রংপুরে ২৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য

প্রকাশিত: ৪:৫৫ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৫

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো:

রংপুর জেলার আট উপজেলার ১ হাজার ৪৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। এমন পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে দাপ্তরিক নানা কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানা যায়,রংপুরে প্রধান শিক্ষক পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদের সংখ্যা সর্বমোট ২৬৩টি। যার মধ্যে কাউনিয়া উপজেলায় ১১টি, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৩৬টি, গঙ্গাচড়ায় ৯টি, তারাগঞ্জে ৮টি, পীরগাছায় ৫৬টি, বদরগঞ্জে ৩৩টি, মিঠাপুকুরে ৮৫টি এবং রংপুর সদর উপজেলায় ২৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নীতিতে বলা হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য আসনের ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ হবে। বাকি ৬৫ শতাংশ শূন্য পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ধীরগতি। এ কারণে দুরবস্থায় পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। কিছু সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়ে সে দূরাবস্থা কাটানোর চেষ্টা করা হলেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়,গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়ার কাজ চলছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কেউ না কেউ প্রতিনিয়তই অবসরে যাচ্ছেন। অবসরের গতির তুলনায় পদোন্নতি ও সরকারি নিয়োগের গতি কম। এভাবে চললে কখনই শূন্য পদ পূরণ হবে না।

সাধারণত,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি যদি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকে তাতে লেখাপড়া ব্যাহত হয়। চারজন শিক্ষকের একজনকে চলতি দায়িত্ব বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হয়। তাকে প্রায় প্রতিদিন উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা,সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং নানা প্রশাসনিক কাজ করতে হয়।

আবার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অধিকাংশ মহিলা হওয়ায় তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বা অন্য ছুটি কাটাতে হয়। অনেকে প্রশিক্ষণে থাকেন। ফলে চারজনের দুজনকে বিদ্যালয় চালাতে হয়। সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলে তাদের নির্দেশ মানেন না অনেক শিক্ষক।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন,একজন প্রধান শিক্ষককে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমাকে ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এটা আমার জন্য খুব কষ্টের। ক্লাসের পাশাপাশি স্কুলের সার্বিক বিষয়ে সময় দেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদুল ইসলাম বলেন,আমাদের স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী,সে তুলনায় শিক্ষক সংকট। আগে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এখন না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। কিশামত বিষ্ণু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফজাল হোসেন বলেন, একটি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক হলেন প্রধান অভিভাবক। তার অনুপস্থিতিতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হয়। এতে করে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের চাহিদা কমে যায়।

প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন পদ শূন্য থাকার বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু, বদলি, অবসরজনিত কারণসহ নানা কারণে প্রধান শিক্ষককের এতগুলো পথ খালি হয়েছে। জেলার সম্ভাব্য শূন্য পদের প্রধান শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, দ্রæত শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা হবে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক, সচিব ও উপদেষ্টা অবগত করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।