ফিরোজ আহম্মেদ,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে অবস্থিত সুদৃশ্য গোড়ার মসজিদটি আজো খান-ই-জাহানের স্মৃতি বহন করে চলছে।
এককালের জনবহুল ও প্রসিদ্ধ বারোবাজরের অসংখ্য প্রাচীন ধ্বংসাবশের মধ্যে যে কয়েকটি মসজিদ এখনো দৃশ্যমান রয়েছে তার মধ্যে গোড়ার মসজিদ অন্যতম। অনেকে মনে করেন গোড়ায় নামক দরবেশের মাজার।
বারোবাজার বাসষ্ট্যান্ড হতে পশ্চিম দিকে বাজার পেরিয়ে কয়েকটি দোকান ও বসতবাড়ীর পরই রাস্তার দক্ষিণে এই গোড়ার মসজিদটি জীর্ন অবস্থায় এখনো টিকে আছে। প্রাচীন আমলের দিঘি ও ইটের ধংসস্তুপ দেধে সহজেই অনুমান করা যায় বারোবাজার নগরটি এককালে হিন্দু ও বৌদ্ধ নরপতিদের রাজধানী ছিল।
যে নগরীর দক্ষিণে অবস্থিত ভৈরব নদ এককালে ভয়ংকর ছিল। এই নদীকে কেন্দ্র করেই তৎকালে বারোবাজার হয়ে উঠেছিল পাক-ভারতের অন্যতম বানিজ্য কেন্দ্র। এই নদী পথে দেশ-বিদেশের সওদাগাররা পন্য সামগ্রী আনতো। এভাবেই যুগে যুগে রুপসী নগরী হিসাবে গড়ে ওঠে বারোবাজার।
মুসলমান আমলে বারোবাজর আরো শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।কথিত আছে মোহাম্মদ শাহ’র আমলে খান-ই-জাহান প্রথম বারোবাজর মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এসময় যুদ্ধে অসংক্য সৈন্য হতাহত হন। ১৮৮৩ সালে প্রত্তত্ব বিভাগ কর্র্তৃক খননের পরে দেখা গেছে বারোবাজার এলাকার ঘন জঙ্গলে পূর্ন টিবি গুলো খুড়ে উদ্ধার করা হয়েছে প্রাচীন কালের ইটের ভগ্নস্তুপ, নরকংকাল ও মসজিদ সহ অসংখ্য কীর্তি।
সংরক্ষনের অভাবে এসবের অনেকটাই ধংস হয়ে গেছে। এলাকার অনেক দালান ঘরে পুরোনো আমলের সে সব ইটের অস্বিত্ব রয়েছে। প্রত্নতত্ব বিভাগ কিছু মসজিদ সংস্কারের উদ্দ্যোগ নিয়েছে। পরিত্যাক্ত টিবি ও জঙ্গলকীর্ন জমির বেশির ভাগই এখন চাষাবাদেও জমিতে বা বসত বাড়ীতে পরিনত হয়েছে।
বর্গাকারে নির্মিত গোড়ার মসজিদের প্রত্যক বাহু বাইরের দিকে প্রায় ৩০ ফুট এবং ভিতরের দিকে ২০ ফুট লম্বা। দেওয়াগুলি ৫ ফুট প্রশস্ত। ৪ কোনে ৪ টি সুন্দও ৮ কোনা বিশিষ্ট মিনার আছে। পূর্ব দেয়ালে ৩ টি এবং উল্টর দেয়ালে ১ টি প্রবেশ পথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে আছে দরজা বরাবর ৩ টি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অন্যগুলোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। মেহরাবগুলিতে পোড়া মাটির ফলকে নানা ফুল ও লতাপাতার অলংকার ছিল। যার সৌন্দর্য্য আজো নষ্ট হয়নি।
মসজিদেও ভিতরের ৪ দেয়ালের কেন্দ্র স্থলেও দেয়াল ঘেষে ৪ টি পাথরের স্তম্ভ ও ৪ পাশের দেয়ালের উপর স্থাপিত মসজিদের একমাত্র গম্বুজ। যা দেখতে খুবই সুন্দর। মসজিদেও বাইরের দেয়াল সহ ৪ কোনের পোড়ামাটির সুন্দও চিত্র ফলক ছিল। যা জরাজীর্ন অবস্থায় থাকায় কিছুটা মেরামত করা হয়েছে।
মসজিদেও ৪ পাশের বেষ্টনী প্রাচীর ভেঙ্গে পড়েছে। অতিজীর্ন হলেও মনোরম এই মসজিদে এখোনো অসংখ্য মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। প্রতি শুক্রবার শিন্নি ও মানতের জন্য দুর দুরান্তের মানুষের ঢল নামে মসজিদের পূর্ব পাশের পুকুরটি। এটি গোড়ার পুকুর নামেই এর পরিচিতি।
Leave a Reply