তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হবে ৫ এপ্রিল

প্রকাশিত: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২৪

বর্তমান খবর,নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাবে পরিণত করার লক্ষ্যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের। সেই স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে দেশ। শিগগিরই শতভাগ কাজ শেষ হচ্ছে এ টার্মিনালের। এরপরই টার্মিনালটি বুঝে নেবে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচক জানায়, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী ৫ এপ্রিল থার্ড টার্মিনালের সব কাজ শেষ করবে। ৬ এপ্রিল বেবিচক বুঝে নেবে। এরপর থেকে নানা ট্রায়াল শেষে অপারেশন শুরু করবে এই টার্মিনাল।

বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়,অপারেশন প্রথমদিন থেকেই নতুন টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের প্রয়োজন হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির কথা বলা হলেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। তাই শুরুতে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ দেওয়ার কথা ভাবছে বেবিচক। এমন ইঙ্গিত পেয়ে ইতোমধ্যে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান।

তবে বিমান বলছে, স্থায়ীভাবে তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে প্রস্তুত তারা। চূড়ান্তভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার আগে তারা নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে দেখাবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বর্তমান খবরকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হতে হতে জুলাই-আগস্ট হতে পারে। এই চুক্তি হয়ে গেলে তারা টেকওভার করবে। তবে আগস্টে টেকওভার করে অক্টোবর মাসে পুরোপুরি অপারেশনে আনা অসম্ভব। তাই সিভিল এভিইয়েশন বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে দেবে। বিমানকে আপাতত গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ দিয়ে আমরা শুরু করব।

তিনি বলেন, পুরোনো টার্মিনাল থেকে নতুন টার্মিনালে যেতে একটা প্রক্রিয়া আছে। এই প্রক্রিয়াটা আমরা চালু করেছি। যন্ত্রপাতিগুলোর টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল ও ক্যালিব্রেশনের কাজ চলছে। ছোটখাটো কিছু ইন্টেরিয়রের কাজ বাকি আছে সেগুলো চলছে। আশা করছি চুক্তি অনুযায়ী ৬ এপ্রিল কাজ বুঝে নেব।

এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগে থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিংয়ের কাজ পাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছিল। তবে নানা অব্যবস্থাপনা ও অভিযোগের কারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জাপানি প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ দিতে চাচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের পারফর্মেন্স নির্ভর করে এয়ারপোর্ট ফ্যাসিলিটিসের ওপর। যথেষ্ট বোর্ডিং ব্রিজ, বে, পার্কিং এরিয়া, লাগেজ বেল্ট থাকলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ভালো হবে। তৃতীয় টার্মিনালে এসব ফ্যাসিলিটি রয়েছে। পাশাপাশি তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য বিমানের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও জনবল রয়েছে, জনবলের ট্রেনিংও করানো হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ স্থায়ীভাবে কে করবে তা এখনো নির্ধারিত নয়। তবে বিমান বাংলাদেশ যেহেতু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে সেই অর্থে তারাই শুরু থেকে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ করবে। বিমানের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা আশা করছি, বিমানের পার্ফরমেন্স বিবেচনায় পিপিপি কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে বিমানও চূড়ান্তভাবে এই দায়িত্ব পেতে পারে।

এদিকে ২০২৩ সালের শেষ থেকে ইতোমধ্যেই তৃতীয় টার্মিনালের সুবিধা নিতে শুরু করেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অবতরণের পর দুটি হাই স্পিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করে উড়োজাহাজ গুলো দ্রুতই রানওয়ে থেকে বের হয়ে যেতে পারছে।

এর আগে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর আংশিকভাবে উদ্বোধন করা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল (থার্ড টার্মিনাল)। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর কাজ শুরু হওয়া টার্মিনালটি ছিল সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অত্যাধুনিক এ টার্মিনালের উদ্বোধনের ফলে পৃথিবীতে ঢাকা বিমানবন্দরের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বেড়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।

বিমানবন্দরটি এত দিন বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিলেও নতুন এ টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এখানে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। ১৬টি ব্যাগেজ বেল্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে নতুন এ টার্মিনালে। ২০২৪ সালের অক্টোবরের দিকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে এটি।

বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের স্থাপনা থেকে চোখ ফেরানো দায় বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন করা হয়েছে।

মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এ বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে থাকবে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এস্কেলেটর। যারা বিমানবন্দরের দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক ও বেশি যাত্রী প্রবাহের বিমানবন্দরগুলোতে এ ধরনের এস্কেলেটর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের শান্ত ও মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেয়।

নতুন এ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগের জন্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো অত্যাধুনিক তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া করা হয়েছে। এগুলো হলো— রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং ওড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ। যাত্রীদের স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের ১৬টি রেগুলার ব্যাগেজ বেল্ট থাকবে টার্মিনালটিতে। অতিরিক্ত ওজনের (ওড সাইজ) ব্যাগেজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আরও চারটি পৃথক বেল্ট।

টার্মিনালের প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে দৃষ্টিনন্দন বেবি কেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভেতর মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, ডায়াপার পরিবর্তনের জায়গা এবং একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম করা হয়েছে। এ ছাড়া, বাচ্চাদের স্লিপার-দোলনাসহ একটি চিলড্রেন প্লে এরিয়াও রাখা হয়েছে এখানে। ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে হেলথ ইন্সপেকশন রুম, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, করোনাসহ নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া।

অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন)। এগুলোতে পাসপোর্ট ও টিকিটের তথ্য প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে বোর্ডিং পাস ও সিট নম্বর। এরপর নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী তার লাগেজ রাখবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজগুলো উড়োজাহাজের নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। তবে, নির্ধারিত ৩০ কেজির বেশি ওজনের ব্যাগেজ নিয়ে এখানে চেক-ইন করা যাবে না। যাত্রীদের জন্য আরও ১০০টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে এ টার্মিনালে।

অবসরে যাত্রীদের সময় কাটানোর জন্য নতুন এ টার্মিনালে শিগগিরই করা হচ্ছে মুভি লাউঞ্জ, এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ। এ দুই লাউঞ্জ বাদে অন্যান্য স্থাপনাগুলো ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে। তবে, পরীক্ষামূলকভাবে এখনো এগুলো চালানো হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যেই এগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে।