বর্তমান খবর,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে নাম না জানা অসংখ্য অতিথি পাখি শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে। পাখি প্রকৃতির সৌন্দর্য ও পরিবেশের উপকারী বন্ধু। কিন্তু পাখি লোভী শিকারিদের হাতে সেই নিরীহ অতিথি পাখি শিকারে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে অনেক কমে গেছে হাওরে পাখিদের বিচরণ।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরের জুড়ীর অংশে নাগুয়া ও চাতলার বিলে বিষটোপ-সহ পাশাপাশি প্রযুক্তির ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে তারা। তাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে হাকালুকি হাওর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর সুদূর হিমালয়,সাইবেরিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও শীত প্রধান বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখি আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে- বালিহাঁস,ভুতিহাঁস,কালিম,সাদা বক,কানি বক,পানকৌড়ি,গুটি ঈগল,কাস্তেচরা,কুড়া ঈগল,সরালি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে। আর এই সুযোগে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে নিরীহ অতিথি পাখি শিকার করছে পাখি লোভী অসাধু শিকারিরা।
হাকালুকি হাওরের আশপাশ থেকে জানা যায়, হাকালুকি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সিলেটের পাঁচটি উপজেলার ১৮১ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এখানে ছোট-বড় ২৭৩ বিল, ১০ নদী ও অসংখ্য খাল রয়েছে। এই জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখি শিকার সরকারের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি একে ১৯৯৯ সালে পরিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
এদিকে গত সপ্তাহে হাকালুকি হাওরের জুড়ীর অংশে নাগুয়া ও চাতলার বিলে পাখি দেখতে ও ছবি তোলার জন্য যান, মোঃ রিজওয়ানুল করিম, সৈয়দ আব্দুল, শাহানুল করিম চপল ও সুলতান আহমদ নামে ৪ জন আলোকচিত্রী। তারা হাকালুকির নাগুয়া বিলে ৩২টি পাখি মৃত পড়ে থাকতে দেখেন।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এ সময় মৃত পাখিগুলো মাটিচাপা দেন তারা। এ ঘটনা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দেওয়ার পরই মুহূর্তে আলোড়ন তৈরি হয় প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে।
স্থানীয় হাওরপাড়ে বসবাসকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, হাকালুকি হাওরে অসাধু শিকারিরা বিষটোপ আর প্রযুক্তির ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতে হাওরে অতিথি পাখি আসার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারিরা তৎপর হয়ে উঠেন।
তারা আরও বলেন, শিকারিরা দলবেঁধে বিষটোপ ও জাল দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করে। তারা সেসব পাখি গোপনে চড়া দামে বিক্রি করে। প্রতিজোড়া পাখি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গলের সম্মানিত সিনিয়র সহসভাপতি ও দৈনিক জনসংগ্রাম পত্রিকা’র সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে। কোনো ব্যক্তি পরিযায়ী পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ বা দখলে রাখলে অথবা বেচাকেনা করলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে বলে তিনি জানান।
বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, পাখি শিকারিরা সব সময় তৎপর থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে অন্ধকারে এমন দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অবাধে চলছে পাখি শিকার। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগ-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কোনভাবেই থামছে না পাখি শিকার।
এ বিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার বলেন, এ এলাকায় শিকারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও পাখি শিকার বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।