বর্তমান খবর,মেহেরপুর প্রতিনিধি : কখনও হাসি কখনও কান্না। আবার কখনও বই পড়ছেন আর কি যেন ভাবছেন এক কালের মেধাবী শিক্ষার্থী আলমাস হোসেন। মাঝে মাঝে হারিয়ে যায় সে। বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন তাকে শিকলবন্দী করে রেখেছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পাবার পর থেকেই নাকি আলমাস মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে বলে দাবী তার পরিবারের। ১৩ বছর ধরে চলছে চিকিৎসা। কোন পরিবর্তন না হওয়ায় আলমাস এখন ওই পরিবারের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে সমাজসেবা অফিসার বলছে সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে সুযোগ-সুবিধা। আলমাস মেহেরপুরের গাংনীর করমদী গ্রামের আলাউদ্দীনের ছেলে ও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।
আলমাসের পিতা আলাউদ্দীন জানান, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করে। ২০১০ সালে নবম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ায় সময় শিক্ষকদের খাতা দেখার ভুলে সে দ্বিতীয় হয়। পরে খাতা চ্যালেঞ্জ করে ২০ নম্বর বেশি পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে আলমাস। শিক্ষকের এই ভুল মেনে নিতে পারেনি আলমাস। বাড়িতে এসে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো, প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া তেমন কারো সাথে কথা বলত না।
পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪:৭০ মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়। একাদশ শ্রেণীতে গ্রামের কলেজে ভর্তি হলেও শিক্ষকের ভুল তার মন থেকে কখনোই মুছে যায়নি। শুধু পরিবারকে বলতেন শিক্ষকরা ভুল করে তাই আর পড়ালেখা করবে না। এই চিন্তা চেতনা থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে আলমাস।
আলমাসের মা আছিয়া খাতুন জানান, শিক্ষকের ভুলে আলমাস দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পর তন্ময় নামের যে ছেলেটি প্রথম হয় তার বাবা বিদ্যালয়ে সবাইকে মিষ্টিমুখ করান। সেই থেকে আরো ভেঙ্গে পড়ে আলমাস। পরে আলমাসকে প্রথম স্থান দিলেও তার মন থেকে অপমান আর গøানি মুছে যায়নি।
সন্তানকে উন্নত চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়েছে আলমাসের পরিবারকে, বর্তমানে তারা অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। সময় মত ঔষধ না খেলে পাগলামি করেন বেশি। খেয়ে না খেয়ে হলেও সন্তানের ঔষধের ব্যবস্থা করতে হয় তার পিতাকে। কুষ্টিয়া ও রাজশাহীতে মানসিক রোগীদের কাছে চিকিৎসা করলেও তার উন্নতি হয়নি। সময় গরমের সাথে সাথে তার মানসিক অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে।
আলমাসের প্রতিবেশি আশরাফুল ইসলাম জানান, অনেক চিকিৎসা করানো হয়েছে আলমাসকে। কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা থেকে একটি টীম তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু তিনমাস পর আলমাসকে ফেরত দেয়। এই পরিবারটির এমন কোন আর্থিক সঙ্গতি নেই যা দিয়ে তার চিকিৎসা করাতে পারে। এখন আলমাস নিজেই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা পরিবারের। এলাকার বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন পরিবার ও প্রতিবেশিরা।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, ইতোপূর্বে আলমাসকে ঢাকার একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রের লোকজন এসে নিয়ে যান। পরে তারা ফেরত দেন আলমাসকে। সমাজ সেবা থেকে সরকারের যে সকল সুবিধা গুলো রয়েছে আলমাস ও তার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে বলে জানান এই সমাজসেবা কর্মকর্তা।