বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: আমন ধানকাটা শেষ হলেও ধান মাড়াই আর ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে চরম ব্যস্ত সময় পার করছে রংপুর,গাইবান্ধা,নীলফমারী,লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম.ঠাকুরগাঁও,পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার কৃষক পরিবারের সদস্যরা। দিন-রাত ব্যস্ত যেন একটু বসে দম দেওয়ার সময়টুকু হাতে নেই তাদের। সবাই ব্যস্ত কেউ ধান মাড়াইয়ের কাজ করছে, কেউ সেই ধান পরিস্কার করে শুকিয়ে গোলায় তুলছে, আবার কেউ ধান সিদ্ধ করে সেই ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটালেও তাদের চোখে-মুখে নেই কোন হতাশার ছাপ। হতাশার ছাপ থাকবে বা কেন? এই ব্যস্ততা যে তাদের সুখের মূল। ফসল ভাল হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে আর সেই ফসল যদি ভালভাবে ঘরে তুলতে পারে. তবেই কৃষক সুখে থাকতে পারে। চলতি মৌসুমে রংপুরে আমন ধানের বা¤পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবার জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টনেরও বেশি আমন ধানের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
উদ্বৃত্ত চাল অন্য জেলার চালের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় না করে ব্যবসায়ীর কাছে চাল ক্রয় করার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। অথচ কম মূল্যে ধান ক্রয় করে ব্যবসায়ীরা চাল বানিয়ে সরকারি খাদ্য গুদামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লাভ করছে।
কৃষকদের অভিযোগ,তারা ধান বিক্রি করতে গেলে খাদ্য কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে অনীহা প্রকাশ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। খাদ্য বিভাগ ধান চাল সংগ্রহ অভিযানের নামে গল্প বানায়, কিন্তু প্রকৃত কৃষক আর বর্গা চাষিদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে না।
রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে রংপুরে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লক্ষ ৬৬ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ধান চাষ হয়েছে এক লক্ষ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে ছিল, বৃষ্টি হয়েছে প্রচুর। ফলে কৃষকদের জমিতে এবার খুব বেশি সেচ দিতে হয়নি। ফলে জমিতে বৃষ্টির পানি দিয়ে চারা রোপণ এবং অপেক্ষাকৃত কম সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় আমনের বা¤পার ফলন হয়েছে।
রংপুর জেলার মানুষের চালের চাহিদা হচ্ছে প্রায় আড়াই লক্ষ টন। সেখানে চাল উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৬ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন,চলতি মৌসুমে রংপুরে আমন ধানের ফলন অসম্ভব ভালো হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে যা অন্য জেলার চাহিদা মেটাবে।