্যে আংশিক বাগানের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এই প্রতিবেদনটি যে প্রক্রিয়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আমি বলব এই প্রস্তুত করাটা এর গর্ভে যে বর্ণনা করা আছে বা যে অভিযোগ তারা দিয়েছে। সে বর্ণনার সাথে অভিযোগটি সাংঘর্ষিক।
সুতারাং এই প্রতিবেদনে যা কিছু বলা থাকুক না কেন যা কিছু মন্তব্য থাকুক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অর্থাৎ কোন তারিখে তারা গেলেন দ্বিতীয়তঃ ওই বাগানের যে গাছগুলো তারা দেখেছেন পরিদর্শন করেছেন যে মন্তব্য দিয়েছেন সেই গুলোর ফটো পর্যন্ত তারা কালেক্ট করেন নাই।
যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়গুলো আদালতে দাখিল না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রতিবেদনটি আইনের দৃষ্টিতে দুর্বল স্বাক্ষ্য এবং ভিত্তিহীন। বিষয়টি হচ্ছে তারা এখানে সংখ্যা যায় কিছু উল্লেখ করুক না কেন উনাদের কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা বাগান গুলো পরিদর্শন করবেন এবং তারা সেই বাগানে যাবেন গাছের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিবেন। এই প্রতিবেদনের মধ্যে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী দাবি অনুযায়ী সমস্ত বক্তব্য ও তথ্য এ প্রতিবেদনের মধ্যে উল্লেখ নেই। সুতরাং এটি একটি অসম্পূর্ণ মনগড়া ভিত্তিহীন একটি প্রতিবেদন।
বিজ্ঞ আদালতকে সন্তুষ্ট করতে হবে এমন কোন ডকুমেন্টস তারা সাবমিট করতে পারেন নাই। এই কমিটির সদস্যরা তারা সরেজমিনে বাগান পরিদর্শন করেন নাই। দালিলীক সাক্ষ্য তারা যতগুলো উপস্থাপন করেছেন। আমরা এই দালিলীক সাক্ষী এখন পর্যন্ত পাই নাই। তারা যে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন এই প্রতিবেদনটি সাক্ষ্য আইনে বিধান অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশন এই ডেসটিনি ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে গাছ বা বাগান সংশ্লিষ্ট যে অভিযোগগুলো করেছেন সেই অভিযোগের সমর্থনে প্রতিবেদনসমূহ দাখিল করেছেন সেটা সাক্ষ্য হিসেবে যথেষ্ট নয়।
এই মামলার স্বাক্ষী কতজন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের কাছে এটা স্পষ্ট এখন পর্যন্ত হয় নাই যে তারা প্রকৃত পক্ষে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং গিয়েছেন ও গাছ গণনা করেছেন। এইটুকু বলতে পারি বিজ্ঞ বিচারক আদালত আজকেও মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আগামী ধার্য তারিখে অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার থেকে যেন ন্যূনতম চার থেকে পাঁচজন সাক্ষী যেন আদালতে উপস্থিত করেন মৌখিকভাবে এটা প্রসিকিউশনকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আমরাও বিজ্ঞ আদালতের কাছে বলেছি যেহেতু জনাব মোহাম্মদ রফিকুল আমিন এবং মোহাম্মদ হোসেন উনারা প্রায় বারোটি বছর কাস্টুরিতে আছেন। এই মামলা যেহেতু অনেকগুলো সাক্ষী রয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে এক বছরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য। যেহেতু মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের আসছে মার্চ মাসে যেহেতু ১২ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সুতরাং আমি বিজ্ঞ আদালতের কাছে নিবেদন করেছি।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষ যে সমস্ত সাক্ষীর মাধ্যমে তাদের আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হবে এই মর্মে বিশ্বাস করেন তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে এনে তাদের আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করা উচিত। চার্জশীটের সমস্ত সাক্ষী কে আনায়ন করতে লারনেট পাবলিক প্রসিকিউটর বাধ্য নয়। আজ পর্যন্ত যতগুলো তথ্য প্রমাণাদি এসেছে ওরাল এবং ডকুমেন্টারি তাতে করে আমি বলব এই আসামিদের বিরুদ্ধে সেকশান ৪ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে যেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সেই অভিযোগের সমর্থনে মোখিক বা দালিলিক স্বাক্ষ্য আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন বিজ্ঞ আদালত বলেছেন এখন থেকে প্রতি মঙ্গলবার তারিখ নির্ধারিত করা হল। যেহেতু মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন মামলা টি এক বছরের মধ্যে নিস্পত্তি করার জন্য বিজ্ঞ আদালতও সেই বিষয়টি অনুধাবন করে মহামান্য উচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একান্ত ভাবে এই মামলাটি বিধিবদ্ধ সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য যে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। সত্যি এটা একটা প্রসংশার যোগ্য। এইভাবে যদি মামলার গতি চলতে থাকে তাহলে আমরা বিশ্বাস করি মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এর নির্দেশনা অনুযায়ী বিধিবদ্ধ সময়ের মধ্যে এই মামলাটি নিষ্পত্তি হতে সহায় হবে।
আজ শুনানীতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন,পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন,পরিচালক ফারাহ দিবা।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়।
এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই টাকার মধ্যে এলসি (ঋণপত্র) হিসেবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা ও সরাসরি পাচার করা হয় ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট মোহাম্মদ রফিকুল আমীনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।
রাজধানীর কলাবাগান থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই মামলায় মোট চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এর এমডি মোহাম্মদ রফিকুল আমিনসহ ১২ জনের নাম দুটি মামলাতেই রয়েছে।
আসামিদের মধ্যে আগে থেকেই কারাগারে আছেন মোহাম্মদ হোসেন ও মোহাম্মদ রফিকুল আমিন,ফারাহ দিবাহ। এই মামলায় জামিনে আছেন ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাবেক সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল হারুন-অর রশিদ।