দিনাজপুর বীরগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫
বীরগঞ্জ উপজেলার সাবেক ইউএনও ফজলে এলাহী

বর্তমান খবর,বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে বীরগঞ্জ উপজেলার সাবেক ইউএনও ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় উপজেলার সকল আশ্রয়ণবাসীর পক্ষে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন বীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম মিলন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রথম ধাপে সারাদেশে ১০৪৮ ঘর পুনরায় নির্মাণের মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলা বরাদ্দ পায় ৮৯৮টি ঘর। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২৮ কোটি টাকা ও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় ছিল গত জুন’২০২৪ পর্যন্ত। প্রতি ঘরের দুটি শয়নকক্ষ,একটি রান্নাঘর,একটি টয়লেট এবং একটি বারান্দা নির্মাণ করার কথা থাকলেও টয়লেট সহ অনেক কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে।

এছাড়া ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে খুব নিম্নমানের ইট,কম পরিমাণের সিমেন্ট সহ সকল উপকরণ। যার ফলে দেয়ালের প্লাস্টার উঠে যেতে শুরু করেছে। ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা,নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কাগজে কলমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন দেখিয়ে বরাদ্দের সমুদয় টাকা উত্তোলন করেন কুড়িগ্রাম চর রাজিবপুরে সম্প্রতি বদলি হওয়া ইউএনও ফজলে এলাহী।

একক ক্ষমতার বলে তিনি টেন্ডার ছাড়াই আশ্রয়ণের পুরাতন ঘরের টিন,কাঠ,পিলার বিক্রি করে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নীতিমালা অনুযায়ী টাক্সফোর্স কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটি থাকলেও,উপজেলায় কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি),উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলী সহ অন্য সদস্যদেরকে কোন দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে নিজেই যাবতীয় মালামাল ক্রয়সহ সার্বিক দেখ ভালের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ভোগডোমায় পুনর্বাসিত জামাল উদ্দিন ও চানমিয়া জানান, ২৮০ টি পরিবারের টিনসেট ঘর ভেঙ্গে ২৪৩ টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। দলিল থাকা সত্ত্বেও ৩৭ পরিবারকে ঘর না দিয়ে অন্যায় ভাবে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

একই আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া আনসার আলী,সমিরন,আহম্মদ আলী,শাহজাহান,নুরবানু আরো অনেকে জানান,একেবারেই ঘর নিম্নমানের কাজ হয়েছে। টয়লেট স্থাপনের জন্য রিং-স্লাব এনেছে কিন্তু স্থাপন করে নাই। ঘরের ভিটার মাটি আমরা নিজেরাই ভরাট করেছি,কোন টিউবওয়েলও দেয় নাই।

তারা আরো জানান,আমাদের পুরাতন ঘরের টিন,কাঠ,পিলার চেয়ারম্যানের দ্বারা ইউএনও নিয়ে গেছে। উপজেলার সব আশ্রয়ণগুলো সরজমিনে গিয়ে একই ধরণের চিত্র ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার অভিজ্ঞ একাধিক নির্মাণ ঠিকাদার ও সচেতন মহল জানান,আশ্রয়ণের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। নির্মাণকৃত প্রতিটি ঘরের সর্বোচ্চ খরচ ২ লাখ টাকা হতে পারে,তার বেশি নয়। সেই হিসাবে দেখা যায় ইউএনও ফজলে এলাহী ঘর নির্মাণে প্রায় ১০ কোটি এবং পুরাতন টিন,কাঠ,পিলার বিক্রির ১ কোটি সহ ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান হাবিবের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি কিছুই জানিনা,একই কথা বলেছেন এসিল্যান্ড দীংপঙ্কর বর্মন,সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ছানাউল্লাহ ও উপজেলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জিবরীল আহমাদ।

এ ব্যপারে ইউএনও ফজলে এলাহীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।