রাজীব প্রধান, শ্রীপুর-গাজীপুরঃ মহান আল্লাহপাক মানুষকে তিন অবস্থায় রাখেন—মাটির ওপরে, মাটির নিচে ও মায়ের পেটে। আসলে জীবন নদীর খেয়ায় আমরা প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আবাহন করি।
আশ্চর্যজনক বিষয় হলো আমরা বেহেশতে যেতে চাই; কিন্তু মরতে চাই না। মহান আল্লাহর নির্দেশ—‘ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন…’ অর্থাৎ ‘প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মোরো না।’
মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত মানুষদের সর্বশেষ করণীয় থাকে, দ্রুত মৃতের জানাজা ও দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা। কবর খনন যে কারো জীবনের লক্ষ্য হতে পারে, তার প্রমাণ মহান আল্লাহ মানবজাতির কল্যাণে কাকে কী কাজে নিয়োজিত করবেন, তা তো তিনিই নির্ধারণ করেছেন।
কত বিচিত্র পেশাই না মানুষ বেছে নেয় জীবনের বাস্তবতায়। ঢাকার অদূরবর্তী জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলাধীন মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী মোঃ জুয়েল রানা। প্রায় ২০০ এর অধিক মানুষের কবর খনন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জুয়েল।
তিনি যখন কারো মৃত্যুর সংবাদ পায় , তখন নিজের ব্যবসা বন্ধ রেখে, কবর খুড়তে যান। অনেকে হয়তো ভাবতে পারে কবর খোঁড়াটা তার পেষা। আসলে তা নয়, তিনি নিজ উদ্যোগে এ সমন্ত সামাজিক কাজ যেমন কবর খোড়া বা টাকার জন্য গরিবের বিয়ে হয়না এসব কিছুই জুয়েল নিজ উদ্যোগে বিনা স্বার্থে কাজ করে থাকে।
কবর খনন নিয়ে জুয়েল বলেন, কবরের কাজ করলে আমার ভালো লাগে। আর তাছাড়া আমি যদি মারা যাই তাহলে আমাকেও তো কবরে রাখা হবে। শুধু দুনিয়ার কথা চিন্তা করে চললেতো আর হবেনা। কারন দুনিয়াতে আমরা সারা জীবন থাকতে আসিনাই। যদি চলে যেতেই হয় তাহলে দু দিনের দুনিয়ায় এতো ছোটাছুটি করে কি লাভ। তাই আমি এটা আমার দায়িত্ব হিসেবে বেছে নিয়েছি।
তাছাড়া এতে আমার ছোয়াব ও হবে বটে। তিনি কবর খানায় চাকরি করেন এমন নয়। কবর খনন তাঁর পেশা বা জীবিকার বাহন নয়, বরং আগ্রহ মাএ। শখের বশে নয়, বরং এক অজানা আত্মিক তাড়নায় তিনি কবর খননের কাজ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর।
তাঁর ভিজিটিং কার্ড আছে, মোবাইল ফোন নম্বর আছে, কিছু জরুরি নির্দেশনাও আছে কার্ডে। ফোন পেলেই গ্রাম-গ্রামান্তরের অজানা মেঠোপথে ছুটে চলেন কোদাল, শাবল ও টুকরি হাতে। এরই মাঝে জুয়েল রানা একটি তরুন টিম তৈরি করেছেন। যারা সেচ্ছাসেবী কর্মী। বিনা সার্থে যারা মৃত মানুষের কবর খুড়বে।এবং এ কাজে সাহায্য করবে। তাদের মধ্যে একজন সেচ্ছাসেবী তরুন মেধাবী ছেলে হিমেল সরকারের সাথে কথা বলে যানা যায় যে, কবর খনন একটি ধর্মীয় কাজ,। যেহেতু আমরা মুসলমান আর তাই একাজ আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর আমরা তরুণ সমাজ যারা আছি তারা জুয়েল ভাই কে অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করি।
জুয়েল রানার আগেও এক জনের দেখা মেলেছিলো কবর খনন কারীহিসেবে। সে নিজ উদ্যোগে বিনা স্বার্থে কাজ করতো। শ্রীপুরের ধলাদিয়ার মো. ফজলুল হক। কবর খনন করে সুনাম করেছেন। কোনো মুসলমান মারা গেলে তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা ফরজে কিফায়া এবং এরই অংশ কবর খনন।
কবর খনন করা হয় দুই পদ্ধতিতে—ক) বগলি কবর, খ) সিন্দুক কবর। সাধারণত আমাদের দেশে সিন্দুক কবরের প্রচলন বেশি। নিঃসন্দেহ কবর খনন একটি সওয়াবের কাজ।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘সদাচার ও ধর্মভীরুতায় তোমরা পরস্পর প্রতিযোগিতা করো। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২) শ্রীপুরের ফজলুল হকের বিনা মূল্যে কবর খননের সুদীর্ঘ পথচলা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অনুসরণীয়।
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাল, অতঃপর তার গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে ৪০ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তাকে ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দেবেন জান্নাতের একটি বাড়ির সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোশাক পরাবেন।’ (বায়হাকি, তাবারানি, তারগিব)।
সাধারণত মুমূর্ষু রোগীকে ডাক্তারও বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেন না, উকিল ধরলে লাগে ফি, সন্তানকে পড়াতে টাকা লাগে। তাই আমরা তরুনরা উদ্যোগ নিয়েছি আমরা কবর খননের কাজ করে যাব বিনা মুল্যে শুধু কবর আর দাফন কাফন এর কাজটা আমরা চাই যেন কোন টাকা না লাগে সে যে কেউ হোক। হোক সে ধনি বা গরিব। এই প্রত্যাশায় আল্লাহ প্রতি ভরসা রেখে আমরা সকলে কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply